২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার আগেই সম্ভাব্য এ হামলার বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সতর্ক করেছিলেন তৎকালীন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ২১ আগস্ট নিয়ে ‘স্মৃতির পাতা থেকে জানা অজানা দুই একটি কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ তথ্য দেন।
সম্ভাব্য হামলার খবর শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে সাঈদ খোকন বলেন, ‘সিলেটে সেই সময়ের ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলা হয়। দেশে একটা বিভীষিকাময় পরিবেশ চলছিল। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের আহ্বান করে ২১ আগস্ট। তার দুদিন আগেই আব্বা (সেই সময়ের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) একটি তথ্য নেত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে বলেন, বার্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বার্তাটি আমার নেত্রীকে পৌঁছে দেই।’
তিনি বলেন, ‘নেত্রী সাংগঠনিক সফর শেষে সুধা সদনে বিশ্রাম করছিলেন। কারও সঙ্গে তিনি দেখা করছিলেন না। রাত তখন ১০টা। আমি সুধা সদনে উপস্থিত হই। সুধা সদনের দোতলায় দেখা হলো। বললাম, সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে একটি আশঙ্কাজনক বার্তা দিতে আব্বা পাঠিয়েছেন। একটি হামলা চূড়ান্ত হয়েছে। সূত্র মতে, এই হামলাকারী ঢাকার ভেতরে চলে এসেছে। তাদের হামলার স্থান- সুধা সদনের এই বাসা, আপনার যাতায়াতের পথ ও সেখানে যদি না হয়, তাহলে আমাদের অনুষ্ঠানে (সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশস্থল)। আব্বা বলেছেন, যেভাবে হোক আপনি আমার সঙ্গে চলেন। আমাদের বাসায় চলেন। এখানে আপনি একেবারেই নিরাপদ নন। এখান থেকে সরে যেতে হবে।’
সাঈদ খোকন বলেন, ‘নেত্রীকে বললাম, আপনারও অনেক সূত্র থাকে, নেটওয়ার্ক থাকে, আপনি কনফার্ম করে নেন বিষয়টি। তবে এটা আপনার জন্য নিরাপদ হচ্ছে না। যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘তখন জবাবে নেত্রী (শেখ হাসিনা) অনেকক্ষণ চুপ থেকে পরে আমাকে বললেন, এত ভয় পেলে হবে না। এত ভয় পেলে কী রাজনীতি হয়? হেসে বললেন। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য নিজের প্রতি ন্যূনতম মায়া দেখিনি তার মধ্যে। অনেক অনুরোধ করলাম, ওখান থেকে চলে আসতে। বললেন, তুই যা, চিন্তা করিস না। আল্লাহ ভরসা। যা হওয়ার হবে। রাত হয়েছে, বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমা, এতো ভয় পেলে রাজনীতি হয় না। দেখা যাবে কী হয়!’
সাঈদ খোকন আরও বলেন, ‘এরপর আমি নিচে নেমে আসছি। মন চাইছিল না যেতে। তাই সেখানে অবস্থান করি। সকালে বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করি। দুপুরে উঠে গিয়ে পরদিনের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের প্রস্তুতি নিই।’
এ সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, ‘যে লোকটি এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, আমাদের রক্ত বইয়ে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে, সেই লন্ডনে আয়েশে জীবনযাপন করছে। এটা কীভাবে সম্ভব? একজন নিহতের সন্তান হিসেবে ও একজন আক্রান্ত হিসেবে দাবি করি, ২১ আগস্ট ট্রাজেডির মূলহোতা তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে এনে তার রায় পুনর্বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে এভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে কেউ সন্ত্রাস করতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করে দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করা, সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সৃষ্টি করা। আল্লাহর রহমতে নেত্রী বেঁচে গিয়েছেন। আল্লাহ তাকে দিয়ে কিছু করাবেন বলেই তাকে বাঁচিয়েছেন।’
স্মৃতিচারণ করে সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমার প্রয়াত পিতা তার জীবন দিয়ে নেত্রীকে বাঁচিয়েছেন। একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ছিল। আমরা বাবা-ছেলে স্পটে ছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই বিপদে কী হয়? বাবা ছেলের কথা চিন্তা করে, ছেলে বাবার কথা। আর আমার বাবা তো একবারও আমার কথা চিন্তা করেননি। তিনি চিন্তা করেছেন তার নেত্রীর কথা। আমিও চিন্তা করেছি, নেত্রী কোথায়?’