ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আসন্ন। এ নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দল-সমর্থিত প্রার্থীদের নাম গত রবিবার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির সমর্থন পেতে প্রার্থী-পরস্পরে যেমন প্রতিযোগিতা চলেছে, তেমনই দলের উপরমহলেও চলেছে তদবির, লবিং। এত ঝক্কি পেরিয়ে, স্নায়ুর চাপ সামলে শেষ পর্যন্ত যারা দলের সমর্থন পেয়েছেন, তাদের মনের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরও দলের নির্দেশে প্রার্থী পরিবর্তনের সংবাদ।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্কিত অনেকেই রয়েছেন। সরকারের শুদ্ধি অভিযান চলাকালে তারা এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। তাদের সমর্থন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা ক্ষুব্ধ। এমনকি স্থানীয় একাধিক সাংসদও তাদের আসনভুক্ত এলাকার অনেক প্রার্থীর ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক কিছু নেতা ও কয়েকজন এমপি গত সোমবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এসব বিষয় তুলে ধরেন।
সূত্রের খবর, তারা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে, তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই তাদের আসনভুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনীতদের মধ্যে বিতর্কিত অনেকেই আছেন। এ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সূত্র জানায়, ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা-১১ আসনের এমপি একেএম রহমতুল্লাহ ছাড়াও তিনজন এমপি সে সময় উপস্থিত ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে এক সাংসদ জানান, বিতর্কিতরা দলীয় সমর্থন পাওয়ায় খোদ সভাপতিও ক্ষুব্ধ। যারা দেখা করতে গিয়েছিলেন তারা বলেছেন, যেসব ওয়ার্ডে বিতর্কিতরা দলীয় সমর্থন পেয়েছেন, সেসব ওয়ার্ডে যেন উন্মুক্ত প্রার্থী দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। ওই এমপি জানান, কিছুদিনের মধ্যেই তারা আবার দলের সভাপতির সঙ্গে দেখা করবেন।
গত দুদিনে ৪টি ওয়ার্ডে মনোনীত প্রার্থীর পরিবর্তন এনেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে একটি ওয়ার্ডে তো তিনবার ঘোষণা করা হয় প্রার্থী। এ ছাড়া কিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলটির প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হতে পারে, এমন সংবাদে আতঙ্কে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা দলের সমর্থন টিকিয়ে রাখতে এখনো বিভিন্নভাবে লবিং-তদবির অব্যাহত রেখেছেন।
গত রবিবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দল-সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। তবে এর পর রাতেই প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, তিনটি ওয়ার্ডে দল মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উত্তর সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্বঘোষিত প্রার্থী ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি মুরাদ হোসেনকে বাদ দিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতুকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। এর পর সোমবার রাতে আবারও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ইকবাল হোসেন তিতু নয়, এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী মুরাদ হোসেনই।
এ ছাড়া দক্ষিণ সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম আশরাফ তালুকদার। তিনি এই ওয়ার্ডটির বর্তমান কাউন্সিলর। এর আগে এখানে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ম. ম. মামুন রশিদ শুভ্রকে সমর্থন দিয়েছিল দল।
একই সিটিতে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন। আগে প্রার্থী হিসেবে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ইলিয়াস রশীদকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার রাতে উত্তর সিটির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্বঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তন করে শফিকুল ইসলাম নামে একজনকে প্রার্থী দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এদিকে প্রার্থী ঘোষণার পর আবার এমন পরিবর্তনে আতঙ্ক কাজ করছে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে। গতকাল দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়া এক কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার এটা কেমন প্রক্রিয়া তা বোধগম্য নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অপমানিত হচ্ছি।
একই কথা বলেন দক্ষিণ সিটিতে দলীয় সমর্থন পাওয়া এক কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি বলেন, সমর্থন দিয়ে আবার পরিবর্তন করা খুবই খারাপ। সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে এর মাধ্যমে। নির্বাচনী কাজ না করে মনোনয়ন টিকিয়ে রাখতেই তাই আমাদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবদুর রহমান বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে দল একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সমর্থন দেবে। সুতরাং কাউন্সিলরদের মধ্যে উন্মুক্ত নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।