হঠাৎ করে বসা, হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়া, কাজের চাপ ইত্যাদি কারণে হঠাৎ করেই মাথা ঘুরতে পারে। মাথা ঘুরছে মনে হলেই কোথাও বসে পড়তে হবে অথবা হাত দিয়ে কিছু একটা ধরে ফেলতে হবে। কিছুক্ষণ বসে থাকলে তা আবার ঠিকও হয়ে যায়। তাই এ নিয়ে কেউ খুব বেশি মাথা ঘামান না। এটা মোটেও ঠিক নয়।
মাথা ঘোরার কারণ : অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, কিছু ওষুধ সেবন, অন্তঃকর্ণের রক্তবাহী নালির অস্বাভাবিকতা, অন্তঃকর্ণের প্রদাহ, মধ্য কানের প্রদাহ, মেনিয়ারস রোগ, অস্বাভাবিক দৃষ্টিগত সমস্যা। বেশি উঁচুতে উঠে নিচের দিকে তাকালে এবং চলন্ত ট্রেন বা গাড়ি থেকে প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে মাথা ঘোরা। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ; মাথার পেছন দিকে ও ঘাড়ের রক্তনালিতে বাধা বা রক্ত সরবরাহে ত্রুটি; মস্তিষ্কের নিচের দিকে টিউমার, জল জমাট বা মাল্টিপল স্লেরসিসনামের রোগ; ভাইরাসজনিত ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস; মধ্যবয়সীর মিনিয়ার্স রোগ; আঘাতজনিত কারণে পেট্রাস হাড়ের ক্ষতি ইত্যাদি কারণেও মাথা ঘুরতে পারে। এ সমস্যার পাশাপাশি কানের ভেতর শোঁ-শোঁ বা দপ দপ শব্দ হতে পারে। কখনো কখনো মাথার অবস্থান পরিবর্তন করলে সমস্যাটা বাড়ে বা কমে। আনুষঙ্গিক সব তথ্য চিকিৎসককে জানালে তার পক্ষে রোগ নিরূপণ সহজ হবে।
আচমকা মাথা ঘোরা ভালো নয় : মাথা ঘুরলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। এ রকম অবস্থায় পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই একটা অবলম্বন আঁকড়ে ধরে বসে পড়া উত্তম। যাদের ‘বিনাইন পজিশনাল ভার্টিগো’ নামক সমস্যা আছে, হঠাৎ ঘাড় বা মাথার অবস্থান পরিবর্তন করলেই তাদের মাথা ঘোরা শুরু হয়। এ জন্য রাতে পাশ ফিরে না শুয়ে তারা চিৎ হয়ে একটু উঁচু বালিশে মাথা দিয়ে শোবেন। হঠাৎ করে মাথা বা ঘাড় উঁচুতে টানটান করবেন না, মাথা ঝাঁকাবেন না।
এ ক্ষেত্রে করণীয় : হঠাৎ মাথা ঘুরতে থাকলে যে কাজ করছিলেন, সেটা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। চিৎ হয়ে শুয়ে পড়–ন। বন্ধ করুন চোখ দুটো। সহজভাবে শ্বাস নিন এবং সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকুন। আপনি গাড়ি চালাতে থাকলে পা ব্রেকের ওপর রাখুন এবং থেমে পড়–ন। শুয়ে পড়–ন পাশের আসনে। ভাগ্যের ওপর নিজেকে ছাড়বেন না কখনই। আপনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন, যদি আপনার মাথা ঘোরা মারাত্মক হয়। অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে আপনার মাথা ঘোরার অভিজ্ঞতা হতে পারে। কাজ করবেন পরিকল্পনা মাফিক, সাধ্যের মধ্যে। সীমা অতিক্রম করবেন না। আগে কাজ চিন্তা করুন। তারপর হাত দিন। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না। কাজের চাপে এক বেলার খাবার না খেলে এবং রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে দ্রুত খেয়ে নিন। রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে আপনার মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (এনআইএনএস)