শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

দুই কেজি মুরগির দামে ১ কেজি পেঁয়াজ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৩১২ বার

পেঁয়াজ কাটার সময় এর ঝাঁঝে সাধারণত চোখ দিয়ে পানি ঝরে। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না, বরং পেঁয়াজ কিনতে গিয়েই ক্রেতার চোখ থেকে পানি বের হচ্ছে। পেঁয়াজের ঝাঁঝ বেড়েছে নাকি কমেছে, তার পরীক্ষা না করা হলেও এর দামের ঝাঁঝ প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। এখন বাজারে দুই কেজি ব্রয়লার মুরগির দামের চেয়ে এক কেজি পেঁয়াজের দাম বেশি।

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে দুই কেজি মুরগির দামে মিলছে এক কেজি পেঁয়াজ। জানা যায়, উপজেলা সদর সুবিদখালী বাজারসহ ছয়টি ইউনিয়নে হাটবাজারে এক কেজি পেঁয়াজ এলাকাভেদে ১৭০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এক দিনের ব্যবধানে বর্তমানে ৭০-৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা সদর সুবিদখালী বাজারে প্রতি কেজি ২৩০-২৪০ টাকা ও মহিষকাটা বাজারে ২৪০-২৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি করা হয়েছে। আর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১১৫-১২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় দুই কেজি ব্রয়লার মুরগি ও এক কেজি পেঁয়াজের মূল্য সমান হওয়াতে অনেক ক্রেতা বিষয়টি নিয়ে কৌতূক করছেন। গতকাল শনিবার উপজেলা সদর সুবিদখালী বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশি ভাগ মুদি দোকান পেঁয়াজ শূন্য। দুই-একটি দোকানে পেঁয়াজ দেখা গেলেও তা বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার অনেকে ২২০-২৩০ টাকা কেজি জানতে পেরে পেঁয়াজ না কিনে বাড়ি ফিরে গেছেন। সুবিদখালী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো: আবদুস সোবাহান বলেন, বরিশালের পাইকারি আড়ত থেকে ২০০-২১০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে আনার পরে প্রতি কেজিতে ১০০ গ্রাম ঘাটতি থাকে এবং পরিবহন খরচ হিসাব করে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রিতে আমাদের খুচরা ব্যবসায়ীদের পাঁচ-ছয় টাকা থাকে, তাতে লাভ তো দূরের কথা নিজেদের শ্রমের মূল্যে ওঠে না। আরেক ব্যবসায়ী মো: ইব্রাহিম সিকদার বলেন, এভাবে চলতে থাকলে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম চুয়াডাঙ্গা। তা স্বত্ত্বেও এ জেলাতেই পেঁয়াজের ঝাঁঝ সবচেয়ে বেশি। ফলে সবশ্রেণীর ভোক্তাদের মধ্যে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ফিরছেন খালি হাতে। আগে বাজারের সব কেনাকাটা শেষে পেঁয়াজ কেনার রীতি ছিল ক্রেতাদের মধ্যে। এখন হিসাব করে প্রথমেই পেঁয়াজ কেনার কাজ সেরে নিতে হচ্ছে। গৃহিণীরা বলছেন, তরকারিতে পেঁয়াজের মাত্রা কমিয়ে কোনো রকমে রান্না সারছেন তারা। পেঁয়াজ বিক্রিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে, আড়তদাররা বলছেন যেমন কিনছি তেমন বিক্রি করছি।

সারা দেশের মতো পেঁয়াজ উৎপাদনের জেলা চুয়াডাঙ্গার বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০-১২০ টাকার পেঁয়াজ গত শুক্রবার বাজারে হঠাৎ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে। রাত পোহাতে না পোহাতেই পেঁয়াজের এমন দাম বৃদ্ধিতে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের ক্রেতাদের রীতিমতো বড় ধরনের হোঁচট খেতে হচ্ছে। অনেকে বাজারে এসে পেঁয়াজ না কিনেও বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তবে উচ্চ আয়ের মানুষেরা যে বেশি বেশি পেঁয়াজ কিনছেন তা কিন্তু নয়, তারা এখন চাহিদা মতো কেনাকাটায় বিশ্বাসী হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুফী মো: রফিকুজ্জামান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় গত বছর সুখসাগর জাতের দেশী পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল ৬৩০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ১৯ টন হারে সেখান থেকে প্রায় ১২ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, যা এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। চলতি বছরেও সমপরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারো পেঁয়াজ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে।
আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বরগুনার আমতলীতে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এখন পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা। দোকানিরা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি ও প্রশাসনের ভয়ে পরিচিত ক্রেতা ছাড়া অন্য কারো কাছেই এই পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না বলে জানান ভোক্তভোগী ক্রেতারা।

