আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে ঘোরতর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে ‘বিশ্বমোড়ল’দের যুদ্ধবিরতির আহ্বানে কোনো পক্ষই সাড়া দেয়নি। এবার আর্মেনিয়া অতীতের মতো সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এবারের যুদ্ধে তারা অনেক সেনা ও সমরাস্ত্র হারিয়ে পেছনে হটতে এবং যুদ্ধবিরতির জন্য বিশ্বশক্তির কাছে আবেদন জানাতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষই তা পুরোপুরি পালন না করে একে অপরকে দোষারোপ করে যুদ্ধ চালিয়েই যাচ্ছে।
আজারবাইজান দেশটির অবস্থান ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝখানে; ইউরোপের পূর্বাংশে ও এশিয়ার পশ্চিমাংশে। এই এলাকার দেশগুলোকে ককেশাস অঞ্চলের দেশ বলা হয়। আজারবাইজানের পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, উত্তরে রাশিয়া, উত্তর-পশ্চিমে জর্জিয়া, পশ্চিমে আর্মেনিয়া এবং উত্তর-পূর্বে ইরান। দেশটির আয়তন প্রায় ৮৬ হাজার ৬০০ বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা এক কোটি ১২ লাখ। অধিবাসীদের ৯৭ শতাংশ মুসলিম। সপ্তম শতাব্দীতে ওই এলাকা মুসলিমদের করায়ত্ত হয়। তখন থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এ দেশটি কখনো ইরানের মুসলিম শাসক, কখনো আরব মুসলিম শাসকদের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত ছিল। ওসমানি খেলাফত উত্থানের পর তুরস্কের অধীনে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী ফ্রান্স, রাশিয়া ও ব্রিটেনের যৌথ শক্তির কাছে তখনকার দিনের ‘একক পরাশক্তি’ ওসমানি খেলাফত পরাজিত হলে আজারবাইজানসহ মধ্যপ্রাচ্য দখল করে নেয় ব্রিটেন। ১৯১৮ সালে আজারবাইজান স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯২০ সালে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়াসহ পুরা এলাকা দখল করে নেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। দীর্ঘ ৭০ বছর পর ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আজারবাইজান দেশটি তেল, গ্যাস ও অন্যান্য মূল্যবান খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। তারা লোহা, তামা, সিসা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদিও রফতানি করে থাকে। সোভিয়েতের দখল থাকার সময় তারা আজারবাইজানের তেল দিয়ে নিজেদের পূর্বাঞ্চলের চাহিদা মেটাত। বর্তমানে আজারবাইজান তার নিজের চাহিদা পূরণ করে তেল রফতানি করে থাকে। তুরস্ক জ্বালানি চাহিদার এক বিরাট অংশ আজারবাইজান থেকে পূরণ করে। এ ছাড়া ইউরোপে রফতানি করার জন্য তুরস্কের মধ্য দিয়ে পাইপলাইন স্থাপন করছে। ইতোমধ্যেই একটি পাইপলাইন দিয়ে তুরস্কের সাইহান বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশে তেল সরবরাহ করে থাকে আজারবাইজান। আজারবাইজানে ধান, গম, ভুট্টা প্রভৃতি খাদ্যশস্য এবং আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ফলমূল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। জনগণ মোটামুটি সচ্ছলই বলতে হবে।
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যদিও আজারবাইজানের তেল দিয়ে তার অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখেছিল, কিন্তু আজারবাইজানকে উন্নত করার জন্য তেমন কিছুই করেনি, তারা বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে গরিব করেই রেখেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে এসব দেশের।
আর্মেনিয়াও একই সময় অর্থাৎ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এটি পাহাড়পর্বতঘেরা একটি সুন্দর দেশ। জনগণের বেশির ভাগই খ্রিষ্টান। দেশটি স্থলবেষ্টিত। আর্মেনিয়ার পশ্চিমে তুরস্ক, পূর্বে আজারবাইজান ও ইরান, উত্তরে জর্জিয়া, দক্ষিণে আজারবাইজানেরই অংশ নাখচিবান। মোট আয়তন প্রায় ২৯ হাজার ৭০০ বর্গমাইল, যা আজারবাইজানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। লোকসংখ্যা ৩০ লাখ। অর্থনৈতিক অবস্থা বিচারে তৃতীয় বিশ্বের একটি অনুন্নত দেশই বলা চলে আর্মেনিয়াকে। তাদের তেল-গ্যাসের মতো মূল্যবান কোনো খনিজ সম্পদ নেই। তবে সোভিয়েত আমল থেকে শিল্পায়নে আজারবাইজানের চেয়ে এগিয়ে আছে আর্মেনিয়া।
