শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই শিশু জাপানি মায়ের কাছে থাকবে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৫৭ বার

দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মা জাপানের নাগরিক নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে। তবে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

এর আগে ১২ ডিসেম্বর দুই শিশুকে দুদিন গুলশানে তার মায়ের বাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। আদেশ অনুযায়ী, সেদিন রাত ১০টা থেকে মায়ের সঙ্গে থাকার কথা ছিল শিশু দুটির। কিন্তু বাবা এবং তার মায়ের পক্ষ থেকে সেই আদেশ প্রতিপালন করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ মায়ের কাছে দুই শিশু কন্যাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি ওইদিন রাতে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করায় সোমবার সকালে জাপানি মায়ের পক্ষ থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিষয়টি অবগত করা হয়। সেদিন আদালত তাৎক্ষণিক কন্যাদেরসহ বাবাকে তলব করেন আপিল বিভাগ।

এরপর ওইদিন বেলা ১১টার পর দুই কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বাবা আপিল বিভাগে হাজির হন। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা খাসকামরায় ডেকে নেন দুই শিশু কন্যাকে। তাদের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলার পর তাদের বাবা-মাকেও বিচারকদের খাস কামরায় ডেকে নেওয়া হয়। বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর তাদের উভয় পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকরা বসে কথা বলেন।

এরপর এজলাসে উঠে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সোমবার রাতেই মায়ের কাছে শিশুদের বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়া বাবা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে আদালত অবমাননা করেছেন বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির ও ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম। বাংলাদেশি বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম।

এর আগে ৫ ডিসেম্বর দুই শিশুকে নিজের জিম্মায় নিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জাপানি মা নাকানো এরিকো। এর আগে ২১ নভেম্বর দুই শিশু বাংলাদেশে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। তবে রায়ে বলা হয়, জাপান থেকে এসে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দুই সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। জাপানি মায়ের আসা-যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার সব খরচ বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। ছুটির দিনে অন্তত দুইবার বাবা সন্তানদের মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালত নির্দেশনা দেন, গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত খরচ বাবদ শিশুদের মা নাকানো এরিকোকে ১০ লাখ টাকা দেবেন বাবা ইমরান শরীফ। সাত দিনের মধ্যে তাকে এ অর্থ দিতে বলা হয়।

রায়ে আদালত বলেন, রিটটি চলমান থাকবে। রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য আদালতে উভয় পক্ষ আসতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবে। প্রতি তিন মাস অন্তর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে। জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দেন আদালত।

গত ১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু বাংলাদেশে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবেন, না মা নাকানো এরিকোর সঙ্গে জাপানে চলে যাবেন, সে বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। এর আগে ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন বাবা-মাসহ রাজধানীর গুলশানের চার কক্ষের একটি বাসায় থাকবে দুই শিশু। সেখানে তারা ১৫ দিন থাকবে। ফ্লাটের ভাড়া উভয় পক্ষ বহন করবে।

পরে ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন রাজধানীর গুলশানের ফ্লাটে দুই শিশু জাপানি মা রাতসহ ২৪ ঘণ্টা থাকবেন। বাংলাদেশি বাবা শুধু দিনের বেলা সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এ সময়ে ওই ফ্লাটের ভাড়া শিশুদের বাবা-মাকে সমানভাবে বহন করতে হবে।

আদেশ অনুযায়ী, এতদিন বাবা-মা শিশুদের সঙ্গে অবস্থান করে। পরে নাকানো এরিকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন দুই শিশুকে নিয়ে বেড়ানো বা মার্কেটে যাওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারবেন জাপানি মা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com