গতকল শনিবার সকালে সরেজমিন আমতলী পৌরসভার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে পেঁয়াজ নেই। আর যেসব দোকানে পেঁয়াজ আছে তাও বিক্রেতারা গোপনে পরিচিত ক্রেতাদের কাছে ২৪০ ও ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। একাধিক বিক্রেতারা জানান, পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকায় তারা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। আবার অনেক বিক্রেতা প্রশাসনের ভয়ে অপরিচিত কোনো ক্রেতার কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন আমতলীর ক্রেতারা।
পেঁয়াজ কিনতে অনেক ক্রেতাদের বাজার ঘুরে ঘুরে পেঁয়াজের দাম যাচাই-বাচাই করতে দেখা গেছে। যদি একটু কম দামে কাক্সিক্ষত পেঁয়াজ কিনতে পারেন। আবার অনেক ক্রেতা পেঁয়াজ কিনতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখো গেছে।

ক্রেতা শিক্ষক মো: মাহবুবুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনের লোকজন করেটা কি? বাজার নিয়ন্ত্রণে কেন মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা তারা কেন নিচ্ছেন না। পেঁয়াজ বিক্রেতাদের এই নৈরাজ্য থেকে আমরা কবে মুক্তি পাবো।

অপর ক্রেতা মো: হায়দার আলী দুলাল ফকির বলেন, একে স্কুলসংলগ্ন একটি দোকান থেকে তিনি এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ২৫০ টাকায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট বিক্রেতা শাহজাহান মিয়া বলেন, বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। বাধ্য হয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ঝামেলা এড়াতে প্রশাসনের ভয়ে পরিচিত ক্রেতা ছাড়া কারো কাছে এই পেঁয়াজ বিক্রি করি না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বলেন, আমরা বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। যারা বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
ভুক্তভোগী ক্রেতারা মনে করেন, নিয়মিত বাজারগুলোতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা যদি থাকত তাহলে এত অল্প সময়ের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে পেঁয়াজের দাম এতটা বাড়ত না। আর ক্রেতারাও ভোগান্তিতে পড়ত না।

শিবগঞ্জ (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলাজুড়ে খুচরা বাজারে গত শুক্রবার দেশী পেঁয়াজ ২৫০ টাকা কেজি করে বিক্রি হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজ ২০০-২১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ৮০ টাকা। গত বুধবার মহাস্থান বাজার পাইকারি আড়তগুলোতে দেশী পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শুক্রবার দাম বেড়ে ২৫০ টাকা হয়েছে। খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৬০ টাকা। এ দিকে বৃহস্পতিবার পাইকারি আড়তে পেঁয়াজের কেজি ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হলেও দুপুর ১২টার দিকে দাম কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মণ প্রতি ৬০০ টাকা বেড়ে গেছে। বগুড়ার বাজারে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আড়তদার জানান, যেসব পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে সেগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে আসছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। দেশী পেঁয়াজের মজুদও প্রায় শেষ। ঘূর্ণিঝড়ে পেঁয়াজ পরিবহনে বিঘœ ঘটায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বেড়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর এক লাফে দাম বেড়ে যাওয়াটা ব্যবসায়ীদের নতুন আরেকটি অজুহাত মাত্র। যথাযথ নজরদারির অভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ প্রচুর থাকলেও মোকামে ঘাটতি কথা বলে এই চক্র সব ধরনের পেঁয়াজ পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এ মৌসুমে ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসছে না পেঁয়াজের দাম। এ ব্যাপারে একজন কর্মকর্তা বলেন, পেঁয়াজের দাম সারা দেশেই ঊর্ধ্বমুখী। এ বিষয়ে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। গত তিন দিনের ব্যবধানে তিন দফায় বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। গত বুধবারও প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকা। তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এ দিকে পেঁয়াজ ক্ষেতের চুরি ঠেকাতে কৃষকেরা অপরিপক্ব পেঁয়াজ ক্ষেত রাত-দিন পাহারা বসিয়েও সামাল দিতে পারছেন না বলে ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান। ক্রেতা নজরুল ইসলাম, মজিবুর, নবী হোসেনসহ অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকলে ক্রেতাদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। তাই পেঁয়াজের বাজার দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দেশী পেঁয়াজ আকার ও প্রকারভেদে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৩০-২৪০ টাকা। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০-২৬০ টাকা। এতে ক্রেতা সাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন জানান, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আজ থেকেই বিভিন্ন বাজার মনিটরিং ও পেঁয়াজের গুদামে অভিযান পরিচালনাসহ বিধি মোতাবেক কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com