রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধূ¤্রজাল। তদন্ত করতে গিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিমের সদস্যরা। রুম্পাকে কে বা কারা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে, নাকি হত্যার পর তাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। মৃত্যুর আগে রুম্পা কি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, নাকি তিনি নিজেই ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন? আর যদি আত্মহত্যাই করে থাকেন তাহলে কেন করেছেন? সিদ্ধেশ্বরীর কোন ভবনের ছাদ থেকে তিনি নিচে পড়েছিলেন? ওই ভবনে তিনি কেন গিয়েছিলেন বা কে তাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল? এমনসব প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের একাধিক টিম। পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না।
ময়নাতদন্তের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওপর থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর পর লাশ ওপর থেকে পড়েছে না কি পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ দিকে রুম্পাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তার সহপাঠীরা। তাই হত্যাকারী ধর্ষকের বিচার চেয়ে গতকাল শুক্রবার মানববন্ধন করেছেন তারা।
নিহত রুম্পার চাচা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রুম্পার সাথে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি ছেলের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না বলে আমরা জানতে পেরেছি। ওই ছেলেটি কে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রুম্পা পাশের একটি ভবনে টিউশনি করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে নিজেদের শান্তিবাগের বাসার নিচে এসে তার চাচাতো ভাইকে ফোন করে বাসা থেকে একজোড়া স্যান্ডেল নিয়ে আসতে বলেন। স্যান্ডেল আনার পর ওই চাচাতো ভাইয়ের কাছে পায়ের জুতা, কানের দুল, ঘড়ি ও টাকাসহ ব্যাগ দিয়ে দেয়। যাওয়ার সময় তার মাকে বলতে বলে, ‘তার বাসায় ফিরতে দেরি হবে। নজরুল ইসলাম প্রশ্ন তুলে বলেন, রুম্পা যদি আত্মহত্যাই করবে তাহলে নিজের বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেনি কেন? নাকি কোনো ঝামেলা ছিল যার কারণে এগুলো বাসায় রেখে গিয়েছিল। ঝামেলা থাকলে সেটি কী ছিল?
রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। এজন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি সোর্সদের ইনভল্ব করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে তিনটি ভবন আছে। এগুলোর যেকোনো একটি থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছে। কারণ প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। আশাকরি শিগগিরই রুম্পার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গত বুধবার রাত পৌনে ১১টায় সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে স্টামফোর্ট ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। যে জায়গায় এ ঘটনা ঘটে তার আশপাশে বেশকিছু ছেলে ও মেয়েদের হোস্টেল রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন হবিগঞ্জ এলাকায় পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। তবে তাদের বর্তমান ঠিকানা রাজধানীর মালিবাগ শান্তিবাগ এলাকায়।