পাশাপাশি দু’টি দেশ, একটি এগিয়ে, আরেকটি পিছিয়ে কেন? যখন কোনো অমুসলিম দেশ একটি মুসলিম দেশ দখল করে নেয় তখন তারা দখল করা দেশটিকে কেবল শোষণই করে আর শোষণের সুবিধার্থে ওই দেশকে অনুন্নত এবং মুসলিমদেরকে আধুনিক লেখাপড়া ও জ্ঞানবিজ্ঞানে অশিক্ষিত করে রাখে। পতিত সোভিয়েতের সময় আজারবাইজানের বেলায় এ কাজটিই হয়েছে। সোভিয়েত শাসকরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আজারবাইজানের সম্পদ ঠিকই ভোগ করেছে, কিন্তু শিল্পায়ন করেছে খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনিয়ায়।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান স্বাধীন হওয়ার পর দেখা গেল, অস্ত্রশস্ত্রে আজারবাইজানের চেয়ে আর্মেনিয়া এগিয়ে আর আজারবাইজান সম্পদে, আয়তনে ও লোকসংখ্যায় অনেক বড় ও তেল গ্যাসসমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বে¡ও আর্মেনিয়ার চেয়ে দুর্বল। এর সুযোগ নিলো আর্মেনিয়া। তারা দুই দেশের মাঝখানে অবস্থিত নাগারনো-কারাবাখ নামে একটি এলাকা গায়ের জোরে দখল করে নিলো। অথচ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, ওই অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে আজারবাইজানেরই অংশ। তবে এর অধিবাসীদের বেশির ভাগ আর্মেনীয় জাতিগোষ্ঠীর এবং ধর্মে খ্রিষ্টান। আর্মেনিয়া স্বাধীন হওয়ার পর আর্মেনিয়ার সহযোগিতায় ওই এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে, যদিও কথিত এ স্বাধীনতাকে বিশ্বের কোনো দেশই স্বীকৃতি দেয়নি; এমনকি উসকানিদাতা আর্মেনিয়াও নয়।
এ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় এবং অস্ত্রবলে দুর্বল আজারবাইজান পরাজিত হয়। আর্মেনিয়া দখল করে নেয় চার হাজার বর্গমাইলের বেশি আয়তনের এলাকা নাগারনো-কারাবাখ, যা আজারবাইজানের মূল ভূখণ্ডের প্রায় ১৬ থেকে ২০ শতাংশ। গত ৩০ বছর ধরে এলাকাটিকে দখল করে রাখে আর্মেনিয়া। এ নিয়ে ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত যুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার আজারবাইজানি মুসলিম শহীদ এবং ৫০ হাজার জখম হয়। এ ছাড়া প্রায় এক মিলিয়ন মুসলিম ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে আজারবাইজানে রিফিউজি হিসেবে গত ৩০ বছর ধরে দিনযাপন করে আসছে। জাতিসঙ্ঘের ভূমিকাও দেখার মতো। তারা আর্মেনিয়ার প্রতি অধিকৃত এলাকা ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে চারটি প্রস্তাব পাস করে। এভাবে মুসলিম দেশের বেলায় শুধু প্রস্তাব পাস করেই দায়িত্ব শেষ করে জাতিসঙ্ঘ; যেভাবে করা হয়েছে ফিলিস্তিন, কাশ্মির ও রোহিঙ্গা সমস্যার বেলায়। অথচ খুব অল্প সময়ের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ইস্ট তিমুর ও সাউথ সুদানকে স্বাধীন রাষ্ট্র্র হিসেবে মেনে নেয় জাতিসঙ্ঘসহ পশ্চিমা দুনিয়া। কারণ ওই দুই এলাকা খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ। অপর দিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার ‘অপরাধে’ দীর্ঘ ৭০ বছর পর্যন্ত ফিলিস্তিন ও কাশ্মির স্বাধীন হতে পারছে না। তাদের বেলায় জাতিসঙ্ঘ কেবল ‘প্রস্তাব পাস’ করেই দায় সেরেছে।
বর্তমান বিশ্ব অমুসলিম মোড়লদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই মোড়লরা প্রায় সব মুসলিম দেশের শাসকদের পুতুল বানিয়ে রেখেছে, নতুবা কোনো দেশপ্রেমিক শাসককে ক্ষমতায় থাকতে দিচ্ছে না।
যাই হোক, ১৯৯২ সালে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধবিরতির পর ফ্রান্স, রাশিয়া ও আমেরিকা সালিস করার দায়িত্ব নেয়। এ তিন দেশই মুসলিমবিদ্বেষী। প্রায় ৬৫০ বছরের ওসমানী খিলাফত ধ্বংস করার কুশীলব ছিল ফ্রান্স, রাশিয়া ও ব্রিটেনের যৌথ ষড়যন্ত্র ও ঐক্য শক্তি। আজ সেই শক্তিগুলোই মুসলিম দেশ আজারবাইজানের পক্ষে সঠিকভাবে রায় দেবে, তা কী করে আশা করা যায়?
