যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শুধু সেই দেশের প্রেসিডেন্ট নন, সম্ভবত তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ। তিনি যাই করেন সেগুলো সবার জীবনে প্রভাব পড়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন। তা হলে কিভাবে ট্রাম্প বিশ্বকে বদলে দিচ্ছেন? গতকাল বিবিসি এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ট্রাম্প বারবার ঘোষণা দিয়েছেন, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র হলো সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র। আসলে কি তাই? ১৩টি দেশের ওপর সম্প্রতি পিউ রিসার্চের এক জরিপে দেখা গেছে- বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির জন্য ট্রাম্প বেশি কাজ করেননি। বরং নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ইউরোপের দেশগুলোয় জনসাধারণের মধ্যে গত ২০ বছরে মার্কিন প্রভাব সবচেয়ে নিচুস্তরে রয়েছে। যুক্তরাজ্যে আমেরিকার ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির এই হার ৪১ শতাংশ, ফ্রান্সে ৩১ শতাংশ; যা ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন এবং জার্মানিতে মাত্র ২৬ শতাংশ। এ ছাড়া জরিপে দেখা গেছে, অন্যান্য
নেতার তুলনায় ট্রাম্পের প্রতি লোকজনের আস্থাও কম। মার্কিন জনগণের মধ্যে ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস বড় নিয়মক হিসেবে দেখা গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ১৫ শতাংশ বলেছেন, করোনা ভাইরাস মহামারী ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিবিসির সংবাদদাতা রেবেকার সিলসের ভাষায়- ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে কী বিশ্বাস করেন তা বলা কঠিন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি ‘ব্যয়বহুল ছলনা’ থেকে শুরু করে ‘গুরুতর সংকট’ বলেছেন; যা ‘আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মনে হয়েছে। ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নিয়ে যান। যেখানে বিশ্বে চীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবারও নির্বাচিত হন, তা হলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু কয়লা খনি এখনো বন্ধ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সমর্থনে পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সস্তায় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের জন্য খনিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প কঠোর অবস্থান নেন। বিশ্বের সাত মুসলিম দেশের জন্য মার্কিন সীমানা বন্ধ করে দেন। বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ১৩টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর ভ্রমণ বিধিনিষেধের আওতায় রয়েছে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বব্যাপী অভিবাসন প্রক্রিয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে তিনি মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল তুলে দেন- এতদিনকার সহজ সীমান্তপথকে সীমাহীন কঠিন করে তোলে।
এবার চোখ ফেরানো যাক ভুয়া সংবাদের দিকে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভুয়া সংবাদের ব্যাপারে কথা বলেন। যদিও মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট ভুয়া সংবাদ টার্মটি আবিষ্কার করেননি। তার পরও এটি বলা যেতে পারে, ভুয়া সংবাদ টার্মটি জনপ্রিয় করে তুলেছেন তিনি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এ ব্যাপারে প্রথম টুইট করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ভুয়া সংবাদ’ টার্মটি প্রায় ২ হাজার বার ব্যবহার করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ও অডিও পর্যবেক্ষণকারী সাইট ফ্যাক্টবা জানিয়েছে।
ট্রাম্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বেশ আলোচিত হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন বেশকিছু দেশ থেকে সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অর্থাৎ ২০ বছর আগে বুশ প্রশাসন যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ শুরু করেছিল, সেই যুদ্ধই ট্রাম্প প্রশাসন ইতি টানতে চাইছে। তার অংশ হিসেবে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রাম্প নিজস্ব গতিতে চলেছেন। হোয়াইট হাউসে আসার প্রথম দিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে স্বাক্ষরিত ১২ দেশের বাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপকে ভয়াবহ উল্লেখ করে তা বাতিল করেন। এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ায় লাভবান হয় চীন। কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের ব্যাপারেও নতুন করে আলোচনা করেন ট্রাম্প।
২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসেই তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন ট্রাম্প। এটি যে চীনকে সরাসরি হুমকি তা বলাই বাহুল্য। এভাবে তিনি চীনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেন, যা বর্তমানে করোনা ভাইরাস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান- যা ওই অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধোন্মাদনা শুরু করেছে।