সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভ প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আর সঠিক বিচারের পূর্বশর্ত হলো পক্ষপাতহীন সুষ্ঠু তদন্ত।
প্রশ্নহীন নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া সন্দেহাতীতভাবে ন্যায়বিচার করা অসম্ভব। তদন্ত হলো ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার অন্যতম অনুষঙ্গ। তদন্তের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে অপরাধ ও অপরাধীর স্বরূপ উন্মোচিত হয়। যদিও তদন্ত মানেই অপরাধ প্রমাণ হয়ে যাওয়া নয়।
কারও দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাওয়াও নয়। তদন্ত হলো বিচারকের জন্য বিচার্য বিষয় নির্ধারণে অপরাধের উপাদান বিশেষ। অনেকটা পথনির্দেশক। তদন্তের ভিত্তিতেই একজন বিচারক বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। বিচারের গতিপথ নির্ধারণে তদন্ত হলো মূল নিয়ামক। সুতরাং তদন্ত কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও আইনের যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সঠিক ও সুন্দর তদন্ত ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ত্রুটিযুক্ত ও অস্বচ্ছ তদন্ত বিচারক ও বিচার প্রক্রিয়াকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
বাস্তবতা হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। দুর্বল তদন্তের কারণে বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। প্রকৃত অপরাধী আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে যায়। আবার নির্দোষ ব্যক্তি বিচারের সম্মুখীন হয়ে নিগৃহীত হয়। কখনো বা একজনের পরিবর্তে অন্যজন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দিজীবন কাটায়। এর অন্যতম কারণ হতে পারে সহজে তদন্ত সম্পন্ন করার প্রবণতা। উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনার সময় হরহামেশাই শোনা যায়, তদন্তের সহজ পন্থা হলো আসামিকে দিয়ে দোষ স্বীকার করানো। আইনের বিধান আছে, শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতেই আসামিকে দণ্ড দেওয়া যায়। এমনকি অন্য কোনো প্রকার সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকলেও। শর্ত হলো, স্বীকারোক্তিটি সত্য ও স্বেচ্ছাকৃত মর্মে প্রমাণিত হতে হবে। এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার অনেক সময় প্রধান লক্ষ্য থাকে আসামিকে রিমান্ডে নেওয়া এবং স্বীকারোক্তি আদায় করা। এমনকি এ উদ্দেশ্যে অন্যায় ও নৃশংস পথ বেছে নিতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করেন না। রিমান্ডে বর্বরোচিত বিভিন্ন পদ্ধতিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় মর্মে প্রচার রয়েছে। এসব পদ্ধতির নাকি ভয়ংকর সব নামও আছে। এমনকি ‘ক্রসফায়ারের’ পরিবেশ তৈরি করে ভয় দেখানোর অভিযোগও শোনা যায়। তখন নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও জীবনের ভয়ে কেউ কেউ স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়। এতে অনেক মামলাতেই মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি পায়। পরিণামে ন্যায়বিচার ব্যর্থ (miscarriage of justice) হয়। হরহামেশাই এসব খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পায়। স্বভাবতই জনমনে তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় দানা বাঁধে।
সাম্প্রতিককালে তদন্ত নিয়ে সংশয় সর্বোচ্চ মাত্রা পেয়েছে। ৪ জুলাই, ২০২০ নারায়ণগঞ্জে নিখোঁজ হয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী দিসা মণি। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা স্বীকার করে, দিসা মনিকে তারা গণধর্ষণ করার পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু মৃত দিসা মণিকে ৪৯ দিন পর জীবিত পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় হাইকোর্টে কয়েকজন আইনজীবী রিভিশন দায়ের করেন (ওই রিভিশনে এ নিবন্ধের লেখক প্রথম পিটিশনার)। রিভিশনে মামলা ও মামলা-পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়। হাইকোর্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে জবাব ও প্রতিবেদন চান। তাদের প্রতিবেদনগুলো এবং পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ পায়, অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে আসামিদের কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। উল্লেখিত রিভিশনে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধকরণ বিষয়ে কয়েক দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। শুনানির