ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ায় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা-১০ আসনের সদস্য ফজলে নূর তাপস। বিধান অনুসারে আসন শূন্য হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দলগুলো এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন তাপসের আসনে নৌকার মাঝি? এক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
অবশ্য সজীব ওয়াজেদ জয় ও মুজিব সিদ্দিক ববি এখনই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্রকে ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত যদি তারা প্রার্থী না হন তাহলে বিকল্প প্রার্থীর বিষয়ে চিন্তা করবে দলটি।
ঢাকা-১০ আসন নানা বিবেচনায় আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, উচ্চবিত্তদের বাসস্থান ও ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় আসনটির দিকে বিশেষ দৃষ্টি আওয়ামী লীগের। সে কারণে তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ, প্রভাবশালী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। সূত্রমতে, এতসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা আলোচনায় রয়েছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, তাপস ইতোমধ্যেই ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আমরা এই আসনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। হাতে সময় আছে, আরও কয়েকদিন পর এই আসনের বিষয়ে মনোযোগ দেবে আওয়ামী লীগ।’
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এখনই সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী নন। তিনি সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পেছন থেকে ভূমিকা রেখে যেতে চান। তাই এখনই রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় হতে চান না। তবে দলের বড় একটি অংশ তাকে একাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে দেখতে চায়। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র হিসেবে তাদের
রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। গত বছর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জয়কে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য অনেকে দাবি করেছিলেন। সে সময় জয় আগ্রহ প্রকাশ করেননি নির্বাচনে অংশ নিতে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, জয় নির্বাচনে অংশ না নিলে সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তবে ববিও তেমন আগ্রহী নয় জানা গেছে। দলের নীতিনির্ধারকদের বড় অংশ চাইছে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে জয় কিংবা ববি আসুক। জয় না করলে ববি ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কলাবাগান ও নিউ মার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত সংসদীয় এ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে লড়াই করুক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখাপড়া করা অবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও জয় সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে মা শেখ হাসিনার জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে পীরগঞ্জে কয়েকটি জনসভায়ও অংশ নেন জয়।
শেখ রেহানার তিন সন্তানের মধ্যে বড় ববির জন্ম ১৯৭৮ সালে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে লেখাপড়া করা ববি আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআইর ট্রাস্টি।
গতকাল সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে শেখ ফজলে নূর তাপস স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বিকালে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। শূন্য হওয়া এই আসনে এখন উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধানের ১২৩ এর (৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হইলে পদটি শূন্য হইবার নব্বই দিনের মধ্যে উক্ত শূন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।