পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ঢাকা সিটিতে বায়ু দূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। রাজধানীর আশেপাশের ইটভাটা, মোটরযানের কালো ধোঁয়া এবং যথেচ্ছ নির্মাণকাজ মূলত. এই তিন কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ু দূষণের এ মাত্রা বাড়ছে।
সোমবার বিকেলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকার বায়ু ও শব্দ দূষণ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ঢাকাসহ দেশের বাতাসে দূষণ প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরে তালিকার শুরুর দিকে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালি। নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এই ধুলাই হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর নিত্যসঙ্গী। তিনি বলেন, গত আট বছর ধরে এই তিন উৎস ক্রমেই বাড়ছে। ফলে বায়ু দূষণ মোকাবিলায় দূষণের উৎস বন্ধ করে শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি ঢাকার চারপাশের জলাশয়গুলোকে রক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠমো ও বিভিন্ন কাজে সমন্বয় করা প্রয়োজন।
মন্ত্রী বলেন, কীভাবে জনগণকে বায়ু দূষণ থেকে মুক্ত করতে পারি সে জন্য এ সভা ডাকা হয়েছে। ঢাকা সিটিতে বায়ু দূষণের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো ও বিভিন্ন কাজে সমন্বয় করা প্রয়োজন। ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজের জন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস-হাইওয়েসহ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণের সময় পানি ছিটানো, যন্ত্রপাতি যত্রতত্র ফেলে না রাখা ও নির্মাণের ক্ষেত্র নির্ধারিত বেষ্টনীর মধ্যে আছে কি না তা দেখতে হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বায়ু দূষণের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এ সমস্যা রোধে মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান বাড়ানো হয়েছে।
শাহাব উদ্দিন জানান, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের উৎস নিয়ে চলতি বছরের মার্চে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংক। তাতে দেখা যায়, দেশে বায়ু দূষণের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে- ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণকাজ। আট বছর ধরে এ তিন উৎস ক্রমেই বাড়ছে।২০১৩ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে দেশের ইটভাটাগুলোর ওপর একটি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, দেশে ইটভাটার সংখ্যা ৪ হাজার ৯৯৫টি। ২০১৮ সালে পরিবেশ অধিদফতরের জরিপে দেখা যায়, ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ৯০২টি হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৮৭টি ইটভাটা ঢাকা বিভাগের মধ্যে গড়ে উঠেছে। ওই গবেষণার তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে মোট যানবাহনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৭। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৪টিতে।
মন্ত্রী জানান, প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন’র এ দেশীয় পরিচালক রাকিবুল আমিনের মতে, বায়ু দূষণ মোকাবিলার প্রথম কাজ হচ্ছে দূষণের উৎস বন্ধ করা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং জলাশয়গুলো রক্ষা করা। এ দূষিত বায়ুর মধ্যে নগরের মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে, সে ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। তবে সবার আগে বায়ু দূষণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কট হিসেবে দেখতে হবে। তিনি বলেন, ভবন ও অবকাঠামো উন্নয়নকাজ উম্মুক্তভাবে করার ফলে শহরের বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ বাড়ছে। ঢাকা শহরের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এবং বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ অর্থাৎ এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, মেট্রোরেলসহ অন্যান্য প্রকল্প কার্যকর পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা প্রতিপালন, সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণপূর্বক মাটি, বালি ও অন্যান্য সামগ্রী পরিবহন ও সংরক্ষণ, কার্যকর কর্ম পরিবেশ রক্ষা করা, সময় মত রাস্তাঘাট সংস্কার ও মেরামত ও বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়মিত পানি ছিটানোসহ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
বিশেষ করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নির্মাণ। প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্মাণ সামগ্রী অর্থাৎ মাটি ও বালির একটি অংশ রাস্তার পড়ে যাচ্ছে, যা পরে বাযয় দূষণের সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ, ড্রেন পরিষ্কার করে ময়লা ড্রেনের পাশেই দীর্ঘদিন রাখা ও সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য পরিবহনের সময় অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থাপনার ফলে একটি অংশ রাস্তার ফেলে দেয়া হচ্ছে। এ সব বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনার ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ফলে বায়ু দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন ও নির্মাণ কার্যক্রমের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক সুনিদিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযাযয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতি মাসে হাইকোর্ট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়।