বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান আইনজীবীকে ‘কুপিয়ে হত্যা করল’ ইসকন সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল বন্ধ ঘোষণা অহিংস গণঅভ্যুত্থানের আহ্বায়কসহ ১৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ চিন্ময়কে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে ভারতের বিবৃতি মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

হেগে আজ রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৪০ বার

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানিতে মিয়ানমার যাতে মিথ্যা তথ্য দিতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার বাদী গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে’তে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানিতে বাদী গাম্বিয়াকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সোমবার দ্য হেগের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসও সেই শুনানিতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করবে।

১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার তিন দিনের এই শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষে এই শুনানির জন্য অং সান সু চি নিজেই দ্য হেগে গেছেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত থাকবেন আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানিতে। এই দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তিনজন প্রতিনিধিও রয়েছেন।
আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অং সান সুচি গেছেন দ্য হেগে। কূটনীতিক ছাড়াও প্রতিনিধি দলে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে। ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসি’র পক্ষে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে দ্যা হেগে’র আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাটি করেছে গত ১১ নভেম্বর। এখন এর শুনানিতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ কিভাবে সহযোগিতা করবে?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার যাতে মিথ্যা তথ্য দিতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে তথ্য প্রমাণ সহ প্রতিনিধি দল শুনানি উপস্থিত থাকবে।

“গাম্বিয়া মামলাটি করেছে ওআইসি’র পক্ষ থেকে। যেহেতু রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেজন্য ওরা যদি কোনো ধরণের তথ্য চায়, আমরা গাম্বিয়াকে সাহায্য করবো।”

“কেননা অনেক সময় মিয়ানমার অনেক মিথ্যা তথ্য দেয়। মনে করেন, মিয়ানমার বলে ফেললো যে, আমরা বাংলাদেশের সাথে অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফেলেছি এবং আমরা ওদের নিয়ে যাব। এমন কথা বললে, তখন আমরা বলবো যে, আমরা চুক্তি করেছি। আমরা একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছি যে, আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত হলে তারপার আমরা পাঠাবো। এনিয়ে তারা আরো কিছু বলতে চাইলে তখন আমরা আমাদের ডকুমেন্ট দেখিয়ে দেবো। এধরণের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের লোক গেছে।”

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আদালতে রোহিঙ্গাদের আসার প্রেক্ষাপট নিয়েই বেশি বিতর্ক হতে পারে, সে ব্যাপারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বক্তব্য এবং তথ্য প্রমাণ প্রস্তুত রেখেছে বাংলাদেশ।

জাতিসঙ্ঘ সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত এ সর্ম্পকিত কমিশনের রিপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট গাম্বিয়াকে সরবরাহ করবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের জন্য লাভ নাকি লোকসান

মিয়ানমারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সেখান থেকে পালিয়ে প্রায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ২০১৭ সালে।

তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে তাতে এখনও সফল হতে পারেনি।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবেও একটা চাপ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।

কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ কৌশল হিসেবে ইসলামী দেশগুলোর জোটে সিদ্ধান্ত নিয়ে গাম্বিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নিয়েছে।

এই আদালতে শুনানিতে বাংলাদেশের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। সেজন্য বাংলাদেশ তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত থেকে শুনানিতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলছিলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের সাথে রাখতে হবে। সেই প্রেক্ষাপটে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তথ্য প্রমাণ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গাম্বিয়াকে সহযোগিতার বিষয়টি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন।

“আমি মনে করি, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে আলাদা যে আলোচনা হচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক আদালতের বিষয়টি খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সাহায্যও প্রয়োজন। ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাহায্য না করলে তারাও বাংলাদেশের সাথে থাকবে না। সেজন্য সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে গাম্বিয়াকে বাংলাদেশ সাহায্য করলে মামলার পক্ষে যথাযথ তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।”

বাংলাদেশ সরকার কী বলছে?

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানি করবেন অং সান সু চি নিজে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ঘটনা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অং সান সু চি’র মনোভাবের পরিবর্তন হবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য সম্মানজনক সমাধান হবে বলে বাংলাদেশ এখনও আশা করছে।

তবে এখন এই বিচারের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে এবং সেটা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্ত্রী মি: মোমেন মনে করেন।

“জবাবদিহি করা না হলে এধরণের জাতিগত নিধন এবং গণহত্যা বার বার হবে। আগামীতে এমন যেন আর না হয়, সেজন্য এখান থেকে শিক্ষা নেয়ার বিষয় আসবে। আমরাও রোহিঙ্গাদের বলতে পারবো যে, বিশ্বের আদালত তোমাদের প্রটেকশন দিতে বলেছে। সুতরা্ং তোমরা ফিরে যাও।”

এদিকে এই শুনানির আগে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্বব্যাপী একটা প্রচারণা শুরু করেছে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনসহ বিভিন্ন দেশে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠন।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com