সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

কালের কবলে সেন্টমার্টিন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৫৬ বার

‘সীমানা পেরিয়ে’ রিসোর্টে পৌঁছেই আমরা ১১ জন চার কটেজে উঠি। রিসোর্টের মাঝখানের খোলা জায়গাটাও ত্রিপল টানিয়ে কটেজ বানিয়ে রেখেছে। খানাপিনা রিসোর্টেই। ডাল, ভর্তা ও মাছ-ভাত জনপ্রতি ১৩০ টাকা, সাথে রূপচাঁদা নিলে ১০০ টাকা বেশি। রাতে গান-বাজনার আয়োজনসহ রয়েছে বারবিকিউর ব্যবস্থাও। আমার দ্বীপ দেখার শখ মিটে গেছে আগেই। বাকি ছিল নীল দরিয়ায় ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে দেহের সমস্ত ইন্দ্রিয় এক করে স্রষ্টার সৃষ্টজগতের বিস্ময়কর মহিমা উপলব্ধি করা। দরিয়ার জলে সূর্যাস্ত দেখা শেষ করে কটেজে ঢুকতেই বের হয়ে আসে মশা। রাতে কাগজ-কলম নিয়ে বসতেই কানের কাছে গান জুড়ে দেয়। মশা তাড়াতে গিয়ে ছিটকে যায় হাতের কলম। মেজাজ গরম করে খাটের তলায় কলম খুঁজতে গিয়ে কারো নরম গায়ে হাত পড়ে। হাত পড়তেই চিঁচিঁ শব্দে প্রতিবাদ করে ওঠে। গন্ধমুষিকটা কটেজে ঢুকলো কী করে! রাতে নির্ধারিত সময়ে জেনারেটর বন্ধ হলেই নিভে যায় দ্বীপের আলো, থেমে যায় দিনের কোলাহল। জেগে ওঠে রাতের প্রকৃতি। কানে প্রবেশ করে অদ্ভুত গর্জন। চোখ বন্ধ করে অদ্ভুত গর্জনের অনুভূতি উপলব্ধি করতে থাকি। দরিয়া গর্জন করে বলে, তোমরা মানুষ দ্বীপের জীববৈচিত্র্যসহ আদি স্বভাব বদলে দিলেও আমার গর্জন বদলাতে পারনি, গর্জন চলছে, চলবে অনন্তকাল। রাত তিনটার দিকে ঘুম ভাঙে মুষলধারা বৃষ্টির শব্দে। অকালে বৃষ্টি! শীত বৃদ্ধিসহ ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল। দরজা খুলে, বৃষ্টি কোথায়! বাইরে ফকফকা জ্যোৎস্না। রিসোর্টের তিনপাশে কেয়া ঝোপ। বাতাসে পাতায় পাতায় ঘর্ষণে টিনের চালে বৃষ্টি পতনের মতো ঝমঝম শব্দ। জাগতিক হৈ হাঙ্গামার বাইরে পাতার ঝমঝম শব্দ ও একটানা সমুদ্রের গর্জন, নিসর্গের এই অম্লান অনুভূতি থেকেই জন কীটস বলেছিলেন, অ ঃযরহম ড়ভ নবধঁঃু রং ধ লড়ু ভড়ৎবাবৎ.

যে জমিতে রিসোর্ট সে জমির মালিক ছিলেন হাজী মোহাম্মদ সালেহ। রিসোর্টের চা দোকানদার হাজী সাহেবের পুত্র। জমির শেষ প্রান্তে তাদের বাড়ি। সালেহ সাহেবের নাতি জসিম উদ্দিন চা দোকানেই বসা ছিল। জসিম উদ্দিনকে সাথে করে সালেহ সাহেবের বাড়ি রওয়ানা হই। জসিম উদ্দিনের বাবার বাড়ি কক্সবাজার। তার বাবা ৩০ বছর আগে এ দ্বীপে ঠিকাদারি করতে এসে হাজী সাহেবের পরিবারের সাথে পরিচয় ও বিয়ে। বিএ পাস জসিমের সাথে হাজী সাহেবের বাড়ি যাওয়ার পথে বাম পাশে একটি কূপ দেখিয়ে, ‘এটি ছিল নানাদের এককালের পুকুর। এলাকার লোকজন এক সময় এ পুকুরের পানি পান করতো ও পুকুরের পাড়ে গোসল করতো।’ বাড়িতে শতাধিক নারিকেল গাছ। উঠানের এক পাশে বস্তার ভেতর ঝুনা নারিকেলের স্তূপ। ঝুনা নারিকেল সাম্পানে করে চিটাগাং পাঠানো হবে। লতা-পাতা বিছানো জোড়াতালি দেয়া চৌচালা ঘরের সামনে গিয়ে জসিম উদ্দিন,

