দেশ বরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলা গানের শ্রোতাদের তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে ১০ হাজারেরও বেশি গানের কণ্ঠ দিয়েছেন জীবন্ত এই কিংবদন্তি। পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ অসংখ্য সম্মাননা। বর্তমানে এই শিল্পী ব্যস্ত আছেন স্টেজ শো নিয়ে। গান ও সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে -এর মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
নতুন গানে এখন আর আপনাকে খুব একটা পাওয়া যায় না। প্লেব্যাকের সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছেন। এর বিশেষ কোনো কারণ আছে?
পাওয়া যায় না, বলা যাবে না। কিছুদিন আগেই তো একটি গান প্রকাশ হলো। আর এখন কি আমাদের নিয়ে আগের মতো গান হয়? ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ছবির গানও এখন অন্যরকম হয়ে গেছে। এখন আর আমাকে দরকার হয় না। এখন মেলোডিবেজ গান নেই বললেই চলে। ইচ্ছে আছে নতুনদের কথা, সুরে-সংগীতে গান গাওয়ার। এরই মধ্যে কিছু কাজ করেছি। সামনে আরও গান করতে চাই। দেখা যাক কি হয়।
শুনলাম, এন্ড্রু কিশোরের জন্য আয়োজিত কনসার্টে গাইবেন। এটি কবেঅনুষ্ঠিত হবে?
এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার সহায়তায় আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের গেটওয়ে থিয়েটারে কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হবে। সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের পাশাপাশি ওখানকার কয়েকটি সংগঠন মিলে এটি আয়োজন করছে। শুনেছি, আমার পাশাপাশি এতে অংশ নেবেন সৈয়দ আবদুল হাদীসহ আরও অনেকে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক টাকার প্রয়োজন। এটা সবার পক্ষে একা বহন করা সম্ভব না। আমরা শিল্পীরা যেভাবে পারছি, ওর পাশে দাঁড়িয়েছি।
অসুস্থ শিল্পীদের সহায়তায় কনসার্ট…
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গানের রয়্যালিটি হিসেবে আমরা কোটি কোটি টাকা পাওনা আছি। সেই টাকা দিলে আমাদের হয়তো আর কারও কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করতে হয় না। গ্রামীণফোন থেকে শুরু করে সব ফোন কোম্পানিগুলো আমাদের যে গান বাজাচ্ছে, সেই প্রাপ্য পাওনাটুকু দিয়ে দিলে কি কারও কাছে যেতে হয়? গানের রয়্যালিটি নাই, রেডিওতে নাই, টিভিতে নাই। পৃথিবীর কোনো দেশেই তো এমন হয় না। শুধু আমাদের বাংলাদেশেই শিল্পীর মূল্যায়ন নেই। এরপর ইউটিউবেও আমাদের গান দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে। এখানেও কারও অনুমতি বা প্রাপ্য সম্মানি নেই। অথচ এই শিল্পীদের গান দিয়ে তারা লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছে।
এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?
আমাদের শক্ত কোনো সংগঠন নেই, তাই এসব ব্যবসায়ীরা ফয়দা লুটছে। আর কারও একার পক্ষে এই আন্দোলন করে টিকে থাকা কষ্টকর। তাই মুখ বুঝে আছি। আশ্চর্য হয়েছি, আমার সব গান ইউটিউবে আছে। ওরা আমার এত গান কোথা থেকে পেলো, ভেবে আমি নিজেও অবাক হই। এভাবে চললে শিল্পীদের কাছে টাকা আসবে কীভাবে?
পুরোনো গানগুলো নিয়ে নতুন কোনো ভাবনা আছে?
না, পুরোনো গানগুলো নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে নেই। পুরোনো গান, পুরোনো গানই, ওর মেজাজটাই আলাদা। নতুন সংগীতে করলে কি আর আগের মতো হয় নাকি? সেই মিউজিকটাই তো পাবো না। এখন তো সব ডিজিটাল মিউজিক। কিন্তু আমাদের সময় বেহালা, তবলা, একতারা, সেতারসহ অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান রেকর্ড করা হতো। এখন কি এমনটা হয়? সেই মিউজিকটাই পাওয়া যাবে না। পুরোনো গান নতুন করে হাজার করে গাইলেও, সেই মেজাজটা পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আমি অনেক পুরোনো গান নতুন সংগীতে প্রকাশ করে দেখেছি। সে রকম আর হয় না।