রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ অপরাহ্ন

দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই চলবে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১
  • ১৮৭ বার

সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস টিকার প্রয়োগ বিশ্বের অনেক দেশে স্থগিত হলেও বাংলাদেশের এই টিকার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্য সচিব মোঃ আবদুল মান্নান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এই টিকার কার্যক্রম বাংলাদেশে স্থগিত করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেননি। এই টিকার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকাটির প্রয়োগ স্থগিতের তালিকায় যুক্ত সর্বশেষ দেশটি হলো নেদারল্যান্ডস। এর আগে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডও একই ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে রক্তের মধ্যে ক্লট তৈরি করা বা জমাট বেধে ফেলে বলে নরওয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশে এরই মধ্যে ৫৭ লাখের বেশি মানুষ টিকাটি গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছে। মজুদ আছে ৭০ লাখ ডোজ। আর এরই মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের মধ্যে।

নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশেও টিকাটির ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন, এটি একটি চমৎকার টিকা এবং এটি রক্ত জমাট বাধঁতে সহায়তা করে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দেশগুলোর এই টিকার ব্যবহার অব্যাহত রাখা উচিত বলে বলছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস।

স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান যা বলছেন-

স্বাস্ব্য সচিব মোঃ আবদুল মান্নান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘বাংলাদেশ আমরা টিকা স্থগিতের মতো কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছেনি। যে পাঁচ-ছয়টি বা সাতটি দেশ বন্ধ করেছে, তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সেটা করেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা অন্য দেশগুলো থেকে লিখিতভাবে কোনো বারণ করেনি।’

‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় যে উপাদানগুলো রয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। যেহেতু সম্পর্ক নেই, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে এই কার্যক্রম বন্ধ করতে পারি না। কারণ বাংলাদেশের মতো দেশগুলো শতভাগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মেনে চলেছে,’ স্বাস্থ্য সচিব বলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘অক্সফোর্ডের যে টিকা আমরা নিয়ে এসেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বলে যে, এটা দেয়া যাবে না, এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে যদি তারা আমাদের চিঠি দেয়, তাহলে তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা অপেক্ষায় আছি।’

এপ্রিলে টিকার বড় চালান আসছে

জানুয়ারি মাসের শেষ থেকে বাংলাদেশে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটির প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

এ টিকাটি ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট ‘কোভিশিল্ড’ নামে উৎপাদন করছে। সেখান থেকে তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

এর মধ্যেই বাংলাদেশে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে।

টিকার সরবরাহ নিয়ে কোনো সঙ্কট আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য সচিব বলছেন, ‘সেখানে কোনো জটিলতা হচ্ছে না। আমরা আশা করছি, যথাসময়েই পাবো। অক্সফোর্ডের টিকা এই মাসের শেষের দিকে পাবো। আর এই মাসের শেষে বা এপ্রিলের শুরুতে আমরা এক কোটির ওপরে, এক কোটি বিশ/ত্রিশ লক্ষ কোভিক্সের টিকাও পাবো।’

করোনাভাইরাসের টিকার কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন,‘আমাদের ধারাবাহিকতা, চলমান যে কার্যক্রম আছে, সেটা কখনোই বন্ধ হবে না।’

এর আগে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘যে কোনো ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে যেভাবে ওষুধের প্রতিক্রিয়া থাকে। তারপরও আমরা ভ্যাকসিন নিচ্ছি দীর্ঘকাল যাবৎ।’

‘কাজেই এখানেও রিঅ্যাকশন হতে পারে। ইতোমধ্যেই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া আছে যে যেসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কেউ যদি অসুস্থ বোধ করে তাদের চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করেছি,’ স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানান।

এই চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে যে পদক্ষেপ নেয়া হবে

টিকা নেয়ার পর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে কী করা হবে, টিকার মান নিয়ন্ত্রণ এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করা বিষয়ক ১৭ পৃষ্ঠার একটি প্রোটোকল জানুয়ারিতে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাতে বলা আছে, টিকা যারা নিচ্ছেন তাদের উপর কী প্রতিক্রিয়া হয় তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে যেখান থেকে টিকা দেয়া হয়েছে সেখানে জানাতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের ওয়েবসাইটে একটি ফর্ম পাওয়া যাবে। সেখানেও জানানো যাবে।

যেসব হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে তার সবগুলোতে একজন করে কর্মকর্তা থাকবেন, যার দায়িত্ব হবে কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সে সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো।

কেন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।

কোন পদের কর্মকর্তারা সেটি করতে পারবেন সেটিও সুনির্দিষ্ট করে বলা আছে।

তবে সব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঘটনা তদন্ত করা হবে না। যেসব ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া গুরুতর, মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির বিষয় রয়েছে শুধু সেগুলো তদন্ত করা হবে।

কোনো গ্রামে দুই বা তার বেশি ব্যক্তির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে সেখানেও তদন্ত করা হবে। তবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সব ঘটনা নথিভুক্ত করা হবে।

যিনি টিকা নিয়েছেন তিনি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শুরু করতে হবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হবে।

টিকায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর, প্রোটকলে সেটিও বলা আছে।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com