যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালে সহকারী নার্স পদে কাজ করেন রেহানা আক্তার। করোনার শুরু থেকেই সম্মুখসারির যোদ্ধা তিনি। এই রেহানা আক্তারই যুক্তরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মী, যিনি ফাইজারের টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়া ও করোনা মহামারীতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে দৈনিক আমাদের সময়কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি। রেহানা আক্তার পূর্ব লন্ডনের রেডব্রিজ এলাকার বাসিন্দা।
টিকা নেওয়ার প্রথম ধাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর ওয়ার্ড ম্যানেজারের কাছ থেকে প্রথম ই-মেইল পাই। এতে টিকার জন্য বুকিং দিতে বললে সঙ্গে সঙ্গেই দেই। ১০ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় রয়্যাল ফ্রি হসপিটালে টিকা দেওয়া হয়।
টিকা নেওয়ার পর কোনো শারীরিক অসুবিধা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়নি তার। তার হাসপাতালেও করোনা টিকা নেওয়া কারও অসুস্থতার খবর পাননি তিনি। টিকা নেওয়ার দিনও তিনি কাজ করেছেন। সাহস করে এ রোগের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন এই স্বাস্থ্যকর্মী।
করোনার টিকা নিয়ে অনেকের নেতিবাচক ধারণা সম্পর্কে রেহানা বলেন, যারা টিকা আবিষ্কার করেছেন তারা গবেষণা করেই তা বের করেছেন। তাই সচেতন হয়ে প্রত্যেকেরই করোনা টিকা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলে অবশ্যই তা নেওয়া উচিত।
যুক্তরাজ্যে ফাইজারের টিকা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয় গত ২ ডিসেম্বর। এর পর ৮ ডিসেম্বর টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রথম টিকাটি নেন নর্দান আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা ৯০ বছর বয়সী মার্গারেট কেনান। এর মধ্যে কতজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রয়েছেন, তার কোনো পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য খাতে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্তত কয়েক ডজন বাংলাদেশি এরই মধ্যে করোনার টিকা পেয়েছেন। আসছে বছরের শুরুতে ফাইজার ও অক্সফোর্ডেও টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরাই এগিয়ে থাকবেন।
যুক্তরাজ্যে এখন প্রতিদিনই ৫০ হাজারের বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি নিয়ে রেহানা বলেন, প্রথমবারের চেয়ে এখন অবস্থা আরও খারাপ। হাসপাতালে একটুও জায়গা নেই। আগে করোনা ভাইরাসে অল্পবয়সী রোগী দেখা যায়নি। তবে বর্তমানে করোনার নতুন ধরন ধরা পড়ার পর থেকে কম বয়সীদের আক্রান্তের বিষয়টি দেখছি। তাদের উপসর্গও নতুন। আক্রান্ত এত বেশি যে স্বাস্থ্য বিভাগ রোগীদের হাসপাতালে রাখতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। এতকিছুর পরও এই মহামারীতে মানুষের জন্য কাজ করতে পেরে রেহানা আক্তার গর্বিত।