আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। গত সম্মেলন বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে করা হলেও এবারের সম্মেলন অনেকটাই সাদামাটাভাবে করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। ২০২০ সালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। সে জন্য এবার কোনো বিদেশী অতিথিকেও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। সাজসজ্জা ও আলোর ঝলকানি সীমাবদ্ধ থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যেই।
এ দিকে জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল সম্মেলন শেষ করার রেওয়াজ থাকলেও এবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৭০ ভাগেরও বেশি জেলার সম্মেলন হচ্ছে না। দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ৩০টি জেলার সম্মেলন আয়োজনের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে কেন্দ্র। ইতোমধ্যে অন্তত ২৫টি জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে।
এর আগে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সবপর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করে তা তালিকা আকারে কেন্দ্রে পাঠাতে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোর সম্মেলন শেষ করা হয়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমরা জেলাপর্যায়ে অনেকগুলো কমিটির কাজ শেষ করেছি। আরো কতগুলো বাকি রয়েছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া, ২৫-৩০টা হয়ে যাবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাকিগুলো পরে করা হবে।’
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত মেয়াদে (২০১২ থেকে ২০১৬ সালে) জাতীয় সম্মেলনের আগে ৫৮টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে বর্তমান কমিটি। এ কমিটির মেয়াদের শেষ দিকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু একটিতে (২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজার) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাকি প্রায় সবগুলোর মেয়াদই ছিল উত্তীর্ণ। তবে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা এলে সেপ্টেম্বরের পর থেকেই তৃণমূল সম্মেলনে গতি আসে। ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা উত্তর, চট্টগ্রাম উত্তর, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, সিলেট জেলা ও মহানগর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা জেলা ও মহানগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া এবং বরিশাল জেলা ও মহানগরসহ অন্তত ২৫টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মিলিয়ে ৩০টি জেলা সম্মেলন শেষ করার টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি প্রায় ৪৮টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন এ কমিটির মেয়াদে আর হচ্ছে না। জাতীয় সম্মেলনের পর নতুন কমিটির অধীনে এসব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোর সম্মেলন হওয়াটা ভালো। তবে বিভিন্ন কারণে এ মেয়াদে সবগুলো জেলার সম্মেলন শেষ করাটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আর জাতীয় সম্মেলনের আগেই যে সবগুলো জেলা সম্মেলন শেষ করতে হবে এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করছি জাতীয় সম্মেলনের আগেই অন্তত ৩০টি জেলার সম্মেলন শেষ করতে পারব। বাকিগুলোর জাতীয় সম্মেলনের পরে হবে।’
দলের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনার) বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তৃণমূলের সম্মেলন করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সম্মেলনের পর বাকি থাকা জেলাগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’