নানা, ও নানা, বাইরে আসেন। আপনাকে দেখার জন্য ঢাকা থেকে লোক আসছেন। (চৌচালা ঘর থেকে মাথা নোয়ায়ে এক লোক বের হন। লোকটি যেমন উঁচু তেমন বলবান। গায়ে অ্যারাবিয়ান জোব্বা ও মাথায় হাজী রুমাল বেঁধে মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় যে লোকটি বের হলেন তিনিই হাজী মোহাম্মদ সালেহ। এ দ্বীপের একমাত্র বর্ষীয়ান ব্যক্তি। বের হতেই) নানা ঢাকার লোক। আপনার সাথে কথা বলতে চান।’

ঢাকার লোকরাতো প্রতিদিনই কথা বলতে আসে। (উল্লেখ্য, আমরা পরস্পরের কথা বুঝতে সক্ষম না হওয়ায় জসিম দোভাষীর কাজ করে) তা আমার কাছে কী জানতে চায় ঢাকার বাবুরা?
জানতে চাই, আপনার বয়সসহ এই দ্বীপের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।

‘আমার বয়স এক শ’ বিশ বছরের কম হবে না। আমার বাপ-দাদার আদিবাস বার্মায়। আমার যখন এগারো বছর বয়স তখন এ দ্বীপে আসি। জমি কিনে কৃষিকাজ আরম্ভ করি। কৃষিকাজ করার সাথে সাথে জমি-জমা বাড়াতে থাকি। বাড়াতে বাড়াতে দুই দ্রোন (ষোলো বিঘায় এক দ্রোন) সম্পত্তি করি। এক শ’ টাকা দরে প্রতি বিঘা সম্পত্তি কিনেছিলাম। পনেরো বিশ বছর আগে ছেলেমেয়েরা একদিন এসে জানায়, তাদের নামে সম্পত্তি লিখে না দিলে আমাদের সব সম্পত্তি সরকার নিয়ে যাবে। সরকার নিয়ে যাওয়ার ভয়ে তাদের নামে সম্পত্তি লিখে দিই। আমার সব জমি লিখে দিয়ে আমি এখন নিঃস্ব। ছেলেরা জমি নিয়েই বিক্রি শুরু করে। কয়েক বছর আগে সুর উঠেছিল, এই দ্বীপ সাগরের নিচে তলিয়ে যাবে। তাই সম্পত্তি বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। দামে-অদামে অনেকেই জমি বিক্রি করে দেয়। জমি বিক্রির টাকা দিয়ে ব্যবসা করে। এখন আর জাল-লাঙ্গল ভালো লাগে না। জাল-লাঙ্গল থেকে এক মাসে যা আয় করতে পারে ব্যবসা করে তা এক দিনেই পেয়ে যায়। রূপকথার গল্পের মতো ঢাকার গল্প শুনে, পোশাক, চলন-বলনের চাকচিক্য দেখে জাল-লাঙ্গল ফেলে সবাই ঢাকাইয়া হয়ে যায়। যে মানুষ এক সাথে হাজার টাকার মুখ দেখেনি সে মানুষ বান্ডেল বান্ডেল টাকা দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারে না। ৫-৭ বিঘা বাদে আমাদের সব সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গেছে। ছেলেরা এখন ব্যবসা করে, চা-পান ও ডাব বিক্রির ব্যবসা।

