সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৮১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির মধ্যে দুই দফায় মোট ৭৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি রয়েছে কেবল সাতটি পদ। ঘোষিত কমিটির মধ্যে গত কমিটিতে থাকা আট মন্ত্রীর কেউই জায়গা পাননি। কয়েকজন নতুন মুখ এলেও পরিচয়ের বাইরেই রয়ে গেছেন আলোচিত সাবেক ছাত্রনেতারা। ফলে কমিটি ঘোষণার পর তাদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।
গত ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের পুনর্নির্বাচিত হন। এরপর ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ৪০ জনের নাম ঘোষণা করেন সভাপতি শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার রাতে কমিটির আরো ৩২ জনের নাম ঘোষণা করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কমিটির বাকি সাত সদস্যের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক একটি, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক একটি, কোষাধ্যক্ষ একটি, ধর্মসম্পাদক একটি এবং তিনটি সদস্যপদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। এসব পদে নেতাদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
কমিটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবারের কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া মন্ত্রী রয়েছেন কেবল চারজন। এরা হলেন সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। আর কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন আট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। তারা হলেন : সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক অর্থ সম্পাদক ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক আইন সম্পাদক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ, সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মহিলা শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। কমিটি ঘোষণার পর তাদের অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটি থেকে বাদ পড়া মন্ত্রিসভার একজন সদস্য বলেন, ‘এবার কমিটি ঘোষণার আগে কোনো কোনো মহল নিজেদের ফায়দা হাসিল করার জন্য দল ও সরকারকে আলাদা করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। অবশেষে তাদের সেই মিশন সফল হলো। তবে নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অবশ্যই ভেবেচিন্তে নিয়েছেন বলে আমি মনে করি।’
এ দিকে কমিটি ঘোষণার আগে অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল আশি ও নব্বই দশকের ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা কেন্দ্রে বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে স্থান পাবেন। আবার অনেকের আশাবাদ ছিল ২০০১ সালের পর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সাবেক ছাত্রনেতারাও ভালো অবস্থানে আসবেন। কিন্তু কমিটিতে দেখা যায় ছাত্রলীগের বিগত কমিটির (সোহাগ-জাকির) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা সায়েম খানকে উপ-দফতর সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন ফরাজী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, সাবেক নেত্রী গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণাকে কমিটির সদস্য পদে রাখা হয়েছে। তবে কমিটিতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কারো জন্যই কোনো সুখবর রইল না। কমিটিতে ঠাঁই মেলেনি এসব ছাত্রনেতার। ফলে তাদের মধ্যে হাতাশার ছাপ লক্ষ করা গেছে।
জানা গেছে, প্রথম দিকের আলোচনায় ছাত্রলীগের অনেক সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আশাবাদী ছিলেন। এর বাইরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাবেক ছাত্রনেতাও প্রস্তুত ছিলেন নতুন পদ-পদবির জন্য। তাদের ধারণা ছিল, গত তিন ও দুই মেয়াদে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন অথচ ভালো সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখাতে ব্যর্থ ছিলেন তারা এবার বাদ পড়বেন। তাদের জায়গায় তুলে আনা হবে সাবেক ত্যাগী ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতাদের। কিন্তু কমিটিতে যেমন উল্লেখযোগ্য কেউই বাদ পড়েননি তেমনি নতুন পরিচয় দেয়া হয়নি সাবেক এসব ছাত্রনেতাকে। ফলে তারা রীতিমতো হতাশ হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের সাবেক একজন সভাপতি বলেন, ‘এবারের কমিটি নিয়ে আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। কিন্তু কাউন্সিলের শেষ দিনে প্রথম তালিকা ঘোষণায় খানিকটা হতাশ হয়েছি। তবুও আশায় ছিলাম বড় পদ না হোক অন্তত ছোটখাটো একটি পদে স্থান দেয়া হলেও পরিচয়ের সুযোগ পাব। কিন্তু সেটাও শেষ হয়ে গেছে। বলার কিছুই নেই।’
সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজনীতি একজনের জন্যই করি আমরা। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। কোনো পদ না পেলেও তার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতে হবে।’