শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

রাজারবাগ পীরের অবৈধ সম্পদের তদন্তে দুদক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১
  • ১০২ বার

ধর্মকে পুঁজি করে অনিয়মের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭ হাজার একর জমি দখলসহ নানা অভিযোগে রাজারবাগ পীর দিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যত দ্রুত সম্ভব অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করেছে দুদক।

গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া এবং অনয়িমের মাধ্যমে ৭ হাজার একর জমি দখলসহ নানা অভিযোগে রাজারবাগ পীর দিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দুদক তিন সদস্যের কমিটি করে অনুসন্ধান শুরু করেছে। কমিটিকে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ নভেম্বরে মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

দুদকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দুদকের অনুসন্ধান কমিটি প্রয়োজনে পীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কমিটি চাইলে তাকে দুদকে তলব করা যেতে পারে কিংবা তিনি যেখানে থাকেন, সেখানে গিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। এটি অনুসন্ধান কমিটি ঠিক করবে। কমিটি যদি মনে করে তিনি বিদেশে চলে যেতে পারেন, তা হলে আদালতের আদেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পদক্ষেপও নেওয়া যেতে পারে। অনুসন্ধান কমিটি গঠনের

বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্মের নামে ধোঁকা দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭ হাজার একর জমি ক্রয় ও অবৈধভাবে রবার বাগান দখলসহ অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযোগটি অনুসন্ধানে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে অনুসন্ধান করে আগামী ৩০ নভেম্বরে মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানের সম্পদের অনুসন্ধান করার জন্য আদালতের একটি নির্দেশনা আছে। আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধান টিম অভিযোগের বিষয়ে যে কোনো সময় পীর দিল্লুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব করবে। অনুসন্ধানকালে তিনি যেন বিদেশ গমণ করতে না পারেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞাও আসছে।

দুদকের টেবিলে থাকা অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলো সারাদেশে গড়ে তুলেছে হয়রানিমূলক মামলা সিন্ডিকেট। কারও জমিজমা ও সম্পদ হাতিয়ে নিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে ঠুকে দেন মামলা। পীর সিন্ডিকেট সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় সাত হাজার একর জমি ও রবার বাগান অবৈধভাবে দখল করেছে। এ সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে শত শত মানুষ। বিনা দোষে জেল খটেছেন অনেকেই। সিন্ডিকেটের আচরণ সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেন। অভিযোগ গড়ায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে। তদন্তে নেমে মানবাধিকার কমিশনও এর সত্যতা পায়।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, রিট আবেদনের সংযুক্তি থেকে প্রতীয়মান যে, ওই কথিত পীর ও তার দরবারের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় সাত হাজার একর জমি, রবার বাগান অবৈধ দখলে আছে। উপরোক্ত সংযুক্তিগুলো বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে তদন্ত করতে বলা হয় হাইকোর্টের আদেশে।

আদেশে আরও বলা হয়, রিট পিটিশনের সংযুক্তি অনুযায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে প্রতিয়মাণ হয় যে, ওই কমিটি সাতটি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো- রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে যেসব সম্পদ রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করে আয়ের উৎস ও রাজস্ব প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। সাধারণ মানুষকে যেন ধর্মের নামে ধোঁকা দিতে না পারে এবং নিরীহ মানুষের অর্থসম্পদ যেন হয়রানিমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাতিয়ে নিতে না পারে, তার উদ্যোগ নেওয়া। পীর দিল্লুর রহমানের মূল আস্তানাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শাখা কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া। একই সঙ্গে তার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন ‘উলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাত’ এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রচারিত সংবাদপত্র ‘আল বাইয়্যিনাত ও আল ইহসান’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে সুপারিশ করা হয় কমিশন থেকে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পীর সিন্ডিকেটের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে গত ৭ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন রাজধানীর শান্তিবাগের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চন। তার বিরুদ্ধে পীর সিন্ডিকেটের করা ৪৯টি মিথ্যা মামলার বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পীর সিন্ডিকেটের বিষয়ে সিআইডির দেওয়া তথ্য দেখে রীতিমতো বিস্মিত হন হাইকোর্ট। এর পর আরও ৮ ভুক্তভোগী বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। সবার প্রায় একই অভিযোগ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com