জন্য বিষয়টি বর্তমানে পেন্ডিং আছে। এর আগে চট্টগ্রামেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৯ সালের ২১ মার্চে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির অগ্নিদগ্ধ লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় পুলিশ জীবন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ২৬ মার্চ সে আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। স্বীকারোক্তিতে সে বলে যে, লাশটি জনৈক দিলিপ রায়ের। সে এবং দূর্জয় নামের একজন মিলে দিলিপকে হত্যা করে। হত্যার পর তারপিন ঢেলে লাশটি পুড়িয়ে বস্তায় ভরে ফেলে দেয়। বিস্ময়কর সত্য হলো, নিহত দিলিপ মে মাসের ৫ তারিখে আদালতের সামনে জীবিত হাজির হয়। এমন ঘটনা গোটা তদন্তব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
তদন্তের স্বার্থে আইনগতভাবে আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ও ৩৪৪ ধারায় এ সংক্রান্ত বিধান বর্ণিত আছে। রিমান্ডে নেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ। ম্যাজিস্ট্রেট এ সংক্রান্ত যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে মর্মে সন্তুষ্ট হলে রিমান্ড মঞ্জুর করতে পারেন। রিমান্ডের আদেশ দেওয়ার সময় আসামির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। রিমান্ড মঞ্জুরের সময় ম্যাজিস্ট্রেটকে আসামির শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হয়। আঠারো বছরের কম বয়স্ক শিশুকে কোনোক্রমেই রিমান্ডে দেওয়ার সুযোগ নেই।
আইন রিমান্ডের অনুমোদন দিলেও নির্যাতনকে বৈধতা দেয়নি। বাংলাদেশ বা কোনো দেশেই রিমান্ডকালীন নির্যাতন আইনসিদ্ধ নয়। ১৯৪৮ সালের ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে’র (UDHR) অনুচ্ছেদ ৫-এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর বা অমানুষিক বা অপমানজনক আচরণ অথবা শাস্তির শিকার করা যাবে না। আমাদের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বিচার ও দণ্ড সম্পর্কিত মৌলিক অধিকারের উল্লেখ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদটির ৫ উপ-অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না বা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল হত্যাকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ‘ব্লাস্ট এবং অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ’ মামলার রায়ে ২০১৬ সালে আপিল বিভাগ ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। গ্রেফতার ও রিমান্ড সংক্রান্ত ওই নির্দেশনাগুলো মেনে চলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বাধ্যতামূলক। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে রিভিউ আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু কোনো স্থগিতাদেশ নেই, সেহেতু রায়ের নির্দেশনাগুলো এখনো বাধ্যকর হিসাবে বলবৎ রয়েছে।
তদন্তের আরেক সমালোচিত অধ্যায় হলো, গ্রেফতারকৃতকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন। আশঙ্কাজনকভাবে লক্ষণীয়, কোনো ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হলে তার সঙ্গে ফটোসেশন করা হয়। জব্দকৃত মালামাল টেবিলে সাজিয়ে রেখে প্রদর্শন করা হয়। প্রেস ব্রিফিং করে অভিযুক্ত ও সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করা হয়। গ্রেফতারকৃতকে সরাসরি অপরাধী বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এ সময় কখনো কখনো আসামির বুকের সঙ্গে ‘মাদক ব্যবসায়ী’, ‘চোরাকারবারি’, ‘ডাকাত’, ‘খুনি’, ‘জঙ্গি’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ডও ঝুলিয়ে রাখা হয়। অবস্থা এমন মনে হয় যে, অপরাধ প্রমাণিত এবং ওই ব্যক্তিই দোষী। উপরন্তু ঘটনা বা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি যদি ‘আলোচিত’ হয়, তাহলে গণমাধ্যমও হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সংবাদ মাধ্যমগুলো স্ব-স্ব টিআরপি বৃদ্ধির জন্য চাঞ্চল্যকর মুখরোচক বর্ণনায় মুখর হয়ে ওঠে।
