শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন

নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৬ জুন, ২০২১
  • ২০৪ বার
নারী, মানসিক স্বাস্থ্য, গর্ভবতী, ট্রমা কাউন্সেলিং, www.dailynayadiganta.com

গ্রীণরোডে বসবাসকারী অলিয়া আজীজ (৩৪) গর্ভকালীন একাকিত্বে ভুগেছেন। তিনি সারাদিন একা থাকতেন এবং স্বামীর অফিস থেকে ফেরার অপেক্ষায় সময় গুনতেন। ওই সময় তার মাথায় নানারকম অস্বাভাবিক চিন্তা ভর করতো। কিন্তু স্বামী ঘরে ফিরলে তিনি তেমন কোনো সমস্যা অনুভব করতেননা। তবে শিশুর জন্মের পর তার মাঝে নানা পরিবর্তন দেখা যায়। এ সময় তিনি ভাবতে শুরু করেন একা কীভাবে সন্তানকে মানুষ করবো? সন্তানকে একা রেখে তিনি ঘুমাতে পারতেননা। ভাবতেন কেউ এসে তাকে নিয়ে যাবে ইত্যাদি।

তিনি বলেন, ‘গর্ভবতী হওয়ার আগে থেকে আমি একা থাকায় অভ্যস্ত ছিলাম। তবে গর্ভবতী হওয়ার সময় থেকে সন্তান জন্মদানের আগে পর্যন্ত একা থাকতে থাকতে খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতাম। সব সময় মনে হতো একা সবকিছু সামলাতে পারবো তো? বিষয়টি কারো সাথে শেয়ার না করায় সমস্যাগুলো বেড়েছে। ওই সময় যদি আমার পাশে কেউ থাকতো তাহলে হয়তো এতটা বিষন্নতায় ভুগতামনা বা এখন চিকিৎসা নিতে হতোনা।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীর মানসিক স্বাস্থ্য তার জীবনে বেশ কয়েকবার বিঘ্নিত হতে পারে। মা হওয়ার আগে ও পরে এবং মেনোপজের আগে ও পরে এ সমস্যা কারো কারো ক্ষেত্রে মারাত্মক অবস্থা ধারন করে। তাই ওই বিশেষ সময়গুলোতে নারী কীভাবে তার মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে যত্নবান হবেন তা জানা থাকা প্রয়োজন।

২০১৪ সালে ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার সকল বয়সী ও শ্রেণির নারীদের উপর একটি গবেষণা করে। সেখান থেকে জানা যায়, ‘বাংলাদেশে বিবাহিত মধ্যবয়সী নারীদের মাঝে বিষন্নতা অনেক বেশি কাজ করে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় এ বয়সে এসে অনেক নারীর স্বামীর সাথে বনিবনা কম থাকে, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা, অর্থনৈতিক সংকট এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উৎকন্ঠা অন্যতম।’

কিভাবে নারীরা এ রকম পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করবেন বা ভালো থাকবেন জানতে চাইলে আর্মড ফোর্সড মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মো. আজীজুল ইসলাম বলেন, ‘মা হওয়ার আগে ও পরে কমবেশি সকল মায়ের মানসিক চাপ হয়। এই চাপ যারা সহ্য করতে পারেননা তাদের নানারকম মানসিক সমস্যা হতে পারে। মা হওয়ার আগে নারী তার অনাগত সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন থাকেন। তিনি ভাবেন শিশুকে কীভাবে যত্ম নেবেন, তাকে ভালো রাখতে পারবেন কিনা এবং তিনি নিজে ভালো থাকবেন কিনা। আবার মা হওয়ার পরও তার বিষন্নতা তীব্র হতে পারে। তিনি তখন ভাবেন শিশুকে ঠিকভাবে মানুষ করতে এবং বাঁচাতে পারবে কিনা। অনেক সময় তারা গায়েবী আওয়াজ শোনার কথাও বলে। এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় নারী বিষন্নতায় চলে যেতে পারেন। তার বিষন্নতা এতো বেশি হয় যে সে অনেক সময় সন্তানকে সে মেরে ফেলতে চায় এবং নিজেও আত্মহত্যা করতে চায়। পরিস্থিতি এরকম হওয়ার আগে তার চিকিৎসা প্রয়োজন। সে এ ধরনের অবস্থায় যাওয়ার আগে তার পরিবার বিষয়টি বুঝতে পারে। এজন্য একজন গর্ভবতী মায়ের পাশে সবসময় তার পরিবারকে পাশে থাকতে বলা হয়। তার সুবিধা-অসুবিধাগুলো খেয়াল রাখতে হয়। তার পরিবারের লোকজন তার পাশে থাকলে সে উদ্বিগ্নতা বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেনা।

তিনি আরো বলেন, ‘আবার নারীর যখন স্থায়ীভাবে মাসিক বন্ধ হয় বা মেনোপজ হয় এর কিছুদিন আগে বা পরে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ্য হতে পারেন। এ সময় তার হরমোনে যে পরিবর্তন আসে তাতে সে ভাবতে শুরু করে তার জীবন হয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। সে তার সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে, স্বামীর কাছে তার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। এ সময় অনেকের হঠাৎ গরম লাগে, হাত-পা ঘেমে যায়, অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, ঘুম কমে যায় বা অনিদ্রা হয়। বিষয়গুলো তারা মেনে নিতে না পারলে শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ্য হতে পারে। এজন্য তাদের ভাবতে হবে তাদের মা-খালাদের কথা। এরকম সময় তারাও পার করেছেন। তাদের তো কোনো সমস্যা হয়নি। এটা সব নারীর জীবনে ঘটে। অন্যরা সেটা সুন্দরভাবে কাটিয়ে উঠেছে তাহলে আমি কেনো পারবোনা। মূল কথা হলো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিলে কোনো সমস্যা হয়না। নইলে এজন্য অনেকে হরমোন থেরাপি নেন এবং অনেকেই মনোরোগবিদের কাছে যান।’

ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টারের প্রধান এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইসমত জাহান বলেন, ‘এ ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগী নারীদের সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ফোনে ও সরাসরি কাউন্সিলিং এবং চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। ঢাকাসহ নয়টি বিভাগীয় জেলায় রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রংপুর, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী। ময়মনসিংহে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

নারীর এই বিশেষ সময়গুলোতে সাবধান থাকা প্রয়োজন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নেয়া উচিত। তবে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া এবং পারিপাশ্বির্ক বিষয়গুলো খেয়াল করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে জীবনকে মূল্যায়ন করলে যে কোনো পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র : বাসস

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com