বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

জিয়ার খেতাব বাতিলে তিন সদস্যের কমিটি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ১৪৩ বার

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি আইনি বিষয় খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত মঙ্গলবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাবটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। কাউন্সিলের ৭২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এর পর ওই কমিটি গঠন করা হয়।

গতকাল বুধবার দুপুরে মাদারীপুরের রাজৈরে জামুকার সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আমি (শাজাহান খান), উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এই কমিটির সদস্য। এই কমিটি আইনগত বিষয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে মিটিংসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা প্রস্তুত করবে। কমিটি শিগগিরই বসে আইনগত বিষয়গুলো পরীক্ষা করে প্রস্তাবনা দেবে।

জামুকার ওই সভায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খানের বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। আর মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকা থেকে খন্দকার মোশতাকের নামও কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, এ ধরনের আরও ব্যক্তির নাম পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়া হবে। এ ছাড়া এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বহালের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান শাজাহান খান। এর আগে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াহিদ ও হাফিজের গেজেট ও সনদ বাতিল করেছিল মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী যারা আদালত তাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন। তাদের চারজনের সনদ, সম্মাননা বাতিল হয়েছে। জামুকার একই মিটিংয়ে খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমানসহ আরও অনেকের নাম এসেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত দালিলিক প্রমাণসহ। বঙ্গবন্ধু হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল, কী কী দালিলিক প্রমাণ আছে- সেগুলো আগামী মিটিংয়ে পেশ করার জন্য আমরা একটি উপকমিটি করেছি। আগামী এক মাসের মধ্যে তারা রিপোর্ট দেবে। দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের যে সম্মানসূচক পদবি রয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হবে। এমন নজির শুধু বাংলাদেশে নয়, বহির্বিশ্বেও রয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কারণে নয়।

একজন কর্মকর্তা জানান, সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের কারণে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দ-িত চার পলাতক খুনির খেতাব স্থগিতের জন্য হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন গত বছরের শেষ দিকে।

জামুকা তাদের সিদ্ধান্ত সুপারিশ আকারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এর পর খেতাব বাতিল নিয়ে বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (গেজেট) রথীন্দ্র নাথ দত্ত গতকাল বুধবার আমাদের সময়কে বলেন, আমরা এখনো জামুকার সভার কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। কার্যবিবরণী সই হবে। তার পর বাস্তবায়নপত্র দেওয়া হবে আমাদের। এর পরই আমরা গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করব। কমপক্ষে আরও এক মাস সময় লাগতে পারে।

সরকারের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট অনুযায়ী জিয়াউর রহমান ও শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’, নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান ‘বীর প্রতীক’। তাদের মধ্যে ডালিম, নুর, রাশেদ ও মোসলেহ উদ্দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি। গত বছরের ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জামুকার সভায় মোসলেহ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের সুপারিশ উঠলে গত ৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জামুকার সদস্য মেজর (অব) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক গণমাধ্যমকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নামের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের খেতাব থাকতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাদের খেতাব বাতিল করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও বৈঠক হবে, সভার কার্যবিবরণী সই হওয়ার পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com