আইনের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও হরহামেশা এমন অযাচিত ব্যাপার ঘটে চলেছে। একটি স্বীকৃত সভ্য দেশের বিচারব্যবস্থায় এটি অগ্রহণযোগ্য। ফৌজদারি আইনের মূলনীতি হলো সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ‘নির্দোষ’ হিসাবে গণ্য করা। আইনের পরিভাষায় যাকে ‘নির্দোষিতার অনুমান’ (presumption of innocence) বলা হয়। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১১(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার সংবলিত প্রকাশ্য আদালতে আইনানুযায়ী দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ‘নির্দোষ’ হিসাবে গণ্য হওয়ার অধিকার থাকবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ‘মুসলিমুদ্দিন বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ উল্লেখ করেন, ফৌজদারি বিচারের মূলনীতি হলো অভিযুক্তকে নির্দোষ হিসাবে গণ্য করা হবে এবং সেটি প্রমাণের জন্য তাকে কোনো সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে হবে না। কিন্তু তাকে দোষী প্রমাণ করার সব দায়-দায়িত্ব এককভাবে বাদীপক্ষের এবং সেটি প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ হিসাবে গণ্য হবেন; মামলাটি বিচারিক আদালত অথবা উচ্চ আদালত যেখানেই পেন্ডিং থাকুক না কেন। রায়টি ৩৮ ডিএলআর (এডি)-এর ৩১১ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত। ২০১২ সালে প্রদত্ত ‘ইয়াসিন রহমান বনাম রাষ্ট্র’ মামলার রায়েও মহামান্য আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেন, আমাদের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার প্রধান মূলনীতি হলো অভিযুক্তকে নির্দোষ হিসাবে গণ্য করা, যে পর্যন্ত সন্দেহাতীতভাবে তার অপরাধ প্রমাণিত না হয়। রায়টি ১৯ বিএলসি (এডি)-এর ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি গ্রেফতার হন। হাইকোর্ট তাকে জামিন প্রদান করে রায় দেন। ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট প্রদত্ত রায়টি ৩৯ বিএলডির ৪৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে মহামান্য হাইকোর্ট মন্তব্য করেছেন, ইদানীং প্রায়ই লক্ষ করা যায়, বিভিন্ন আলোচিত অপরাধের তদন্ত চলাকালীন পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার পূর্বেই বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যা অনেক সময় মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অ-অনুমোদনযোগ্য; এবং বিভিন্ন মামলার তদন্ত সম্পর্কে অতি উৎসাহ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং করা হয়ে থাকে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে বলা যাবে না যে তিনি প্রকৃত অপরাধী বা তার দ্বারাই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে। আদালত রায়ে আরও বলেন, গণমাধ্যমের সামনে গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা সংগত নয় যাতে তার মর্যাদা ও সম্মানহানি হয় এবং তদন্ত চলাকালে অর্থাৎ পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের পূর্বে গণমাধ্যমে গ্রেফতারকৃত কোনো ব্যক্তি বা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে এমন কোনো বক্তব্য উপস্থাপন সমীচীন নয়, যা তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে বিতর্ক বা প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
হাইকোর্ট ওই রায়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের আদালতে উপস্থাপনের আগেই গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন এবং কোনো মামলার তদন্ত চলাকালীন তদন্ত বিষয়ে কতটুকু তথ্য গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করা সমীচীন হবে সে সম্পর্কে একটি ‘নীতিমালা’ অতি দ্রুততার সঙ্গে করার ব্যাপারেও জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টও এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছেন। ‘রোমিলা থাপর বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলার রায়ে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট মন্তব্য করেন, তদন্তকালীন জনমতকে প্রভাবিত করতে রাষ্ট্রের তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যবহার তদন্তের ন্যায্যতাকে (fairness of the investigation) নষ্ট করে দেয়। রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ বিচারক নয় বা তারা দোষী ঘোষণা করার এখতিয়ারও রাখে না। আর এ প্রক্রিয়ায় পুলিশের জড়িত হওয়াটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ওই রায়টি এআইআর (২০১৮) এসসি-এর ৪৬৮৩ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত।
মনে রাখা উচিত, অনেক সময় নিরপরাধ মানুষও মামলায় জড়িয়ে পড়েন। কেউ ঘটনা ও পরিস্থিতির শিকার হন। কেউবা ষড়যন্ত্রেরও শিকার হন। প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেক মানুষেরই সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে। মানুষ হিসাবে সবারই মানবিক ও ন্যায়ানুগ আচরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
মো. আসাদ উদ্দিন : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট