সরকারের ঘাটতি অর্থায়নের গতিধারা বিগত ৫ বছরে পরিমাণ এবং কাঠামোগত দিক থেকে কিছুটা বদলেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় অধিক সরকারি ব্যয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণে ধীরগতির কারণে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। ফলে বাজেট ঘাটতির অর্থায়ন জিডিপির ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। যেখানে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রয়াস ছিল। আর আদর্শ বাজেটে ঘাটতি ৫ শতাংশ বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
আগামী তিন অর্থবছরে ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সরকার ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৬শ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করেছে। এর মধ্যে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা, পরের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এমন প্রাক্কলন করা হয়েছে। ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বাড়ছে সুদ বাবদ খরচও।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৬৮ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা, যা বাজেটে মোট ব্যয়ের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। তার পরের দুই (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হবে যথাক্রমে ৭৭ হাজার ৫৫ কোটি ও ৮৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। তিন বছরে শুধু অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে যথাক্রমে ৬২ হাজার কোটি, ৬৯ হাজার ৮শ কোটি এবং ৭১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
নীতি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মোট অর্থায়নের একটি বড় অংশ বাইরের উৎস থেকে রেয়াতি সুবিধাসম্পন্ন ঋণ হিসেবে পাওয়ায় সরকার অতীতে সামগ্রিক অর্থায়ন ব্যয় তুলনামূলকভাবে কমিয়ে রাখতে পেরেছে। বিগত পাঁচ বছরে (২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর) বহিঃঅর্থায়নের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় ছিল সরকারি ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ এবং বহিঃঅর্থায়নের বিপরীতে অন্তর্নিহিত সুদহার ছিল গড়ে মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ। তবে বাইরের উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বহিঃঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় সামান্য বেড়েছে।
অন্যদিকে যেহেতু নিকটঅতীতে সরকার প্রায়ই ব্যয়বহুল ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ নিয়ে অর্থায়নের চাহিদা মেটাতে হয়েছে, তাই অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে পরিশোধিত সুদ সরকারের মোট সুদ ব্যয়ের প্রধানতম অংশ ছিল। বিগত পাঁচ বছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ গড় ব্যয় ছিল বাজেট ব্যয়ের ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং গড় অন্তর্নিহিত সুদহার ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ ঋণ অনেক ব্যয়বহুল। সেই ঋণের একটা মোটা অংশ যদি হয় সঞ্চয়পত্র, তা হলে তা আরও ব্যয়বহুল। সরকার ব্যয়বহুল ঋণ বেশি নিচ্ছে, এর অর্থই হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার খাতগুলোয় সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ রাখতে পারছে না।
বর্তমানে দেশে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের (ব্রডমানি) পরিমাণ ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমানত ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা এবং জনগণের হাতে নগদ টাকা ১ লাখ ৮৪ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। আবার আমানতের মধ্যে মেয়াদি আমানত ১১ লাখ ৫৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা এবং তলবি আমানত ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।