শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১১ পূর্বাহ্ন

বান্দরবানের পাহাড়ে কত রঙ আহা রে…

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৩০ বার

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার সমাহার বান্দরবান। যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ছুটিতে অবকাশ যাপনে কিছুটা প্রশান্তি পেতে ঘুরে আসার মতো পাহাড়ি এই জেলা। বান্দরবানের পাহাড়ে, কত রঙ আহা রে- ছন্দটির সঙ্গে বান্দরবানের অপার সৌন্দর্যের কতটা মিল তা শুধু এখানে এসেই উপলব্ধি করা সম্ভব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মধ্যে একটি বান্দরবান। এখানে রয়েছে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। প্রকৃতি যেন সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। তাই সবুজে মোড়ানো প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয, অবারিত সবুজের সমারোহ এবং মেঘ ছুঁয়ে দেখার মতো জায়গা পাহাড়িকন্যা বান্দরবান জেলা। যেখানে প্রকৃতি নিজ ঐশ্বর্যকে ঢেলে দিতে কৃপণতা করেনি। পাহাড়ি এ জেলায় রয়েছে অসংখ্য হ্রদ, ঝরনা, নদী। এখানকার জীববৈচিত্র্য এবং তাদের ঐতিহ্যপূর্ণ বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি যে কোনো সংস্কৃতিমনা ও ভ্রমণপিয়াসু মানুষকে কাছে টানে সহজেই।

করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ধস নামে জেলার পর্যটন খাতে। কিন্তু বিপর্যয় কাটিয়ে ধীরে-ধীরে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পাহাড়ের পর্যটনশিল্প। শীত যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জন্য। শীতের আগমনে বদলাতে শুরু করেছে জনশূন্য পর্যটন স্পটগুলোর চিত্র। ভ্রমণপিপাসু মানুষদের আনাগোনা বেড়েছে দর্শনীয় স্থানগুলোয়। ধস কাটিয়ে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠছে পাহাড়ের অর্থনীতিও।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে বান্দরবানের পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা প্রান্তিক লেক, চিম্বুক, নীলগিরি, বগালেক নাফাকুমসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা বান্দরবানের পাহাড়গুলো দূর থেকে দেখে মনে হয় বরফের স্তূপ।

পাহাড়ে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে প্রায় ২০ হাজার মানুষের জীবন জীবিকা। জেলার আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হস্তশিল্পের তৈরি শো-পিজ, কোমর তাঁতের কাপড়সহ ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাগুলোর বেচা-বিক্রিও জমে উঠতে শুরু করেছে। পর্যটকবাহী গাড়িগুলোসহ পরিবহন ব্যবসাও হয়ে উঠেছে চাঙ্গা। ধীরে ধীরে ক্ষতি কাটিয়ে উঠছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

হলি ডে ইন রিসোট ও ইকো সেন্স রিসোর্টের মালিক জাকির হোসেন বলেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার পর থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে পর্যটন নগরী বান্দরবানের ব্যবসা। আশা করছি আস্তে আস্তে করোনার যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব

ইনশাআল্লাহ। তবে আমাদের প্রাকৃতিক যে সৌন্দর্য সেটি সংরক্ষণ করা জরুরি পরিবেশ প্রতিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সরকারকে সেদিকে লক্ষ রাখা খুব জরুরি। কারণ শীত মৌসুম এলে ঝিরি ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয় গাছ কাটা শুরু হয়। এরফলে ব্যাপক ক্ষতি হয় আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের। দেখা যাবে এক সময় রেমাক্রী নাফাকুমের পানি শুকিয়ে গেছে। কারণ রেমাক্রী নাফাকুমের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক আসে বান্দরবানে। তাই প্রকৃতি যদি সুরক্ষিত রাখা না যায় এক সময় আর পর্যটক সৌন্দর্য দেখতে আসবে না। এ ছাড়া আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশটা ময়লা করে ফেলা হয়। তাই সরকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করলে পরিবেশটা সুন্দর থাকবে।

ফানুস রিসোর্টের পরিচালক ইমরান উদ্দীন বলেন শীত মৌসুম আসায় বান্দরবানে টুরিস্টের আগমন বেড়েছে আমাদের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। তবে পর্যটকদের জন্য এখানে সন্ধার পরে বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই তারা এখানে এসে বেশি দিন থাকতে চান না।

আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির স্থানীয় পাহাড়ি ব্যবসায়ী লাল পিয়াম বম বলেন, পাহাড়িদের তৈরি কোমর তাঁতের পোশাক (কাপড়) এবং বাঁশ, কাঠের তৈরির হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রধান ক্রেতা পর্যটকরা।

ট্যুরিস্ট জিপ গাড়ি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল বলেন, পর্যটকবাহী প্রায় তিনশ গাড়ি রয়েছে বান্দরবান। গাড়িগুলোর সঙ্গে জড়িত কয়েকশ শ্রমিক প্রায় ছয়মাস ধরে ভীষণ কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। কিন্তু শীত পড়তে শুরু করায় পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন। তাদেরও ইনকামের রাস্তা খুলেছে।

রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, পর্যটকের ওপর এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোও অনেকটা নির্ভরশীল। পর্যটক আসায় রেস্টুরেন্টগুলোয় আবারও বেচা-বিক্রি বেড়েছে।

বান্দরবান জেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, পাহাড়ের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম খাত হচ্ছে পর্যটনশিল্প। করোনার দুর্যোগের পর শীতের শুরুতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় পর্যটনশিল্প আবারও ঘুরে দাড়াচ্ছে। চাঙ্গা হয়ে উঠছে এ অঞ্চলের অর্থনীতিও। তিনি বলেন, পর্যটনশিল্পের বিকাশে বান্দরবানে আবাসিক হোটেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেস্টুরেন্ট এবং হস্তশিল্পের তৈরি শোপিস, কোমর তাঁতের কাপড়ের দোকানসহ পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। এ ছাড়া সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক সুবিধা সংবলিত রিসোর্ট। শুধু জেলা শহর নয় বিভিন্ন উপজেলায়ও পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে নিত্য নতুন পর্যটন কেন্দ্র। সেগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে হোটেল মোটেল রিসোর্ট। এক সময় শুধু বান্দরবান জেলা শহরে পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল ছিল কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন উপজেলায় পর্যটকদের থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে সম্প্রসারিত হয়েছে পর্যটন খাত। বিভিন্ন এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে জেলায় ৭০টি আবাসিক হোটেল-মোটেলে দৈনিক পাঁচ হাজারের বেশি পর্যটক আসেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com