শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন

ট্রাম্প ইমপিচমেন্ট : তদন্তে ‘প্রবল’ প্রমাণ মিলেছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩২৫ বার

‘অসদাচরণের’ ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইমপিচ করার জন্য ‘প্রবল’ প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে ইমপিচমেন্ট তদন্তকারী প্যানেল। ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে’ প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মার্কিন কংগ্রেসের আইন প্রণেতাদের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ইউক্রেনের কাছ থেকে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন’। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করার লক্ষ্যে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
তবে অন্যায় কোনো কিছু করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই তদন্তকে ‘উইচ-হান্ট’ বা কাউকে জোর করে দোষী বানানোর চেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন। এই খসড়া প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন এই তদন্তকে ‘অত্যন্ত দেশপ্রেমহীন’ বলেও আক্রমণ করেছেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি স্টেফানি গ্রিশাম বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা ‘অন্যায়ের কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে’ এবং এই প্রতিবেদনে ‘তাদের হতাশার কথা ছাড়া’ আর কিছু নেই।
প্রতিবেদনটি এখন কংগ্রেসের বিচার বিভাগীয় কমিটিতে যাবে। বুধবার সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে, ট্রাম্পকে অপসারণ করার জন্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হবে কিনা।
প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে?
ট্রাম্প-ইউক্রেন ইমপিচমেন্ট তদন্ত রিপোর্টটি মঙ্গলবার প্রকাশ করে হাউজ পার্মানেন্ট সিলেক্ট কমিটি অন ইন্টেলিজেন্স।
সেখানে বলা হয়েছে, তদন্তে ‘বেরিয়ে এসেছে যে, ২০২০ সালের নির্বাচনে তার পক্ষে বিদেশি সহায়তা পাওয়ার জন্য কয়েক মাস ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দপ্তরকে ব্যবহার করেছেন’। ‘ইউক্রেনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রেসিডেন্ট পদে পুন-নির্বাচনের প্রচারণায় সহায়ক হতো, এমন দুইটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্তের স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করেছেন’। ‘প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন যে, নতুন নির্বাচিত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদামির জেলেনস্কি প্রকাশে তার (ডোনাল্ড ট্রাম্পের) রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করার ঘোষণা করবেন। সেই সঙ্গে লজ্জাজনক একটি বার্তা দেয়া হবে যে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া নয়, ইউক্রেন হস্তক্ষেপ করেছিল।’ ‘অসদাচরণের প্রমাণ অত্যন্ত ‘প্রবল’ এবং কংগ্রেসের কাজে বাধা দেয়ার ক্ষেত্রে এমন প্রমাণ মিলেছে,’ বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
যারা দুই সপ্তাহ আগে ইমপিচমেন্ট শুনানিতে অ্যাডাম স্কিফের র সমাপনী বক্তব্য শুনেছেন, তারা হয়তো এই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ দেখে খুব একটা অবাক হবেন না। তবে তিনশো পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনের মধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এটিএন্ডটি কমিটির তদন্তে রুডি জুলিয়ানির মোবাইল ফোন রেকর্ড সরবরাহ করেছে। এর মাধ্যমে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবীর ব্যাপক যোগাযোগ ও তার সময় সম্পর্কে নতুন করে জানা যাচ্ছে। এ বছরের এপ্রিল থেকে শুরু করে রুডি জুলিয়ানি হোয়াইট হাউজের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে অনেকবার টেলিফোনে আলাপ করেছেন, যাদের মধ্যে বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বিষয়ক দপ্তরের কর্মকর্তারা রয়েছেন, যে সরকারি এজেন্সি ইউক্রেনের জন্য কংগ্রেসের বরাদ্দ করা সামরিক সহায়তা স্থগিত করার কাজটি করেছে।
যতদিন পর্যন্ত এসব তথ্য জানা যায়নি, ততদিন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টে পক্ষের অনেকের মধ্যে একটি বিতর্ক চলছিল যে, জুলিয়ানি হোয়াইট হাউজের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের স্বতন্ত্রভাবে পরিচালনা করছিলেন। বেশ কয়েকজন সাক্ষী, যাদের মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মার্কিন রাষ্ট্রদূত গর্ডন সোন্ডল্যান্ড সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, প্রেসিডেন্টের কথা বলে জুলিয়ানি তাদের সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন যেন ইউক্রেনের ওপর চাপ দেয়া হয়, যাতে তারা তদন্ত শুরু করে, যা ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিকভাবে সুবিধা এনে দেবে। এখন জুলিয়ানি এবং হোয়াইট হাউজের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারটি আরো পরিষ্কার হলো।
পরে কী হতে যাচ্ছে?
