যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চিঠি পেলে জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন আলোচিত আইনজীবী ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। গতকাল শনিবার রাতে অব্যাহতির কারণ জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘চিঠি পাওয়ার পর জবাব দেব।’
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ তাকে কমিটিতে নিয়েছেন জানিয়ে সুমন বলেন, ‘তিনি যদি মনে করেন আমাকে বাদ দিলে দলের ভালো হবে, তাহলে সাংগঠনিক এ সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’ এ সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আজীবন দলের ভালোর জন্য কাজ করে যাওয়ার কথা জানান ব্যারিস্টার সুমন।
জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে অযাচিত কিছু বলেননি বলে দাবি করে ব্যারিস্টার সুমন জানান, থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া ঠিক হয়নি বলে ফেসবুক লাইভ করেছিলেন তিনি।
যে কারণে যুবলীগের পদ হারালেন ব্যারিস্টার সুমন
জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি দলীয় কর্মসূচিতে স্লোগান দিয়েছিলেন সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন। ‘শুভ শুভ দিন শেখ কামালের জন্মদিন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ ওই স্লোগানের ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
প্রকাশ্যে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে স্লোগান দিয়ে সরকারি বিধিমালা ১৯৭৯ লঙ্ঘন করেছেন এমন কথাও বলেন কেউ কেউ। যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সুমন এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেন। যে কারণে তাকে যুবলীগের পদ থেকে অব্যাহতি পেতে হলো।
পরে ৬ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে ওসির এ স্লোগানের নিন্দা জানান যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সুমন। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক স্লোগান ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা শরীয়তপুরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেনের তীব্র সমালোচনা করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
লাইভে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘শেখ কামাল সাহেবের জন্মদিনে শরীয়তপুরের পালং থানার ওসি আক্তার হোসেনের আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই জিনিসটা দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে দু-একটা কথা বলা দরকার। আওয়ামী লীগের স্লোগান দেওয়ার মানুষ কী এতই কম যে একজন ওসি সাহেবের এই স্লোগান দিতে হবে। আমি খেয়াল করে দেখলাম যে উনি বলছেন আবেগ থেকেই স্লোগান দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, আপনি যখন সরকারি দায়িত্বে থাকবেন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আবেগ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে পানিশমেন্ট নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু তিনি এখনো ওই জায়গাতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন।’
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে দলের স্লোগানের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানোয় তাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগেও ‘অতিবিপ্লবী’ আচরণের জন্য ব্যারিস্টার সুমনকে শোকজ করা হয়েছিল। তবে সেই শোকজের ‘সঠিক’ জবাব সুমন দিতে পারেননি বলে যুবলীগ থেকে জানানো হয়।
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর যুবলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন সুমন।