ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র পদে তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণ সিটিতে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তাবিথ আউয়াল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে এবং ইশরাক হোসেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মেয়র পদে দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে বিকেল সাড়ে ৪ টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসে। বৈঠক শেষে মেয়র পদে ৩ মনোনয়ন প্রত্যাশীর সাক্ষাৎ নেন তারা। এ সময় লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপিতে যুক্ত হয়ে ২ প্রার্থীকে পরামর্শ দেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,জমিরউদ্দীন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমরা মনে করি না। তারপরও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা মনে করি এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হব। জনগণের কাছে যাওয়ার একটি সুযোগ পাবো। যদিও গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন এ নির্বাচন কমিশন ও সরকার আমাদের সেই সুযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি বর্তমানে যে সরকার এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না এটা বাস্তবতা। কিন্তু এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফুট করে সেটাকে পাল্টে দিয়ে তুলে সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। এই যে সরকার তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসা সরকার না। এরা সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে না এটা খুব পরিস্কার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থী ইশরাক হোসেন তার একটি পরিচয় আছে। তিনি আমাদের যে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। যদি তিনি একেবারেই নতুন তারপর আমরা মনে করছি নতুনদের মধ্যে তার একটি বড় আকর্ষণ, প্রভাব থাকবে। একইসাথে তিনি উচ্চশিক্ষিত এবং আপনাদের সাথেও হয়তো তার কথা হয়েছে আমার মনে হয় আপনারাও তাকে পছন্দ করেছেন।
এ সময় তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের মনোনয়নপ্রাপ্ত তাবিথ আউয়ালের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, আমি তোমার একজন যোগ্য প্রার্থী এর প্রমাণ সে ইতিপূর্বে দিয়েছেন তাই আমরা দলীয়ভাবে মনে করেছি তারা নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থী। এ সময় নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে এখন কথা বলতে আমার রুচি হয় না। এই নির্বাচন কমিশন কেমন তা আপনারা অতীতে দেখেছেন এবং নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এর কথা প্রকাশ পেয়েছে। তবু যেহেতু আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নেই এটি একটি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তাই তাদের অধীনে নির্বাচনে যেতে হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল তাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটিকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ, রাজনীতির ভবিষ্যৎ ও ঢাকা সিটি গড়তে তরুণদের ওপর আস্থা রাখা যায়, দল তা রেখেছে। আমাদের প্রথম কাজ হবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে, সেখানে একটা উন্নয়ন আনা।
দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, আমাদের জন্য সকলেই দোয়া করবেন আমরা যেনো আমাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারি। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে জনগণের ভোটাধিকার ও ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার আন্দোলন সংগ্রামে আছি। আর সেটি একমাত্র সম্ভব যদি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারি। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আমরা এই সুযোগটা কাজে লাগাবো, মানুষের দুয়ারে পৌঁছাবো। নগরবাসী উদ্বুদ্ধ করবো এখন যে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি।
তিনি বলেন, নবীন প্রবীণদের সম্বনয়ে আমাদের এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। আজকে বিশ্বে বসবাসে অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা। আমাদের লক্ষ্য হবে ঢাকাকে ন্যূনতম বসবাস যোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দেশের উন্নায়ন করতে হয়, আমাদের জানা আছে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা নগরীকে উন্নয়নে যে অথরিটি দেয়া আছে এতে ঢাকার উন্নয়ন সম্ভব না। ঢাকাকে অবশ্যই একটা মেট্রোপলিটিন সরকার অথবা নগর সরকারের আদলে ঢেলে সাজাতে হবে।