প্রতিবেদনটি অনুমোদন করা এবং কংগ্রেসের বিচার বিভাগীয় কমিটিতে পাঠানো হবে কিনা, সেই প্রসঙ্গে ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে যে ভোটাভুটি হয়েছে, তাতে দলগতভাবেই ভোট পড়েছে, পক্ষে ১৩ আর বিপক্ষে ৯। চারজন সংবিধান বিশেষজ্ঞকে নিয়ে বিচার বিভাগীয় প্যানেলের শুনানি শুরু হবে, যারা ব্যাখ্যা করবেন যে, কীভাবে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া কাজ করবে। সেখানে ‘সততার’ অভাব রয়েছে দাবি করে ওই শুনানিতে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। অতীতে যেসব ইমপিচমেন্ট অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেখানেও ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারে বাধা দান এবং কংগ্রেসের অবমাননার মতো অভিযোগ ছিল।
বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রতিনিধি পরিষদে ইমপিচমেন্ট ইস্যুতে ভোটাভুটি করতে চায় ডেমোক্র্যাটরা, যার ফলে সামনের জানুয়ারিতে সিনেটে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
রিপাবলিকানরা কী বলছে?
খসড়া প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগেই প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকানরা তাদের নিজস্ব ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে ‘অনির্বাচিত আমলা’দের নিন্দা জানানো হয়, যারা তদন্তে সাক্ষ্য দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, তারা ‘মৌলিকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধরন, বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন’। ওই প্রতিবেদনে ডেমোক্র্যাটদের অভিযুক্ত করে বলা হয়, তারা ‘আমেরিকান জনগণের ইচ্ছাকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে’ এবং দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই তারা প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে। ‘ডেমোক্র্যাট কোনো সাক্ষীই ঘুষ, চাঁদাবাজি ও অন্য কোনো ধরণের অপকর্মের প্রমাণ দিতে পারেনি,’ বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব অপরাধ কোনো প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ক্ষেত্রে সংবিধানে রয়েছে।
তবে রিপাবলিকানদের এসব দাবি নাকচ করে দিয়ে হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম স্কিফ বলেছেন, ‘এটা (রিপাবলিকানদের প্রতিবেদন) শুধুমাত্র একজন দর্শকের জন্যই করা হয়েছে’ যিনি হলেন ট্রাম্প এবং তার বিরুদ্ধে আনা অসংখ্য অভিযোগ অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
লন্ডনে নেটো জোটের সত্তরতম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সময় মি. ট্রাম্প অ্যাডাম স্কিফের নাম ধরে সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি হচ্ছেন একজন ‘উন্মাদ’, ‘খুব অসুস্থ ব্যক্তি’ এবং ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত একজন মানুষ’।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কী?
ডেমোক্র্যাটরা বলছে, ইউক্রেনকে তদন্তে বাধ্য করার জন্য দুটি বিষয় ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। একটি হলো ইউক্রেনের জন্য চার শ’ মিলিয়ন বা ৪০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা, যার এর মধ্যেই কংগ্রেস অনুমোদন করেছে। আরেকটি হলো হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে একটি বৈঠক। তারা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মিত্র দেশের ওপর এই রাজনৈতিক চাপ দেয়ার মানে হচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার করা। দুটি তদন্তের মধ্যে প্রথমেই ট্রাম্প চাইছিলেন যেন, ইউক্রেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক প্রার্থী জো বাইডেন এবং তার ছেলে হান্টারের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে। জো বাইডেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন হান্টার ইউক্রেনের একটি এনার্জি কোম্পানির বোর্ডে যোগ দেন।
দ্বিতীয় যে তদন্ত চাইছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, সেটি হলো, ইউক্রেন যেন একটি ষড়যন্ত্র থিওরিতে সহায়তা করে, যার ফলে এটা বোঝানো হবে যে, ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়া নয়, বরং ইউক্রেন হস্তক্ষেপ করেছিল। ওই থিওরি আগেই বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বসম্মতভাবে বলে আসছে যে, ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট পার্টির ইমেইল হ্যাকিংয়ের পেছনে মস্কো রয়েছে।
ইমপিচমেন্ট কীভাবে হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টকে তার দপ্তর থেকে সরাতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক দুটি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি হলো ইমপিচমেন্ট। শুনানির পরে প্রতিনিধি পরিষদে যদি ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবটি পাস হয়, তাহলে সিনেট এ ব্যাপারে একটি বিচার কার্যক্রম গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। সিনেটে দোষী প্রমাণিত এবং প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হলে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দলই সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস হয়েছিল। তাদের একজন হচ্ছেন বিল ক্লিনটন, আরেকজন অ্যান্ড্রু জনসন। তবে তাদের কেউই সিনেটে দোষী প্রমাণিত হননি বা ক্ষমতা থেকেও সরে যেতে হয়নি। ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছিলেন আরেকজন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com