আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ তার নির্বাচনী এলাকার প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনৈতিক চর্চার অভিযোগ এনে বলেছেন, আওয়ামী লীগের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও থানার ওসিরা তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ করছেন। যদি তারা নিজেদের বদলাতে না পারেন তাহলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ তাদের দাতভাঙ্গা জবাব দেবে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদরপুর উপজেলা স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাজী জাফরুল্লাহকে প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত করায় তাৎক্ষণিক এ সভার আয়োজন করা হয়।
কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আমি খুবই মর্মাহত যে, সদরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখন ঠিক করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারি কে হবেন। এই অধিকার তাকে কে দিয়েছে?
তিনি বলেন, এই অধিকার তিনি পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দুর্বলতার কারণে। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিনি নির্ধারণ করতে চান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল কে দিবে। তার এহেন আচরণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কোনো দাতভাঙ্গা জবাব দিতে পারেনি বলে তিনি তার বক্তব্যে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি এবং মর্মাহত যে, আপনাদের এই অধিকারগুলো যদি আপনারা সঠিকভাবে পালন করাতে না পারেন তাহলে কিন্তু রাজনীতিতে আপনাদের সুবিধা হবে না।
কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, যখন একটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তার দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এ ধরনের দালালি করেন, তার কাছ থেকে সাধারণ মানুষ আইনের শাসন কিভাবে পাবেন?
একইভাবে তিনি সদরপুর থানার ওসিরও সমালোচনা করে বলেন, থানার ওসি সাহেব রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি থেকে ধরে এনে বলেন তোমরা আওয়ামী লীগ করো কেনো? নিক্সন লীগ করো, স্বতন্ত্র করো। অযথাভাবে মিথ্যা মামলায় হয়রানী করার জন্য চরমানাইর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে নেতা সুরুজ মাতুব্বর বতু মেম্বারকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ সময় তিনি বতু মেম্বারের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে আপনারা যে অপরাধ করছেন, সময় এসেছে আপনাদেরও আমরা কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো।
তিনি বলেন, নতুন বছরে আমরা নতুনভাবে ধরবো। এরপরে যারা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিবে, হামলা করবে তাদেরকে আমরা ছাড়বো না। আগামীতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রয়োজনে আমরা থানা ও ইউএনও অফিস ঘেরাও করে অচল করে দেবো।
কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের বিপক্ষে, সরকারের বিপক্ষে এসব প্রচার চলবে না। আমরা এই স্বতন্ত্র-টতন্ত্র বুঝি না। আমরা বুঝি আওয়ামী লীগ, নৌকা। আমরা বুঝি ক্ষমতা, আমরা বুঝি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার যেই নির্দেশ সেটাই পালন করতে হবে। তার নির্দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের সাথে ষড়যন্ত্র কিন্তু আগামীতে হতে দেবো না।
পথসভায় আরো বক্তব্য দেন সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফকির আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সায়েদীদ গামাল লিপু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ হোসেন খান, সদরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ মিয়া, ঢেউখালী ইউনিয়নের মিজানুর রহমান বেপারী, উপজেলা যুবলীগ নেতা প্রাণ চৌধুরী পিরু, ভাষানচরের মাসুদুর রহমান, চর নাসিরপুরের সিদ্দিকুর রহমান, আকুটের চরের আসলাম বেপারী, চরমানাইরের আইয়ুব আলী, নারিকেলবাড়িয়ার আব্দুল কুদ্দুস।
পথসভা শেষে একটা আনন্দ মিছিল উপজেলা চত্বর প্রদক্ষিণ করে। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত হওয়ায় কাজী জাফরুল্লাহকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট দেয়া হয় ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।