– এ দ্বীপের প্রথম আদিবাসী সম্পর্কে বলেন।

– দু’আড়াই শ’ বছর আগে ১৩ জন লোক সর্বপ্রথম এখানে বসতি শুরু করে। তখন এ দ্বীপের নাম ছিল নারিকেল জিনজিরা। আমি যখন এ দ্বীপে আসি তখন এখানে মাত্র ৪০টা ঘর ছিল। লোক সংখ্যাছিল এক শ’ সোয়া’শ। জমি চাষ করত। মাছ ধরে শুঁটকি বানিয়ে সাম্পান করে চিটাগাং নিয়ে বিক্রি করতো। যেদিন থেকে ঢাকাইয়ারা আসতে শুরু করে সেদিন থেকে বদলে যেতে শুরু করে দ্বীপের চিত্র। সুবিধা পাইলে বদলাবে না কেন? হাজার টাকার জমি লাখ টাকা বিক্রি করতে পারি, টাকা দিয়ে বাবুগিরি করতে পারি, যখন তখন গঞ্জে আসা-যাওয়া করতে পারি, পাকা রাস্তায় চলতে পারি, ভালো ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারি, আর ঘরে বসে মাছ শুঁটকি বিক্রি করতে পারি। অসুবিধা হচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তিসহ ঢাকাইয়াদের বেলেল্লাপনা দেখে হতবাকসহ হাঁপিয়ে উঠছে দ্বীপ। অপরাধ ছিল না, বাড়ছে দ্বীপে অপরাধ। গান-বাজনাসহ বেপর্দায় চলাচলা করে, মাইয়া-পুরুষ এক সাথে গোসল করতে নামে, নেশা-পানি খেয়ে নাচানাচি করে। সর্বোপরি, ‘গেছে জাতি রইছে পিরিতি’ আরো শুনতে চান?

– এ দ্বীপের ভবিষ্যৎ কী?

– এক সময় এ দ্বীপে দলে দলে কাছিম উঠে ডিম দিত। ঝাঁকে ঝাঁকে বাস করতো লাল কাঁকড়া। ছিল হাজারো প্রকারের শামুক-ঝিনুক। শত প্রকারের প্রবাল, পানির তলায় ছিল রঙবেরঙের মাছ আর গাছে ছিল জানা-অজানা নানা প্রকারের পাখি। এখন সারা দ্বীপ খুঁজলেও এসব দেখতে পাবেন না। যেখানে লাল কাঁকড়া বিছিয়ে থাকত এখন সেখানে বিছিয়ে থাকে প্লাস্টিকের পরিত্যক্তসামগ্রী, পলিথিনের ছেঁড়া কাগজ, খাবারের বর্জ্য মানুষের মলমূত্র ইত্যাদি। কালের কবলে জিঞ্জিরা হারিয়ে গেছে, এখন যা দেখছেন তা ঢাকাইয়া বাবুদের দ্বীপ। আর ভবিষ্যতের কথা বলছেন? যদি কোনো কারণে এ দ্বীপ সাগরের নিচে তলিয়ে না যায় তবে দ্বীপের আদিবাসীরা হবে পরবাসী, বাবুরা হবে এ দ্বীপের মালিক। দ্বীপের আদি জীব-জন্তু ও শামুক-ঝিনুকের পরিবর্তে বাবুদের পাশে শুধু ইঁদুর বিড়াল আর কুকুর থাকবে।

স্টিমার ঘাটের ডান পাশে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ। পরিষদের সাথেই আশ্রয়কেন্দ্র। আমরা যখন ইউনিয়ন অফিসে প্রবেশ করি তখন চেয়ারম্যান সাহেবের সভা চলছিল। সালাম বিনিময়ের পর কিছু জানতে চাইলে তিনি পরিষদের সচিব সাহেবের নিকট থেকে জেনে নিতে বলেন। পরিষদ সচিবের নাম হাবিবুল্লাহ। তার নিকট থেকে জানতে পারি, বর্তমান চেয়ারম্যান মো: ফিরোজ আহমেদ খান। দ্বীপে চেয়ারম্যানের কথাই শেষ কথা। দ্বীপের বিচার বড় কড়া। কয়দিন আগে এক পর্যটক গোসল করতে নেমে উঠে দেখে, জামা-কাপড় নেই। পকেটে ১৮ হাজার টাকাসহ মোবাইল ছিল। চিহ্নিত হওয়ার পর, চোর ১০ হাজার টাকাসহ মোবাইলের কথা স্বীকার করে। বিচারে চোরকে ১৮ হাজার টাকাই পরিশোধ করতে হয়েছিল। বাকি টাকা বিচারে বসেই জমি বন্ধক করিয়ে আদায় করা হয়। এখানে টুকটাক চুরি-চামারি করেও কেউ রেহাই পায় না।

