শাহরুখ খান। দুই শব্দের একটি নাম। কিন্তু এই নামের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। জীবনে প্রায় সব কিছুই অর্জন করেছে এই নাম। তবে সাফল্য এত সহজে ধরা দেয়নি। এ অবস্থানে আসতে পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়। জীবনের সঙ্গে লড়াই করে হয়েছেন বলিউড বাদশাহ। কিন্তু হঠাৎ করেই তার জীবনে এমন খারাপ সময় আসবে- কল্পনাও করেননি শাহরুখ। প্রায় এক মাস দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। ছেলে আরিয়ান খান মাদককা-ে গ্রেপ্তারের পর পাল্টে যায় তার নিত্য রুটিন। এর মধ্যে আজ তার জন্মদিন। কয়েক দিন আগে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া ছেলেকে নিয়ে কাটাবেন এবারের দিনটি। লিখেছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
মন খারাপের সময়গুলো
অর্থ, প্রতিপত্তি কিংবা ক্ষমতা- সবই ছিল তার। কিন্তু ছেলে জেলে যাওয়ায় এ সবই যেন অর্থহীন লেগেছে শাহরুখের কাছে। বাইরে থেকে শান্ত থাকলেও ভেতরে ভেতরে কষ্টে পুড়েছেন। শাহরুখের এক প্রযোজক বন্ধু এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এমনিতেই ও প্রতিরাতে কিছু ঘণ্টা ঘুমায়। কিন্তু ছেলের চিন্তায় সেটাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যত বড় সুপারস্টার হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সে অসহায় এক বাবা। ছেলের জন্য ওর হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছিল।’
ক্যারিয়ারে প্রভাব
মাদককা-ে ছেলে গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রভাব পড়েছে শাহরুখের ক্যারিয়ারেও। তিনটা ছবির শুটিং চলছিল। সব কটির শুটিংই বন্ধ রাখতে হয়। শিডিউল করা এসব ছবি স্থগিত হওয়ায় পরবর্তী সময় শুটিংয়ের জন্য বাড়বে খরচ। অন্যদিকে ২০১৭ থেকে বাইজুসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শাহরুখ। আরিয়ান জেলে যাওয়ার পর কিং খানের সেই বিজ্ঞাপনগুলোর প্রচার বন্ধ করে দেয় বেঙ্গালুরুভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। বাইজুসের সঙ্গে শাহরুখের বার্ষিক তিন থেকে চার কোটি রুপির চুক্তি আছে।
দুঃসময়ে পাশে ছিলেন যারা
ছেলের বিপদে শাহরুখের পাশে দাঁড়িয়েছেন বহু বছরের বন্ধু, সহযাত্রীরা। বাবা সেলিম খানকে নিয়ে মান্নাতে ছুটে যান সুপারস্টার সালমান খান। সান্ত¡না দিতে শাহরুখ-গৌরীর সঙ্গে দেখা করেন প্রযোজক আলভিরা খানও। শাহরুখপত্নীর বন্ধু মাহীপ কাপুর, সীমা খানকে মান্নাতের বাইরে দেখা গেছে। এ ছাড়া ফোন করেছেন কাজল, রানী মুখার্জি, দীপিকা পাড়ুকোন, করণ জোহর, রোহিত শেঠি, আনন্দ এল রাই, আদিত্য চোপড়াসহ অনেকে। টুইটার ছাড়া অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে শাহরুখের বিপদে পাশে দাঁড়ান।
অবশেষে জয়ের হাসি
ছেলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংবাদমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কথাই বলেননি শাহরুখ। প্রথমবারের মতো তিনি প্রকাশ্যে আসেন আরিয়ানের জামিন মঞ্জুরের পর। আর্থার রোড জেলের বাইরে তার মুখে দেখা যায় জয়ের হাসি। যে হাসি যুদ্ধজয়ের! সাদা টি-শার্ট এবং কালো প্যান্টে শাহরুখের একঝলক দেখে আপ্লুত হন ভক্তরা। টুইটারে সে ছবি দেখে প্রিয় তারকার সুপারহিট ছবির সংলাপ দেন অনেকেই, ‘হারকে জিতনেবালো কো বাজিগর কাহতে হ্যায় (হেরেও জিতে যাওয়াদের বলে বাজিগর)।’
ফিরে দেখা জীবন
১৯৬৫ সালের আজকের দিনে দিল্লির এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ। বাবা তাজ মোহাম্মদ খান ও মা লতিফ ফাতিমা খান। আশির দশকে টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় দিয়ে শাহরুখ ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে ফৌজি টেলিভিশন সিরিয়ালে কমান্ডো অভিমন্যু রাই চরিত্রে একজন নতুন অভিনেতা হিসেবে সুযোগ পান। পরে ১৯৮৯ সালে ‘সার্কাস’ সিরিয়ালে তিনি মোটামুটি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন, যেটি ছিল একজন সাধারণ সার্কাস অভিনেতার জীবন নিয়ে রচিত। একই বছর অভিনয় করেন অরুন্ধতী রায়ের ‘ইন হুইচ অ্যানি গিভস ইট দোজ ওয়ানস’ টেলিভিশন চলচ্চিত্রে। তবে পিতা-মাতার মৃত্যুর পর নতুন জীবন শুরু করার জন্য শাহরুখ নয়াদিল্লি ছেড়ে মুম্বাই পাড়ি জমান। ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবি দিয়ে তার বলিউডে অভিষেক ঘটে। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
জনপ্রিয় যত কাজ
‘বাজিগর’, ‘ডর’, ‘আনজাম’, ‘করণ অর্জুন’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘কয়লা’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’, ‘জোশ’, ‘মোহাব্বাতে’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘দেবদাস’, ‘কাল হো না হো’, ‘ম্যায় হুয় না’, ‘বীর জারা’, ‘স্বদেশ’, ‘ডন’, ‘ওম শান্তি ওম, ‘রাব নে বানা দে জুড়ি’র মতো অসংখ্য সুপারডুপার হিট ছবি দিয়ে স্থান করে নিয়েছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৪ বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্মাননাও।
কী নামে ডাকব তাকে
কখনো ‘বলিউড বাদশাহ’, কখনো ‘কিং অব রোমান্স’, কখনো ‘বাজিগর’, কখনো আবার ‘ডন’- কী নামে ডাকব তাকে! তার নামের আগে এমন অনেক বিশেষণ যুক্ত হয়েছে নানান সময়।
প্রেম ও বিয়ে
একই স্কুলে পড়াশোনা করলেও শাহরুখ-গৌরীর মাঝে খুব বেশি পরিচয় ছিল না। পরিচয় হলো এক অনুষ্ঠানে আবার দেখা হওয়ার পর। ধীরে ধীরে গৌরীর সঙ্গে বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা হয়। ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর হিন্দু রীতি অনুযায়ী শাহরুখের হাতে মেয়েকে তুলে দেন গৌরীর বাবা-মা। শাহরুখ-গৌরী দম্পতির তিন সন্তান- আরিয়ান খান, সুহানা খান ও আবরাম খান।