রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ অপরাহ্ন

মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১
  • ১৭৭ বার

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন। জীবন ও জীবিকার জন্য অর্থ উপার্জন করতে হবে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এটি মানুষকে তখনই প্রশ্নবিদ্ধ করে যখন সে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নেমে অর্থের পিছু হন্যে হয়ে ছোটে আর মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দেয়। তখন তার কাছে নীতি-আদর্শ সবই মূল্যহীন হয়ে পড়ে। অর্থই হয় তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এ জন্য যত নিচে নামার প্রয়োজন সে তত নিচে নামতেও দ্বিধা করে না। একপর্যায়ে ন্যায়-অন্যায়ের বিচারিক জ্ঞান সে হারিয়ে ফেলে। অর্থ তার ঘুম কেড়ে নেয়; চিন্তা বাড়িয়ে দেয়; একের পর এক সম্পদের পাহাড় গড়তে সে মরিয়া হয়ে উঠে; সে অর্থাসক্ত হয়ে পড়ে; মানুষ হয়ে মানুষের অধিকার ভুলে যায়; ভুলে যায় সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা।

যে মানুষের ওপর জুলুম করে সে পরিবার-পরিজনের জন্য সম্পদ গড়ল। তারা তো তার পাপের বিন্দুমাত্র অংশীদার হবে না। দায় স্বীকার করবে না। জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে বাঁচাতেও পারবে না। সে যে অন্যায় করল তার শাস্তি কেবল তাকেই ভোগ করতে হবে। কারণ মজলুমের দোয়া কখনো বিফলে যায় না। তাহলে মানুষ হিসেবে সে কি এসব ভাববে না? নাকি মনে করবে, পাপ করার পরে একসময় অর্জিত সম্পদ থেকে কিছু অংশ দ্বীনের বা ধর্মের পথে ব্যয় করলে সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে। হজ করব। কোরবানি করব। জাকাত দেবো। মসজিদ বানাব। মানুষকে সাহায্য করব। তাতেই সমস্ত পাপ খতম হয়ে যাবে। সে নিষ্পাপ। এমন মিথ্যে সান্ত্বনা দিয়ে মনকে বুঝিয়ো না।

তুমি নিশ্চিত থাকো, যে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পুতপবিত্র, তিনি তোমার এই নিকৃষ্ট জিনিস কখনো গ্রহণ করবেন না। তার জাত বা সত্তা ও বৈশিষ্ট্য বা সিফাতের সাথে এটি কখনোই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তুমি মানুষকে বোঝাতে পারো। স্বার্থান্ধকে মুগ্ধ করতে পারো, কিন্তু আল্লাহকে প্রলুব্ধ করতে পারবে না। কারণ তোমার মতো অভাবী তিনি নন। নন তিনি নিঃস্ব। তিনি দয়ালু-দাতা মেহেরবান। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

দায়িত্ব, পদমর্যাদা আল্লাহর দেয়া নিয়ামত। হে মানুষ! তুমি কি ভেবে দেখেছ, এটা কার জন্য নিয়ামত। ওই ব্যক্তির জন্য যে নিজ দায়িত্বকে আমানত মনে করে নিষ্ঠার সাথে তার কর্তব্য পালন করে থাকে। মানুষের কষ্টের কারণ না হয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটায়। পণ্যের জোগান থাকা সত্তে¡ও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে না। অতি মুনাফার লোভে মানুষকে হয়রান করে না। চিকিৎসার নামে মানুষকে অসহায় করে দেয় না। শিক্ষার নামে মানুষের মনে অশিক্ষার বীজ রোপণ করে না। বরং তাদেরকে সৎ সুন্দর ও ভালো মানুষ হতে প্রেরণা জোগায়।

ভালো মানুষের কদর এখনো সমাজে কমেনি। বরং এই মানুষগুলোকেই সবাই মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। এরা আছে বলেই সমাজ হয়েছে ছন্দময়। জীবন পেয়েছে গতি। আজ যারা সমাজ বিনির্মাণে সাহসী মানুষ হতে চায়, পদে পদে তাদের নানা লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। তবুও তারা পিছিয়ে নয়, এগিয়ে চলেছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম ভালো চিন্তা করতে চায়। তারা কাজ করে দেখাতে চায়। তাদের সেই শক্তি ও উদ্যম কাজে লাগাতে হবে। তাদের সৎ সাহসকে বিকশিত করার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে একদিন এই সমাজ থেকে সমস্ত আবর্জনা সাফ হয়ে যাবে। তৈরি হবে একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ। যেখানে নতুন প্রজন্ম মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারবে। দম বন্ধ হয়ে আসা পরিবেশে সে আর বেড়ে উঠবে না।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com