ইউনিয়নে মোট পরিবার ১০০০টি, জনসংখ্যা ৫৯৪৯ জন, যার মধ্যে পুরুষ- ৩০৯১ জন এবং মহিলা ২৮৫৮ জন। দ্বীপের মোট আয়তন ১২ বর্গকিলোমিটার। পশ্চিম মাঝেরপাড়া, উত্তরপাড়া, ডেইলপাড়া, পূর্ব মাঝেরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, পূর্বপাড়া, গলাচিপা, কোনাপাড়া ও দক্ষিণপাড়া- এ নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন। সচিবের মতে, বর্তমানে এ দ্বীপে শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। পরিবেশবাদীদের বাধার কারণে হোটেল মালিকগণ হোটেলে ইট, সিমেন্ট ও রড ব্যবহার করে কাজ করতে পারছে না। নয়তো কবেই সেন্টমার্টিনকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে ছেড়ে দিত।
পরিবেশবাদীদের বাধা-নিষেধ শুরু হওয়ার আগেই পেছনের হোটেলসহ বেশ কয়টি হোটেলের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পাকা নির্মাণকাজের জন্য কেউ অনুমতি দিতে পারবে না। যারা করে তারা হয়তো গোপনে চুরি-চামারির দ্বারা করে থাকে। মানুষ নিজের বিবেক থেকে বন্ধ না করলে কে কাকে কয় দিন পাহারা দিয়ে রাখতে পারবে? সর্বপ্রথম ১৩ জন লোক এখানে বাস করতে শুরু করে। এই ১৩ জন এসেছিল চকরিয়া, টেকনাফ ও মিয়ানমার থেকে। তখন দ্বীপ ছিল কেয়া ও প্যারাবনে ভর্তি। ১৩ জনের একজন তমিম গোলাল। তমিম গোলালের পুত্র সিদ্দিক মেম্বার। সিদ্দিক মেম্বারের এক কন্যার নাম রওশন জামান। রওশন জামান আমার মা। আমার মায়ের জমির উপরই বর্তমান পরিষদ ভবনটি। আজ থেকে পনেরো বছর আগে যার মুলিবাঁশের হোটেল থেকে একদিন ষোলো টাকা দিয়ে মাছ-ভাত খেতে পেতাম সে দুদুমিয়া এখন মুদি দোকান চালায়।

দ্বীপ সম্পর্কে দুদু মিয়ার বক্তব্য, ‘সন তারিখ ঠিক মনে নেই। তবে বছর বিশেক আগে এ দ্বীপে বাইরের লোকজন আসতে আরম্ভ করে। তখন বাড়ি থেকে ভাত ও তরকারি রান্না করে এখানে এনে বিক্রি করতে শুরু করি। দেখি, দিন দিনই লোকজন বাড়ছে। বাড়ি থেকে পাক করা খাবার এনে তাল ঠিক রাখা যায় না। তখন মুলির বেড়া আর ওপরে গোলপাতার ছাউনি দিয়ে এখানেই পাকশাক শুরু করি। তখন প্রতি প্লেট ভাতের দাম তিন টাকা আর প্রতি টুকরো মাছের দাম ছিল দশ টাকা। ভাত মাছ মিলিয়ে ষোলো টাকার বেশি কেউ খেতে পারতো না। ‘হোটেল ব্যবসা ছেড়ে মুদিদোকান দিতে গেলেন কেন?’ এই প্রশ্নের উত্তরে সখেদে বলেন, ‘এখন যেখানে ‘আল্লাহর দান হোটেল’ এক সময় সেখানেই ছিল আমার মুলিবাঁশের হোটেল। ১৯৯৫ সালের দিকে ধুয়া উঠলো, দ্বীপ তলিয়ে যাবে। সে ভয়ে জমাজমি ও বাড়িঘর সব বিক্রি করে টেকনাফ চলে যাই। টেকনাফে সামান্য কিছু জমি কিনে বাড়িঘর করি। সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে সুবিধা করতে পারছিলাম না। আর এখানে দেখি, দ্বীপ না তলিয়ে বরং ব্যবসাপাতি বেড়ে যাচ্ছে। তাই পুনরায় দ্বীপে চলে আসি। যে জমিতে আমার হোটেল ছিল, সে জমি ছিল খাসজমি। খাসজমি খালি পেয়ে অন্য লোকেরা হোটেল মোটেল খুলে বসেছে। পরে এ ঘর ভাড়া নিয়ে আমি খুলেছি মুদিদোকান। এখন ভাড়া বাড়িতে থাকি, পরিবারের লোকজন থাকে টেকনাফ। প্রতি সপ্তায় আসা যাওয়া করি।

