বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের দুরমুশ করে টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির ডঙ্কা বাজিয়ে দিলো কোহলির ‘টিম ইন্ডিয়া’। শুক্রবার নিজামের শহরে প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে ২০৭ রান তোলার পর অতি বড় ভারতীয় সমর্থকও হয়তো ভাবেননি, টিম ইন্ডিয়া ৮ বল বাকি থাকতেই মাত্র ৪ উইকেটে ২০৯ রান তুলে ম্যাচ এত সহজে জিতে যাবে।
কোহলির দুরন্ত ব্যাটিংয়ের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে ক্যারিবিয়ান বোলারদের যাবতীয় প্রতিরোধ। লোকেশ রাহুলের গড়ে দেয়া ভিতে জয়ের মিনার গড়েছেন কিং কোহলি। কব্জির মোচড়ে উইলিয়ামসের বলে ছক্কা হাঁকানোর পর তার অভিব্যক্তি নজর কেড়েছে দর্শকদের। ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জেতানোর পর সিংহের মতো গর্জন করেছেন ‘রান মেশিন’। ৫০ বলে তিনি ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ৬টি করে বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি উপহার দিয়েছেন তিনি। যদি তার নামের পাশে শতরান লেখা হতো, তাহলে কোহলির এই মহাকাব্যিক ইনিংস যেন পূর্ণ মর্যাদা পেত।
শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি ‘টিম ইন্ডিয়া’র। রহিত শর্মা মাত্র ৮ রানে সাজঘরে ফিরে যান। প্রারম্ভিক জড়তা কাটিয়ে দ্রুত ছন্দে ফেরেন লোকেশ রাহুল। তবে কোহলি প্রথম দিকে একটু ধরে খেলার চেষ্টা করেন। অর্ধশতরান পূর্ণ করতে লোকেশের লেগেছে ৩৭টি বল। দ্বিতীয় উইকেটে ক্যাপ্টেন কোহলির সঙ্গে তিনি সেঞ্চুরি পার্টনারশিগ গড়ে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন ভারতীয় ওপেনারটি। একটা সময় কোহলি ২৩ বল খেলে মাত্র ২৬ রান করেছিলেন। আস্কিং রেট মাথা চাড়া দিতেই চালিয়ে খেলা শুরু করে বিরাট। ৩৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ভারত অধিনায়ক। লোকেশ ৬২ রানে আউট হওয়ার পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন বিরাট। চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে আস্কিং রেট এক ধাক্কায় অনেকটাই নামিয়ে আনতে সফল হন তিনি। ঋষভ চার নম্বরে নেমে ভালোই খেলছিলেন। তাছাড়হুড়ো করতে গিয়ে তিনি ১৮ রানে আউট হয়ে যান। তখন অবশ্য ম্যাচ চলে এসেছিল ভারতের নাগালে। শ্রেয়াস মাত্র চার রান করেন।
টস জেতার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমে ব্যাট করার আহ্বান জানান ভারত অধিনায়ক। দ্বিতীয় ওভারেই লেন্ডল সিমন্সকে (২) আউট করে কোহলির মুখে হাসি ফোটান পেসার দীপক চাহার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ টি-২০ ম্যাচে ৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। শুরুতেই উইকেট তুলে নেয়ায় তাকে ঘিরে প্রত্যাশা আরো বেড়ে গিয়েছিল। যদিও তা পূরণে সম্পূর্ণ তিনি ব্যর্থ। চার ওভারে একটি উইকেটের বিনিময়ে দিয়েছেন ৫৬ রান।
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সদ্য ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলে আসা এভিন লুইস, ব্রেন্ডন কিং, শিমরন হেটমায়ারদের ব্যাটিং তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েন ভারতীয় বোলাররা। রানের গতিও বাড়ে পাল্লা দিয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে লুইস ও ব্রেন্ডন যোগ করেন ৫১ রান। অবশেষে এই জুটির পতন ঘটে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে এভিন লুইস (৪০) লেগ বিফোর হওয়ার পর। ৩১ রানে আউট হন ব্রেন্ডন কিং। একটা সময় ক্যারিবিয়ানদের রান ছিল ৩ উইকেটে ১০১। সেখান থেকে সহজেই তারা ২০৭ রানে পৌঁছে যায় শিমরন হেটমায়ার, ক্যাপ্টেন কিয়েরন পোলার্ড এবং জ্যাসন হোল্ডারের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদে। ৩৫ বলে আন্তর্জাতিক টি-২০’তে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হেটমায়ার। চতুর্থ উইকেটে পোলার্ডের সঙ্গে তোলেন ৭১ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বড় ইনিংস খাড়া করার ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী ভারতের জঘন্য ফিল্ডিং। ওয়াশিংটন সুন্দর দু’টি, রহিত ও কোহলি একটি করে ক্যাচ ফেলেছেন। সঠিক সময়ে স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল যদি দুই সেট ব্যাটসম্যান হেটমায়ার (৫৬) ও পোলার্ডকে (৩৭) না আউট করতেন, তাহলে বিপদ বাড়তে পারত কোহলি বাহিনীর। রামদিন ১১ ও হোল্ডার মাত্র ৯ বলে ২৪ রান যোগ করেন।