করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছর পৃথিবীর প্রতিটি দেশর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই তুমুল চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। এ সময় অধিকাংশ দেশেই অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ায় বেড়েছে অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার। বিশেষ করে যার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে। এর মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশের বাস হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রভাব অনেক বেশি পড়েছে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদন বলছে, স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ায় গতবছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার মাতৃত্বকালীন মৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যার মাঝে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার। একই সময়ে বাংলাদেশেও শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে অন্তত ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ইউনিসেফের উদ্যোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহযোগিতায় এ প্রতিবেদন করা হয়েছে। এতে খতিয়ে দেখা হয়েছে স্বাস্থ্যসুরক্ষা, স্কুলসহ বিভিন্ন সমাজসেবা কার্যক্রম এবং অর্থনীতি নিয়ে সরকারগুলোর গৃহীত বিভিন্ন কৌশলের প্রভাব।
‘ডিরেক্ট অ্যান্ড ইনডিরেক্ট ইফেক্টস অব কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক অ্যান্ড রেসপন্স ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশ ও নেপালে গুরুতর অপুষ্টির শিকার শিশুদের চিকিৎসা দেওয়ার হার কমে গেছে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। ভারত ও পাকিস্তানে শিশুদের টিকা দেওয়ার হার কমেছে যথাক্রমে ৩৫ ও ৬৫ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে ১৫.৪ শতাংশ। শ্রীলংকায় মাতৃত্বকালীন মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ২১.৫ শতাংশ বেড়েছে। মাতৃমৃত্যুতে এর পরই রয়েছে পাকিস্তান ২১.৩ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গত বছর অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩৫ লাখ, যার মধ্যে চার লাখ কিশোরীও রয়েছে। জন্মনিরোধক সামগ্রীর দুস্প্রাপ্যতার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১ লাখ ৮৬ হাজারেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হওয়ায় এই অঞ্চলে মহামারীর সময় অতিরিক্ত ৫ হাজার ৯৪৩টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, এইডসের মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসা যথাযথভাবে না পাওয়াই এসব মৃত্যুর কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে এই দেশগুলোয় অন্তঃস্বত্ত্বা নারী, কিশোর-কিশোরী এবং শিশুদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে সরকারগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে টিকা সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা জোরদার এবং শিশুদের প্রয়োজনীয় ওষুধের জোগান নিশ্চিতের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।