শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেয়ার ঘোষণা দিলেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। গতকাল সোমবার তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়া। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার একদিন পরই শপথ নিলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন রাজ্য অনুরাধাপুরার রুয়ানওয়েলি সেয়া বৌদ্ধ মন্দিরে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে তার হাজার হাজার সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।
শপথ নেয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে রাজাপাকসে বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করা হবে।’ তা ছাড়া নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি মেনে দেশ পরিচালনা করার ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দেশকে সন্ত্রাসবাদ, আন্ডারওয়ার্ল্ড কার্যক্রম, ডাকাতি ও চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা করতে আমরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণ করব।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, যেকোনো সরকারের প্রধান দায়িত্ব- দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
রাজাপাকসে সিংহল সংস্কৃতি ও দেশটির ঐতিহ্য রক্ষায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের উন্নয়নের জন্য শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, এই দেশকে উন্নত করার জন্য সত্যিকারের শ্রীলঙ্কান হিসেবে আবারো যোগ দিতে আপনাদের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আপনাদের অনুরোধ জানাই।
গত ১৬ নভেম্বর (শনিবার) শ্রীলঙ্কার অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট ৩৫ জন প্রার্থী অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) সাজিথ প্রেমাদাসা এবং বিরোধী দল শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্টের (এসএলপিপি) গোতাবায়া রাজাপাকসের মধ্যে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা এবারের নির্বাচনে অংশ নেননি।
গোতাবায়া রাজাপাকসের ছিল দ্বৈত নাগরিকত্ব। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বাতিল করেন তিনি। শ্রীলঙ্কার নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা এখন এক কোটি ৬০ লাখ। আনুষ্ঠানিক ফলে ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন রাজাপক্ষে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। নজরদারি ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা কাঠামো শক্তিশালী করতে চান তিনি। গোতাবায়া সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্র রাজাপাকসের ছোট ভাই। তিনি তামিল বিদ্রোহ দমনকালে দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন। তামিল টাইগারদের প্রতিহত করে সমর্থকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপাকসে (৭০)।
২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলমের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। আর এই অভিযানের নিদের্শনায় ছিলেন তার বড় ভাই ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে। এই অভিযানের ফলেই তামিলদের পরাজয় ঘটেছিল এবং তামিল নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ নিহত হন।
তামিলদের বিরুদ্ধে গোতাবায়ার এমন অভিযানের জন্য তাকে ডেথ স্কোয়াডের ‘উদ্ভাবক’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। তামিলদের নির্মমভাবে হত্যা-নির্যাতনের কারণে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধেরও অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার একজন সুপরিচিত সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ ওঠে।
শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২৯ লাখ জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ বৌদ্ধ সিংহলি, ১৪ ভাগ তামিল হিন্দু, ১০ ভাগ মুসলিম এবং বাকিরা ক্যাথলিক ও অন্যান্য ধর্মের। রাজাপাকসেকে মনে করা হয় চীনের ঘনিষ্ঠ। তিনি সব দেশকে শ্রীলঙ্কার সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানান। ভাষণে প্রধানত স্থানীয় সিংহলি ভাষা ব্যবহার করলেও একপর্যায়ে তিনি ইংরেজিতে বলেন, আমরা চাই আমাদের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকতে এবং বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যেকার যেকোনো সঙ্ঘাত থেকে বাইরে থাকতে। সূত্র : রয়টার্স।