গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে রোডের পাশেই ‘মেয়র হাউজ’। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সেই বাড়িতে ভিড় লেগে থাকত। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হাওয়ায় সেই বাড়িটিতে চলছে সুনসান নীরবতা। গতকাল রবিবারও মেয়র জাহাঙ্গীর নিজ বাড়িতেই অবস্থান করেন, দেখা করেননি কারও সঙ্গেই। এর মধ্যে সন্ধ্যায় সিটি মেয়র গ্রেপ্তার হয়েছেন- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গুঞ্জন ওঠে পাড়ার চায়ের দোকানগুলোতেও। মেয়রের বাড়িতে রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, চিরচেনা সেই গাড়ির সারি নেই বাসার সামনে। তিন-চারজন নিরাপত্তাকর্মী বসে আছেন কেবল। বাড়ির নিচতলায় অফিস কক্ষে বসে গল্প করছিলেন জাহাঙ্গীরের কয়েকজন অনুসারী। তবে যারা মেয়রের ড্রয়িংরুম, খাবার টেবিলে বসেও খোশগল্প করতেন- এমন অনেক সিনিয়র নেতা মেয়রকেই এড়িয়ে চলছেন নানা কারণে। কথা প্রসঙ্গে এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘দুই-তিন দিন আগেও এই সময়ে বাড়িতে মানুষের ভিড় লেগে থাকত। কে, কার আগে মেয়রের সঙ্গে দেখা করবেন, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু দুদিনের ব্যবধানে সব পরিবর্তন হয়ে গেছে।’ বাড়ির সামনে রাস্তার পাশেই
দাঁড়িয়ে ছিলেন ইটাহাটা এলাকার বাসিন্দা সামিন হোসেন। তার উৎসুক জিজ্ঞাসা, ‘ভাই, মেয়রের পদটা কি থাকবে, নাকি সেটাও যাবে? থাকলেই মনে হয় আমাগো ভালা হইতো। গাজীপুরের উন্নয়ন হইতো।’ একই আলোচনা চলছে নগরীর বিভিন্ন চায়ের স্টল ও লোক সমাগম স্থানে। সবার প্রশ্ন একটাই- দল থেকে বহিষ্কারের পর জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ থাকবে তো? নাকি কোনো আইনি জটিলতায় পড়তে পারে?
এদিকে সিটি করপোরেশন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতেও ভর করছে মামলা আতঙ্ক। দুদক অভিযান চালাবে, পুলিশ বাড়িতে প্রবেশ কবে- এমন অজানা আতঙ্ক বাড়ির কর্মচারী থেকে শুরু করে মেয়র জাহাঙ্গীরের মধ্যেও। নিজের আয়কর ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেই গতকাল সারাদিন কেটেছে জাহাঙ্গীরের। সম্ভাব্য কোন জায়গাগুলোয় আটকাতে পারে সেই ফাঁকফোকর বন্ধের চেষ্টা করেছেন তিনি। সিটি করপোরেশনের কাছের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গেও শলাপরামর্শ করেছেন। এমনকি বাড়ির বাউন্ডারির ভেতরে থাকা সরকারি গাড়ি ও মালামাল সিটি করপোরেশন ভবনে স্থানান্তর করতেও দেখা গেছে গতকাল। মেয়রের কাছের এক নেতা জানান, বহিষ্কারের পর থেকে জাহাঙ্গীর মনে করছেন, তার নামে মামলাও দেওয়া হতে পারে। তাই দলের হারানো পদ ফিরে পাওয়ার চেয়ে তার সব চেষ্টা এখন মামলা ঠেকানো। মেয়রের পদ রক্ষায়ও তেমন মনোযোগ নেই এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতার।
নানা আতঙ্কের মধ্যেই সন্ধ্যায় গুজব ছড়ায়- সিটি মেয়র গ্রেপ্তার হয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যেই সে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। অনেকে তো গুজবকে সত্যি ভেবে ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দেন। তবে সেগুলো ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থকরা। এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মেয়র গ্রেপ্তার হননি। তিনি গুলশানে রয়েছেন।’ যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার জাকির হাসান জানান, মেয়রের গ্রেপ্তারসংক্রান্ত কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি কথোপকথন গত সেপ্টেম্বরে ভাইরাল হয়। সেখানে জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে তার মন্তব্য ঘিরে প্রতিবাদে নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ। তারা জাহাঙ্গীরের বহিষ্কার দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই লিখিত জবাব দেন তিনি। তাতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ‘সুপার এডিট’ বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।