শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৪ অপরাহ্ন

বনানীতে সমাহিত হবেন ওয়াসিম

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৮১ বার

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের নায়ক ওয়াসিমকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। এর আগে বাদ জোহর সেখানেই তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন শয্যাশায়ী ছিলেন এ চিত্রনায়ক। তিনি কিডনী রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

ওয়াসিমকে বনানী কবরস্থানে সমাহিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তিনি বলেন, ওয়াসিম ভাইকে এখন গোসল করানো হচ্ছে। এরপর তার মরদেহ ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হবে।

আজ রোববার জোহরের নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে ওয়াসিমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাযা শেষে সেখানেই সমাহিত করা হবে তাকে।

ওয়াসিম ছিলেন ঢাকাই সিনেমার শক্তিমান অভিনেতা। ‘৭০ ও ‘৮০ দশকের একজন নায়ক হিসেবে তার ছিল দুর্দান্ত সাফল্য। ৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুর জেলার আমিরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন ওয়াসিম। তার পারিবারিক নাম মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। ওয়াসিম ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি বডিবিল্ডার হিসেবে নাম করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বডিবিল্ডিংয়ের জন্য ‌‘মি. ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন।

১৯৭২ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এস এম শফীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। শফীর আগ্রহেই ১৯৭২ সালে তার পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হন তিনি। এতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৭৪ সালে আরেক প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা মোহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তার। চলচ্চিত্রটির অসামান্য সাফল্যে রাতারাতি সুপারস্টার বনে যান তিনি।

১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ওয়াসিম অভিনীত ও এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ তাকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৃথিবীর ৪৬টি দেশে ‘দি রেইন’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবিটি বাম্পার হিট হয় আর ওয়াসিমকে অভিনেতা হিসেবে পৌঁছে দেয় অনন্য উচ্চতায়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন ওয়াসিম। ২০০৯ সালের পর সিনেমা থেকে নিজেকে আড়াল করে নেন এ মেগাস্টার।

অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন ওয়াসিম। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ডব্লিউ আর প্রোডাকশন। তার প্রযোজিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে হিসাব চাই, মোহন বাঁশি, নয়া তুফান, সীমাবদ্ধ ইত্যাদি। অভিনেতা হিসেবে তুমুল সাফল্য পেলেও প্রযোজক হিসেবে ওয়াসিম খুব একটা সফল হতে পারেননি।

অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে সাফল্য পেয়েছেন ওয়াসিম। তবে তার অভিনয় জীবনে তিন নায়িকার সঙ্গে কাজ করা ছবি সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। এই তিন নায়িকা হলেন- অলিভিয়া, অঞ্জু ঘোষ ও শাবানা। বিখ্যাত ‘দি রেইন’ ছবিতে ওয়াসিমের নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া। পরবর্তী সময়ে ওয়াসিম-অলিভিয়া জুটি বেঁধে বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। ‘বাহাদুর’ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ‘লুটেরা’, ‘লাল মেম সাহেব’, ‘বেদুইন’ প্রভৃতিও সফল হয়েছিল। ‘রাজ দুলারী’তে ওয়াসিম ও শাবানার অভিনয় দর্শকদের দারুণভাবে মুগ্ধ করেছিল। ছবিতে তাদের মুখের গানগুলো ছিল দর্শকের মুখে মুখে। অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে রয়েছে ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘আবেহায়াত’, ‘চন্দনদ্বীপের রাজকন্যা’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রসের বাইদানী’সহ বেশ কটি সুপারহিট ছবি।

দর্শকনন্দিত এই অভিনেতার নামেই ’৭০ আর ৮০’র দশকে সিনেমা হলে উপচে পড়ত দর্শক। দি রেইন, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস লোলিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান, মিস লোলিতাসহ প্রায় দেড় শতাধিক সুপার হিট ছবির নায়ক এই জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা।

ব্যক্তিজীবনে ওয়াসিম ছিলেন দুই সন্তানের জনক। ওয়াসিম বিয়ে করেছিলেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী রোজীর ছোট বোনকে। তাদের ছেলে দেওয়ান ফারদিন এবং মেয়ে বুশরা আহমেদ। ২০০০ সালে তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যু ঘটে। ২০০৬ সালে ওয়াসিমের মেয়ে বুশরা আহমেদ মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে আত্মহত্যা করে। ছেলে ফারদিন লন্ডনের কারডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com