আগামী ১২ ডিসেম্বরের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আর কোনো জেলা সম্মেলন হচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি জেলাগুলোর সম্মেলন দলের জাতীয় সম্মেলনের পর অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জাতীয় সম্মেলন সফল করতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত উপকমিটিগুলো দফা দফায় বৈঠক করে কর্মপন্থা চূড়ান্ত করছে। সময়ের সাথে সাথে সেই ব্যস্ততা আরো বেড়ে যাবে। এর মধ্যে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস রয়েছে। এই দুই দিন সঙ্গত কারণেই সম্মেলন করা যাচ্ছে না। ফলে ১২ ডিসেম্বরের পর আর জেলা সম্মেলন করা সম্ভব নয়। সে জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ১২ ডিসেম্বরের পর আর কোনো জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ না করতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।
এর আগে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সবপর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করে তা তালিকা আকারে কেন্দ্রে পাঠাতে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোর সম্মেলন শেষ করা হয়নি।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে গত মেয়াদে (২০১২ থেকে ২০১৬ সালে) ৫৮টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে বর্তমান কমিটি। এ কমিটির মেয়াদে শেষ দিকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে শুধু একটিতে (২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজার) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাকি প্রায় সবগুলোর মেয়াদই ছিল উত্তীর্ণ। তবে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা এলে সেপ্টেম্বরের পর থেকেই তৃণমূল সম্মেলনে গতি আসে।
ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা উত্তর, চট্টগ্রাম উত্তর, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, সিলেট জেলা ও মহানগর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া ও বরিশাল জেলা ও মহানগরসহ অন্তত ২৫টিরও বেশি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মিলিয়ে ৩০টি জেলা সম্মেলন শেষ করার টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনার) বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তৃণমূলের সম্মেলন করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সম্মেলনের পর বাকি থাকা জেলাগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোর সম্মেলন হওয়াটা ভালো। তবে বিভিন্ন কারণে এ মেয়াদে সবগুলো জেলার সম্মেলন শেষ করাটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আর জাতীয় সম্মেলনের আগেই যেসবগুলো জেলা সম্মেলন শেষ করতে হবে এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করছি জাতীয় সম্মেলনের আগেই আমরা অন্তত ৩০টি জেলার সম্মেলন শেষ করতে পারব। বাকিগুলোর সম্মেলন জাতীয় সম্মেলনের পরে হবে।’