ট্যুরিস্টদের চেয়ে স্থানীয় লোকের ভাড়া অনেক কম। যেখানে ট্যুরিস্টদের জনপ্রতি জাহাজভাড়া ৭০০ (উপরতলায়) থেকে ৫০০ টাকা, সেখানে স্থানীয় লোকের ভাড়া ২০০ টাকা। সাম্পানের ভাড়া তার চেয়েও কম।’

ট্যুরিস্টের সংখ্যা বাড়তে দেখে এ দ্বীপের অনেকেই জাল-জমি ফেলে ব্যবসা ধরেছে। আমাদের রিসোর্টের সামনের দোকানটি মুকবিলের। পাশেই মুকবিলের বাড়ি। ভালো হলে দৈনিক পাঁচ’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। অন্য ভাইয়েরা এখনও মাছ ধরার কাজ করে। সকালে মুকবিলদের বাড়ির ঘাটে যে কয়টা বোট লেগেছে এর মধ্যে একটা বোট মুকবিলদের। এখনই তারা ঘাটে নামবে। বাঁশের ভার বেঁধে জাল ও মাছ কাঁধে করে জেলেরা নিচে নেমে আসে। মাছের সাথে সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি কালিরূপচাঁদা। কালিরূপচাঁদা ছাড়া অন্যসব মাছের মধ্যে দুটি রাঙাচূড়ি। রূপচাঁদার পরেই রাঙাচূড়ির কদর। মাছটির উপরের দিকে ‘রাঙা’ বলে এ রকম নামকরণ। বাজার ভালো হলে মাছগুলোর সর্বোচ্চ দাম হাজার টাকা। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ছয়জন জেলে গভীর সমুদ্রে জাল টেনে মনের মতো মাছ না পেয়ে নিরাশ ও বেহাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সৈকতে। ৬ জন মাঝি-মাল্লা কী নিয়ে বাড়ি যাবে? যে কয়টা মাছ পেয়েছে তা বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে সে টাকা দিয়ে তেল-নুনই কেনা যাবে না, চাল কিনবে কী দিয়ে? সারা রাত জাল টেনে, ইঞ্জিনের তেল জ্বেলে ছয়জন লোক হাজার টাকা পেলে চলবে কিভাবে? ‘চলতে পারে না বলেইতো দ্বীপের মানুষ জমি বিক্রি করে যাদের উপযুক্ত ছেলে আছে তারা ছেলেদের বিদেশ পাঠায়, বাকিদের কেউ কেউ দোকান পেতে বসেন।’

১০১০টি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ যেখানে নীল জলরাশির তলায় রয়েছে বর্ণিল প্রবালপ্রাচীর, কচ্ছপ, তিমি, হাঙ্গর, অক্টোপাস, স্কুইড, গলদা চিংড়ি ও ডলফিন। আইন দ্বারা সুরক্ষিত দ্বীপের জীববৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’ আমাদেরও আছে। থাকলে কী হবে? ২০১২ সালে প্রণীত আইন ও দ্বীপের হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্য দেখে মনে পড়ে, The patient had died before the doctor came.
লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com