নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি না হলে সব ধরনের ভোট বর্জন করবে বিএনপি। দলের এ সিদ্ধান্তের ফলে ১১ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনেও যাচ্ছে না দলটি। তবে মাঠপর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে বিএনপির জেলা কমিটি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করবে। গত শনিবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভাশেষে কমিটির এক সদস্য আমাদের সময়কে বিষয়টি জানিয়েছেন।
সভাসূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল পুনর্গঠনের দিকে আরও মনোযোগ দেবে দলটি। অঙ্গসংগঠনের পাশাপাশি দলের যেসব জেলা কমিটি প্রস্তুত হয়েছে, তা কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কৃষক দল ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়। নির্বাচন কমিশন এই শূন্য আসনে ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করে। গত শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ উপনির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে পরিবেশ না ফিরলে এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর ভোটে যাবে না বিএনপি। এর আগে স্থায়ী কমিটির পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, পৌর ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত দেয় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের কমিশনে পরিণত হয়েছে। এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না- তা প্রমাণিত। বিগত নির্বাচন নিয়ে কমিশনার মাহবুব তালুকদারের কথাই যথেষ্ট। এই নির্বাচন কমিশনার দিনের ভোট রাতে করে। কোথাও কোথাও শতভাগ ভোট হয়েছে- এমন নির্বাচনও দেখতে পেয়েছি। জনগণ বলে, আমরা ভোট দিতে পারি না; সেক্ষেত্রে শতভাগ ভোট কে দেয়? যার কারণে দেশের মানুষও আর চায় না বিএনপি এই ধরনের নির্বাচনে যাক। ফলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনের পরিবেশ না ফিরলে এই কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না।
দলের নীতিনির্ধারকরা জানান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে ব্যাপক ‘কারচুপি’র পর পরবর্তী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়ার আগ্রহ হারায় দলটি। আগামী নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জোরালো এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপে রাখাসহ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী নেতা মনে করেন, এ সিদ্ধান্তে সরকার চাপে পড়বে। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি মহলের কাছে এর জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়- এটি সবার কাছে প্রমাণ করতে পেরেছে বিএনপি। ফলে আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতামতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া সরকারের হাতে বিকল্প থাকবে না।
দলটির নেতাদের সূত্রে জানা যায়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আর বেশি দিন নেই। সে ক্ষেত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করবে বিএনপি। সে অনুযায়ী জাতীয় ঐক্য করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। মেয়রপ্রার্থীদের উদ্যোগে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ চলছে। সব মিলিয়ে সরকারকে চাপে রাখতে হলে রাজপথে সক্রিয় হতে হবে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান, রাজপথে সক্রিয় হওয়ার আগে দলের কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ করা হবে। এরই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার কৃষক দলের সম্মেলন করা হয়েছে। এখন এ কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে কৃষক দলের নেতৃত্ব নির্বাচনপর্বে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন কাউন্সিলরদের বাধা দেওয়াসহ তার কর্মকা-ের বিচার চেয়ে কৃষক দলের একটি অংশ দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতার কাছে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অবস্থায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন নেতৃত্ব খোঁজা শুরু করেছেন। এরই মধ্যে কৃষক দলের সভাপতি হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মনোভাব জানতে চেয়েছেন তারেক রহমান। শুধু অঙ্গসংগঠনই নয়, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল রবিবার মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির কাউন্সিল হয়েছে। সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটে আফরোজা খান রিতা সভাপতি ও এসএ জিন্নাহ কবির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, আমরা গত শনিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সম্মেলন করেছি। সেখানে নেতাদের মতামত নিয়ে নেতা নির্বাচন করেছি। আজ মানিকগঞ্জে জেলা বিএনপির সম্মেলনে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতন্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন করা হবে। এটিই দলের সিদ্ধান্ত।