ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। বিগত নির্বাচন ভোটের দিন মাঝপথে এসে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে বর্জন করলেও এবার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকতে চায় দলটি। ইতোমধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে দলের সম্ভাব্য দুইজন প্রার্থীকে সেই সিগন্যালও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা মেনে মাঠে নেমে পড়েছেন তারা। বিএনপির দুই তরুণ প্রার্থী হচ্ছেন তাবিথ আউয়াল ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। অন্য দিকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেলে ইশরাক হোসেন এবারই প্রথম প্রার্থী হয়ে নামবেন ভোটের লড়াইয়ে।
বিএনপির তরুণ এই দুই প্রার্থীই এবার দলের তুরুপের তাস। ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা থাকলেও দলটির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, ভোটের রাজনীতিতে তারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করবেন। কোনো কারচুপি কিংবা জালিয়াতি হলে জনগণই তার জবাব দেবে।
গতকাল রোববার আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সম্পূর্ণ ভোটই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) গ্রহণ হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ২ জানুয়ারি হবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। ৯ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়।
তফসিল ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয় সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে কি না। নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান কী হবে জানতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এই নির্বাচনের অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার গত ১১ বছরে বড় যে কোনো নির্বাচনের বিষয়ে আগে থেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানালেও আসন্ন দুই সিটি নির্বাচনের অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নিয়ে রেখেছে বিএনপি। ‘অদম্য ঢাকা’ স্লোগান নিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে চায় দলটি। দুই সিটির মেয়র পদে উত্তর সিটিতে আগের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকাকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী তরুণ দুই নেতা নিজেদের মতো করে কাজ শুরু করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, ক্ষমতাসীনরা সুকৌশলে সিটি নির্বাচনের এমন একটি সময় ঠিক করেছে, যাতে জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ওই নির্বাচনের কারচুপির বিষয়টি চাপা পরে যায়। কিন্তু সেই কৌশলে ক্ষমতাসীনরা সফল হবে না। সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এবং জাতীয় নির্বাচনের কারচুপির বিষয়টি সবার সামনে উপস্থাপন করবে। সিটি নির্বাচনের প্রচারণাও জাতীয় নির্বাচনের দখলবাজির বিষয়গুলো সামনে রাখা হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করবে বিএনপি। এ দিন ঢাকায় বড় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেই সমাবেশে নেতারা সিটি নির্বাচনে কারচুপি ঠেকাতে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখবেন।
সূত্র মতে, জাতীয় নির্বাচনের কারচুপির ইস্যু থাকবে বিএনপির সিটি নির্বাচনের প্রচারণায়। কিভাবে ৩০ ডিসম্বেরের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী ছিল, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী ছিল, বিরোধী নেতাকর্মীদের কিভাবে দমন করা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর কত জায়গায় হামলা হয়েছিল সেসব বিষয় থাকবে নির্বাচনী প্রচারণায়। এ ছাড়া প্রতিটি সভা, সেমিনার এবং টেলিভিশন টকশোতেও নেতারা জাতীয় নির্বচনের কারচুপির বিষয়গুলো তুলে ধরেবেন। এ ছাড়া সিটি নির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে করার ঘোষণার কারণে এই পদ্ধতিতে কিভাবে কারচুপি করা সম্ভব তা আইটি এক্সপার্টদের সাথে নিয়ে ব্যাখ্যা করবে বিএনপি। দাবি জানানো হবে ইভিএম বাতিলের।
উত্তরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তাবিথ আউয়াল আধুনিক ঢাকার গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করে ঢাকাকে কিভাবে এশিয়ার অন্যতম আধুনিক সিটি করা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে তা এরই মধ্যে শেয়ার করেছেন তিনি। এ ছাড়া গণপরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা সঙ্কটে সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে এরই মধ্যে জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন তরুণ এই নেই।
অন্য দিকে বসে নেই ইশরাক হোসেন। প্রকৌশলী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা ও মেধার পাশাপাশি তার মরহুম বাবার দেয়া নির্দেশনাকে সঙ্গী করে তিনি সামনে এগোতে চান। ইশরাকের বাবা ছিলেন অবিভক্ত ঢাকার মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকা।
মেয়র পদে সবুজ সঙ্কেতের বিষয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, দল নির্বাচনে অংশ নিলে এবং মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে ভালো ফল করার ব্যাপারেও আশাবাদী তাবিথ। অন্য দিকে ইশরাক বলেন, দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং এই পদের জন্য তাকে যোগ্য মনে করে, তাহলে দলের পক্ষে নির্বাচনে লড়তে চান তিনি।
জানা গেছে, বিএনপির এই দুই সম্ভাব্য প্রার্থীকে সম্প্রতি লন্ডনে ডেকে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে তিনি দুই প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।