করোনা ভাইরাস মহামারীর এই সময়ে উদ্ভাবিত বেশ কয়েকটি টিকা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে বিশ্ব। তবে মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের উদ্ভাবিত টিকায় অ্যালার্জিজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। এ ছাড়া এসব টিকা করোনার বিরুদ্ধে কতটুকু প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা দাবি করেছে, তাদের টিকাটির দুই ডোজ করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক বেশি কাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এমন দাবি করে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে অক্সফোর্ডের এই টিকাটির তিন কোটি ডোজ কিনতে গত নভেম্বরেই চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন দিলেই টিকাটি বাংলাদেশে আসবে। যার প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৫ ডলার বা ৪২৫ টাকা। এরই মধ্যে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, অচিরেই জরুরি ব্যবহারের জন্য অক্সফোর্ডেরসহ মর্ডানা ও ফাইজারের টিকার অনুমোদন দিতে পারে তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অক্সফোর্ড দাবি করেছে, তাদের টিকাটি শেষ পর্যায়ের যে পরীক্ষা করা হয়েছিল তাতে দুটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। প্রথমে একজন রোগীকে টিকার অর্ধেক ডোজ, তারপর সম্পূর্ণ ডোজ প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয়বার দেওয়া হয় দুটো সম্পূর্ণ ডোজ। এতে দেখা গেছে প্রথমটির পদ্ধতির তুলনায় দ্বিতীয়টি অনেক বেশি কার্যকর। প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সম্পূর্ণ ডোজের বিষয়টি প্রয়োগ করা হয়েছিল। তখনো আশানুরূপ ফল মেলে। শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালেও একই ফল মিলেছে। ফলে সম্পূর্ণ ডোজের বিষয়টির ওপরই এখন জোর দিতে চাইছে তারা।
এদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনার টিকায় অ্যালার্জিজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার যে খবর পাওয়া গেছে, তা তদন্ত করে দেখবে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ (এফডিএ)। তবে নতুন বিধিনিষেধ ছাড়াই টিকাটির ব্যবহার চলবে। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে গণহারে এ টিকা দেওয়া শুরু হলে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য আসে।
এফডিএ এমন এক সময় ফাইজারের টিকা নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিল যখন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবও গণহারে এই টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে। গত বুধবার দেশটিতে ফাইজারের টিকার প্রথম চালান পৌঁছায়। এর পরদিনই বৃহস্পতিবার থেকে তারা টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে। সৌদি সরকার টিকা নেওয়ার জন্য লোকজনকে আগে থেকে নিবন্ধন করতে বলেছিল। এ আহ্বানের পর সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দেড় লাখের বেশি মানুষ টিকা নিতে নিবন্ধন করেছে বলে জানায় সৌদি কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে সৌদির স্বাস্থ্যমন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়া এ টিকা গ্রহণ করে বলেছেন, আমরা নিশ্চিত করছি এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে টিকাকরণ শুরু হবে আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝিতে। ভারত সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, জরুরি ব্যবহারের জন্য কয়েকটি টিকা অনুমোদন দেওয়া হবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে এ অনুমোদন আসতে পারে।
দুটি কোম্পানি এর মধ্যে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। আরও ছয়টি কোম্পানি তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে ভারতে ৩০ কোটি মানুষকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
মডার্নার টিকা অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
আরেক মার্কিন কোম্পানি মডার্নার প্রস্তুতকৃত করোনার টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। গতকাল এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ তথ্য জানান বলে খবর দিয়েছে এএফপি। টুইটে ট্রাম্প লেখেন- কোনো বাধা ছাড়াই মডার্নার টিকার অনুমোদন দেওয়া হলো। দ্রুতই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
এর আগের দিন মার্কিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল জরুরি ভিত্তিতে মডার্নার টিকা ব্যবহারের সুপারিশ করেন। এর পরই ট্রাম্প প্রশাসন এ অনুমোদন দিল।