মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে গতকাল রবিবার বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি। এই র্যালিকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের শুভ সূচনা আখ্যায়িত করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ র্যালি নতুন করে জেগে ওঠার ও সংগ্রাম শুরু করার র্যালি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার র্যালি। আসুন, সেই শুভ সূচনা করি।
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর বানানো অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিএনপি মহাসচিব র্যালি উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য! বিজয়ের ৫০ বছর পরেও একটি সরকার জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাও আজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিজয়ের এ র্যালি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, একটি মুক্ত স্বদেশ পাব বলে। যুদ্ধ করেছিলাম আমাদের বাক স্বাধীনতা থাকবে, সংগঠন করার স্বাধীনতা থাকবে এবং আমাদের সন্তানদের জন্য একটি বাসযোগ্য ভূমি নির্মাণ করতে পারব বলে। যেখানে গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন থাকবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা কী অসহায় জাতি হয়ে গেছি। জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুপুর সোয়া ২টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে র্যালির কার্যক্রম শুরু হয়। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি এ র্যালিতে স্থান পায়। নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেতাকর্মীদের নাচতে দেখা যায়। ঢাকা মহানগরীর ১৫টি নির্বাচনী এলাকা, ৪১টি থানা এবং শতাধিক ওয়ার্ড থেকে আসা মিছিল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে মিলিত হয়। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া সেজে রামপুরার একজন নারীনেত্রী পিকআপ ভ্যানে চড়ে বিজয় র্যালিতে অংশ নেন। ‘গণতন্ত্র শিকলে বন্দি’ লেখা সংবলিত মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে ৩০-৪০ জন যুবক র্যালিতে অংশ নেয়। র্যালিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে র্যালিটি খালেদা জিয়া মুক্তির দাবির র্যালিতে পরিণত হয়। র্যালির বর্ণনা দিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, র্যালিটি ছিল মতিঝিলের শাপলা চত্বর, ফকিরাপুল হয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত।
নয়াপল্টনে শুরু হয়ে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর আবার নয়াপল্টনে গিয়ে র্যালি শেষ হয়। র্যালিতে মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু অংশ নেন।
এ ছাড়া মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, বিলকিস জাহান শিরিন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, জয়নাল আবেদীন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সাদেক আহমেদ খান, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনোয়ার হোসেইন, আফরোজা আব্বাস, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল বিভিন্ন মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
র্যালি উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। শান্তিনগরের মোড়ে পুলিশ কাঁটাতার বসিয়ে ব্যারিকেড দেয়। দুপুর থেকে শোভাযাত্রা উপলক্ষে নয়াপল্টনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে পুলিশ। ফলে বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।