এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমবে না বলে দেড় মাস আগে জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীর এমন স্বীকারোক্তিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ হন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। রাজধানীর এক জনসভায় তিনি ঘোষণা দেন, পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে, দাম কমে যাবে। ঘোষণার চেয়ে কয়েকদিন দেরিতে হলেও বিমানে চড়ে পেঁয়াজ এসেছে। দেশে এসে পৌঁছেছে জাহাজভর্তি পেঁয়াজও। ইতোমধ্যে পাতাসহ পেঁয়াজ প্রচুর পরিমাণে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। পাওয়া যাচ্ছে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খুচরা এখনো প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। সাভাবিক কারণেই জনমনে প্রশ্নের উদয় হচ্ছে, পেঁয়াজের দাম কমবে কবে?
বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা এবং বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যাপক চাহিদা এবং অধিক মূল্য বিবেচনায় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে আগাম পেঁয়াজ তুলছেন কৃষকরা। এই পেঁয়াজ এলেও বাজারে দাম কমাতে পারেনি। উল্টো নতুন এ পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। দেশী পুরোনো পেঁয়াজের দাম কেজিতে আরও ২০ টাকা বাড়ল। তবে আমদানি করা বড় আকারের পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ওই পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ ঘাটতির কারণে দেশী পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। তবে আমদানি করা বড় আকারের পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা কম থাকায় দামও কমছে।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে দেশী পুরোনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। এ পেঁয়াজ আগের সপ্তাহে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল। দেশী মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ এতদিন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও গত দুই দিন ধরে ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজও একই হারে বেড়ে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আমদানি করা চীন, মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ রাজধানীর বাজার ও অলিগলিতে ভ্যানে বিক্রি হতে দেখা যায়। চীনা পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মিসরের পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়, যা এতদিন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ছিল।
এ দিকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে ভারত সবচেয়ে উত্তম ঠিকানা হলেও স্বয়ং ভারতও এখন পেঁয়াজ নিয়ে সঙ্কটে আছে। ভারতীয় পত্রিকার তথ্যানুযায়ী, গত বুধবার মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া বাজার, নওদার আমতলা বাজার, কলকাতাসহ বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। পেঁয়াজের ঝাঁজ মানুষকে কাঁদিয়ে ছাড়লেও দেশটির রাজ্য সরকারের গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা আশার কথা শোনাতে পারেননি। টাস্কফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, শীতে অন্যান্য সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। এ মাসে পেঁয়াজের সঙ্কট চলবে বলেই আশঙ্কা হচ্ছে। ভারতের নয়াদিল্লিতেও পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে।
পেঁয়াজের দাম কমবে বলে আশ্বস্ত করে প্রায় এক মাস আগে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে। কার্গো বিমান ভাড়া করে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। কাল-পরশু পেঁয়াজ এলে দাম কমে যাবে। তিনি বলেন, যাদের কারণে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে বা দাম বেড়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় ওঠে সেদিন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রসিকতাচ্ছলে বলেছেন, পেঁয়াজ না খেলে কী হয়? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। দুই-চার দিনের মধ্যে দাম কমবে। বাজার সহনীয় করতে ১০ হাজার মেট্টিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। যদিও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতায় হতাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর ওই সংবাদ সম্মেলনের দু’দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, এই সমস্যা আরও একমাস থাকবে। তবে মিশরের পেঁয়াজ দেশে পৌঁছলে দাম কিছু কমতে পারে।
এ দিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল মিনিকেট চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪০ টাকা, ঊনত্রিশ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও মিনিকেট চাল ৪১ থেকে ৪২ টাকা, নাজির ৫০ থেকে ৫২ টাকা, আটাশ ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা, ঊনত্রিশ ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, স্বর্ণা চাল ২৬ থেকে ২৭ টাকা ছিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা পণ্য শুকনা মরিচের দাম কেজিতে গড়ে ৫৫ টাকা এবং হলুদের দাম গড়ে ৩৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ মানভেদে ২২০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল। এখন হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায়, যা আগে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা ছিল। গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি চীনা রসুন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা ও দেশী রসুন ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশী পুরোনো আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও নতুন আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং আমদানি করা আদায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বাজারে গতকাল শিমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপির পিস ২৫ থেকে ৪০ টাকা, পাতাকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকা, মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা দামে। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস। কাঁচা টমেটোর কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। পাকা টমেটোর দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা। বেগুনের কেজি ৬০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।