এই তিন বিশ্বমোড়ল দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নাগারনো-কারাবাখ সমস্যার সমাধান করেনি। করবেই বা কেন? একে তো আজারবাইজান মুসলিম দেশ। দ্বিতীয়ত, সঙ্কট সমাধান হয়ে গেলে ওই অস্ত্রব্যাপারী মোড়লরা তাদের অস্ত্র বিক্রি করবে কোথায়? বিশ্বে শান্তি এলে তাদের মোড়লিপনা ও পণ্যের বাজার শেষ হয়ে যাবে। তাই তারা দেশে দেশে বিবাদ ও যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছে। বিশেষ করে মুসলিম দেশ হলে তো কথাই নেই। যতটুকু না করলে নয়, অতটুকই করছে। এ কারণেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বারবার বলে আসছেন, জাতিসঙ্ঘ হচ্ছে পাঁচ মোড়লের একটি খ্রিষ্টান ক্লাব। পৃথিবী পাঁচের চাইতে অনেক বড়। একইভাবে ইউরোপিয়ান অর্থনৈতিক জোট যা ইইইউ নামে বিশ্বে পরিচিত তাও একটি খ্রিষ্টান অর্থনৈতিক ক্লাব।
ইউরোপের অনেক ছোট ছোট দেশকে তারা মেম্বার করলেও তুরস্ককে কয়েক যুগ ধরে অপেক্ষায় রেখেছে।
১৯৯০-এর দশকে আর্মেনিয়ার সাথে যুদ্ধে আজারবাইজান হেরে যাওয়ার কারণ, তারা তখন সামরিক শক্তিতে খুবই দুর্বল ছিল। একই অবস্থা তুরস্কেরও। তারা আজারবাইজানকে সাহায্য করতে গিয়েও তেমন কিছু করতে পারেনি। কারণ তারা নিজেরা যেমন দুর্বল ছিল, তেমনি সবকিছুর জন্য মুসলিমবিদ্বেষী বিশ্ব মোড়লদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ওই সময় আর্মেনিয়া বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য পেলেও আজারবাইজান তেমন কোনো সাহায্য পায়নি। তখন আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্ক ছাড়া একটি মুসলিম দেশও এগিয়ে আসেনি।
এরপর বহু বছর পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নেতৃত্বে ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসে এ কে পার্টি। পুতুল ও দালাল নেতৃত্বের অবসান হয়। তুরস্কে অর্থনৈতিক সামাজিক সামরিক সব দিক থেকে অল্প সময়ে এক আমূল পরিবর্তন শুরু হয়। দেশটি ইতোমধ্যে নিজস্ব অস্ত্র তৈরি শুরু করে তাতে অভাবনীয় সফলতা পেতে থাকে। নতুন ধরনের ড্রোন বানিয়ে এবং তা সিরিয়া ও লিবিয়াতে ব্যবহার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। নিজস্ব ট্যাংক, বিভিন্ন দূরপাল্লার মিসাইল, রকেট, গোলাবারুদ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। নেভির করবেট যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিনও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সব কিছুতে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে দেশটি।
সঙ্গতকারণেই বিশ্বের সব নিপীড়িত মুসলিমের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে দেশটি। দীর্ঘ তিন দশক ধরে বিশ্ব মোড়লদের টালবাহানা দেখে আসছে আজারবাইজান ও তুরস্ক। তারা যে মুসলিমদের কোনো সমস্যারই সমাধান করবে না, এটি তাদের দালাল ছাড়া সবাই বুঝে নিয়েছে। তাই তুরস্কের সাহায্যে গত কয়েক বছর আজারবাইজান তার হারানো ভূমি পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। একই সময়ে আর্মেনিয়া তার প্রক্সি, কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়ে আজারবাইজানের ওপর একাধিকবার আক্রমণ করিয়েছে। সর্বশেষ এই বছরের জুলাইতে আক্রমণ করে একজন উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারসহ অনেক সৈন্যকে হতাহত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর আর্মেনিয়া আবারো আক্রমণ করার সাথে সাথে আজারবাইজানের পাল্টা আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। আর্মেনিয়া বলছে, আজারবাইজানই প্রথম আক্রমণ করছে, তবে তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। তবে কারা প্রথম আক্রমণ করেছে সেটি এখন মুখ্য বিষয় নয়। আসল কথা হলো, দীর্ঘ তিন যুগ ধরে অপদখল হয়ে থাকা হারানো ভূমি ফেরত পেতে চায় আজারবাইজান। এটা তার বৈধ অধিকার।
যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে তুরস্ক ঘোষণা দেয় যে, তারা তাদের আজারবাইজানি ভাইদেরকে সর্বাত্মক সাহায্য দেবে। এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, আজারবাইজান ও ইসরাইলের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। ইসরাইল অস্ত্র বিক্রি করে আজারবাইজানকে এবং তার পরিবর্তে তেল নেয়। আবার রাশিয়া থেকেও অস্ত্র ক্রয় করে। রাশিয়া, ইসরাইল ও তুরস্কের সর্বাত্মক সাহায্য ও সমর্থনে আজারবাইজানি সৈন্যরা প্রথম দিনেই বাজিমাত করে ফেলে। বিশেষ করে তুরস্কের ড্রোন দিয়ে আর্মেনিয়ানদের বিপুল অস্ত্র ধ্বংস করে সাতটি গ্রাম ফেরত নিয়ে নেয়। এখন পর্যন্ত আজারবাইজান সেনারা সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে, যা আর্মেনিয়ার ধারণাতেই ছিল না। তাদের অসংখ্য সেনা হতাহত হয়েছে। আজারবাইজান এগিয়ে যাচ্ছে। আর্মেনিয়া ও তার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পিছু হটছে। আশা করা যায়, কিছু দিনের মধ্যে আজারবাইজান তার হারানো ভূখণ্ড পুনর্দখল করে নিতে সক্ষম হবে। ওআইসি আজারবাইজানকে সমর্থন জানিয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও কাতার সর্বাত্মক সমর্থন ও সাহায্য করার জন্য তৈরি আছে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরাইলের সাথে আজারবাইজানের সুসম্পর্ক থাকার কারণে ইরানের সাথে আর্মেনিয়ার ভালো সম্পর্ক ছিল।
এ ছাড়া বিভিন্ন অস্ত্রও বিক্রি করছিল। কিন্তু এবার যুদ্ধে ইরান আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার সাথে আর্মেনিয়ার সামরিক চুক্তি ছিল। রাশিয়াও সাফ বলে দিয়েছে, এই যুদ্ধে রাশিয়া জড়িত হবে না। কারণ এই যুদ্ধ নাগারনো-কারাবাখ নিয়ে; আর্মেনিয়ার সাথে নয়। আর্মেনিয়ায় তাদের সামরিক ঘাঁটি থাকা সত্ত্বে¡ও তারা জড়িত হবে না, যতক্ষণ না আর্মেনিয়ার ভূখণ্ড আক্রান্ত না হয়। যে ফ্রান্স বেশি বাড়াবাড়ি করছে তুরস্কের বিরুদ্ধে, তাদেরও আর্মেনিয়াকে তেমন সাহায্য করা সম্ভব নয়। অতএব আর্মেনিয়া সব দিক থেকে নিরাশ হয়ে যুদ্ধবিরতির জন্য ‘কান্নাকাটি শুরু করেছে’। রাশিয়া দুইপক্ষের সাথে আলোচনা করে ১০ অক্টোবর শনিবার দুপুর থেকে যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেয়া এক পোস্টে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেন, ‘আজারবাইজানের গৌরবান্বিত সামরিক বাহিনী নাগারনো-কারাবাখের ফুজুলি জেলার গারাদাগলি, খাতুন বুলাগ, গারাকল্লু গ্রাম এবং খোজাবেন্দ জেলার বুলুতান, মালিক জানলি, কামারতুক, তেকে ও তাগাসের গ্রাম আর্মেনিয়ার দখলদারিত্ব থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। আজারবাইজানের সেনাবাহিনী দীর্ঘজীবী হোক! কারাবাখ আজারবাইজানের!’ এর আগে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর দখলদারিত্ব থেকে সেব্রেইল, হাদরুতসহ ৩০টিরও বেশি গ্রাম সেনা অভিযানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দেয় আজারবাইজান।
এ দিকে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে দুই দেশের মধ্যে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত আর্মেনিয়ার হামলায় ৪৪ জন বেসামরিক আজেরি নাগরিক নিহত হয়েছেন। হামলায় এখন পর্যন্ত ২০৬ জন বেসামরিক আজেরি নাগরিক আহত হয়েছেন।
লেখক : প্রবাসী সমাজকর্মী ও ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান : সফলতার রহস্য এবং ‘আমার দেখা আধুনিক তুরস্ক’ বইয়ের লেখক।