ভোটের মাঠে বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়াকে বড় ধরনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করছে না ক্ষমতাসীন দল। তাই বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে খুব কঠোর হবে না আওয়ামী লীগ। শর্তসাপেক্ষে তাদের ক্ষমাও করে দিতে পারে। তবে সংঘাত, সংঘর্ষ, সহিংসতা ও প্রাণহানি ঘটিয়ে যারা নির্বাচনী কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তাদের বহিষ্কারের পক্ষে দলের অধিকাংশ নীতিনির্ধারক।
আলোচনা-সমালোচনা ও হতাহতের মধ্য দিয়ে ইউপি নির্বাচনের গত তিনটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। কাল ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপ এবং ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ষষ্ঠ ধাপের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ফরম বিক্রি করছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা কমছে না। দলের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের কঠোর হুশিয়ারি দিলেও খুব একটা কাজে আসেনি। শুধু তাই নয়, তৃণমূল আওয়ামী লীগ সারাদেশ থেকে প্রায় ৮ হাজারের বেশি বহিষ্কারের সুপারিশ করলেও বিদ্রোহী ঠেকানো যাচ্ছে না।
দলীয় সূত্র জানায়, ইউপি নির্বাচনে বিএনপি ও বামদলগুলো সরাসরি অংশ না নেওয়া এবং দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। তাই সারাদেশে প্রায় সব ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল, বিজয়ীও হয়েছেন অনেকে। তাই তাদের ব্যাপারে দলীয় ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। তবে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, জামালপুর ও কিশোরগঞ্জে দলীয় প্রতীক উন্মুক্ত করায় আওয়ামী লীগের ভেতরে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ। তাই সবকিছু মাথায় রেখে বিদ্রোহীদের শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দল।
অবশ্য দলের এ সিদ্ধান্ত এখনই প্রকাশ করতে চান না জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) ফারুক খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং তাদের ক্ষমার সুযোগ নেই। শুধু বিদ্রোহী নয়, যারা বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে তাদেরও একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’ এর আগে স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী হওয়ায় ১৮ জনকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, এটা ছিল প্রথম। এমন সুযোগ আর দেওয়া হবে বলে মনে হয় না।
তবে দলের সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিল রয়েছে। ফলে এ দুটিকে কেন্দ্র করে থাকবে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে ইউপির পরবর্তী ধাপের নির্বাচন শেষ হলে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক করবে। সেই বৈঠকে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বহিষ্কারাদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আগে ইউপি নির্বাচন শেষ হোক, তার পর এসব বিষয়ে কথা বলা যাবে। এ মুহূর্তে বিদ্রোহীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে আছে। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের দলে আবার ফিরিয়ে নেওয়া বা ক্ষমা করা হবে কিনা তা নির্ভর করবে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।
সূত্র বলছে, প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৪২ বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ২০৬ ইউপিতে আওয়ামী লীগ হেরেছে বিদ্রোহীর কাছে। তৃতীয় ধাপে ঘটেছে অন্য ঘটনা। সেখানে প্রায় ১০০ দলীয় প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ৯৯২টি ইউপির মধ্যে বিদ্রোহীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৪৪৬ জন। সুতরাং দল মনোনয়ন প্রদানে উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে নিতে না পারলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন ছয় শতাধিক নেতা। এ বিষয়টি মাথায় রেখেও আওয়ামী লীগ কাজ করছে বলে জানা গেছে।
দলের সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের উপলব্ধি হলো, নির্বাচনী মাঠের পক্ষে-বিপক্ষে উভয়ই আমাদের লোক। বিদ্রোহী হওয়ায় অন্য দলের লোক বিজয়ী হয়েছে এমন উদাহরণ কম। সুতরাং এসব বিদ্রোহীদের বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে। তবে যেসব জায়গায় বিদ্রোহী হয়ে কেউ অন্য দলের নেতাদের বিজয়ী করতে সহায়তা করেছে এবং সহিসংতার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।