রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

এভাবে যিনি পদ আঁকড়ে থাকেন তিনি দানব

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৬১ বার

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যকে উদ্দেশ করে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘আমি যতটা চিন্তা করেছিলাম, অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা তার চেয়েও খারাপ। তাদের শরীরে স্যালাইনও পুশ করা যাচ্ছে না। অনেকেই বসতে পারছে না। যে মানুষ (উপাচার্য) এই অবস্থা দেখার পরও নিজের জায়গায় অনড় থাকে, তাকে আমি মানুষ বলতে চাই না; আমি তাকে দানব বলি।’

গতকাল মঙ্গলবার শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাফর ইকবাল এ মন্তব্য করেন। এর আগে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান তিনি।

শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রাণ অনেক মূল্যবান। এমন একজন মানুষের জন্য তাদের প্রাণ নষ্ট হতে পারে না। এটা আমি অনশনকারীদের বুঝিয়েছি। তারা সেটা বুঝেছে। এ জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।’

তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে যতগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সবই অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়।’

জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি ধরেই নিয়েছিলাম, এখানে একটি মেডিক্যাল টিম থাকবে। কিন্তু এখানে কোনো মেডিক্যাল টিম নেই। শুধু তা-ই নয়, যারা তাদের টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করেছিল, তাদের গ্রেপ্তার করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে নিন্দনীয় আর কিছু নেই। আমি আশা করব, এ বিষয়গুলো যেন অবশ?্যই বন্ধ হয়; আমাদের ছেলেমেয়েদের যেন মুক্ত করে দেওয়া হয়।’

জাফর ইকবাল বলেন, ‘এই বিশ^বিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হতে দিতেন না ভিসি। নিষিদ্ধি ছিল রোড পেইন্টিং। শিক্ষা, সংস্কৃতি, আবৃত্তিসহ মুক্তবুদ্ধির চর্চায় আঁতুড়ঘর শাবিকে অনেকটা শ^াসরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। ফলে সব ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো কার্যক্রম স্তিমিত করে আনে। এসবের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের ক্রিয়েটিভিটি ও নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি হয়। সেগুলো যেন আঁতে ঘা দিত শাবিপ্রবির ভিসিকে।’

গণমাধ্যমকে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘৩ বছর আগে আমি যখন অবসরে যাই, তখন চিঠি দিয়ে লিখিতভাবে বলেছিলাম, ছাত্রদের আপনি অবহেলা করবেন না। ছাত্রদের যে ক্ষোভ আছে, তা বিক্ষোভে রূপ নেবে। তা এখন অক্ষরে অক্ষেরে ফলেছে। এটা ৩ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। যারা আন্দোলন করেছে, তারা একেবারেই সাধারণ শিক্ষার্থী। তারা সঙ্গত কারণে আন্দোলন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬টি সংগঠন ছিল। যার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা অন্য কোথাও প্রতিযোগিতায় গেলে তাদের ক্রিয়েটিভিটি ও নেতৃত্বগুণে আলাদাভাবে চেনা যেত। কিন্তু তিনি (ভিসি) একাডেমিক, শিক্ষা এসবের কিছুই বোঝেন না!’

তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আসার আগে সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। আমি আশা করি, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন, সেই কথাগুলো রাখবেন। যদি তারা তা না রাখেন, তবে কেবল আমার সঙ্গে নয়, এ দেশের প্রতিটি প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’

এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যে সুন্দর আন্দোলন করেছে, তা দেশের কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারবে না। এ আন্দোলনে দেশের সব তরুণ-তরুণী হৃদয় থেকে সমর্থন দিয়েছে। তাদের আন্দোলন থেকে কাউকে ফায়দা নেওয়ার সুযোগ দেয়নি। নিজেরাই সহযোদ্ধাদের হাসপাতালে নিয়ে গেছে, খাবার রান্না করেছে। সব তারা করেছে। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য খুব কমই আছে।’

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলাকে অত্যন্ত নৃশংস দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ কেন নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাবে? ক্যাম্পাসে পুলিশ যুদ্ধসাজে ঢুকবেই কেন?’ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার সময় শিক্ষকদের ‘নীরব’ ভূমিকার সমালোচনাও করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com