নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর অশান্ত হয়ে উঠেছে। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে আচড়ে পড়ছে বিশাল বিশাল ঢেউ। উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে টিকতে না পেরে গভীর সমুদ্রে ইলিশ আহরণে থাকা শত শত ফিশিং ট্রলার বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার কারণে সাগর থেকে উপকূলের ফিরে আসা এসব ফিশিং ট্রলার বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, ভেদাখালীর অফিস খাল, কটকা, কচিখালী, হিরন পয়েন্ট, বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ঘাট, শরণখোলার রাজেশ্বর, পূর্ব খোন্তাকাটা, রাজৈর, মোংলা, রামপাল,মোড়েলগঞ্জ, কুমারখালী, পিরোজপুরের পাড়েরহাট, রবগুনার পাথরঘাট, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, আলীপুর, মহিপুরে অবস্থান নিয়েছে।
আবহওয়া বিভাগ বলছে, লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে উপকূলীয় ১৪ জেলায় দুই থেকে চার ফুটের অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। নিম্নচাপের কারণে মোংলাসহ চার সমুদ্র বন্দরকে ৩ নাম্বার সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।
এই অবস্থায় অবস্থায় বাগেরহাটের নদনদীতে পানি হু হু করে বাড়ছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত বাগেরহাটের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলসহ মোড়েলগঞ্জ পৌর এলাকা পানিতে প্লাবিত হবার খবর পাওয়া গেছে।
বাগেরহাটের শরণখোলার রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে টিকতে না পেরে প্রায় অর্ধশত ফিশিং ট্রলার রবিবার থেকে ঘাটে নোঙর করে রয়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে অনেক ট্রলারের জাল ছিড়ে গেছে। সেই ছেড়া জাল মাছের আড়তের চাতালে বসে মেরামত করতে দেখা গেছে জেলেদের।
এসময় কথা হয় এফবি রহিমুল্লাহ ট্রলারের মাঝি আউয়াল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, সাগরে পাহাড় সমান ঢেউ। জাল ফেলার উপায় নেই। ঢেউয়ে পড়ে যেকোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই তারা চলে এসেছেন।
এফবি মা বুশরা ট্রলারের মালিক বেলায়েত খান জানান, ঢেউয়ের আঘাতে সাগরে পেতে রাখা অনেক ট্রলারের জাল ছিড়ে গেছে। তার ট্রলারের জালও ছিড়েছে।
এফবি মহিবুল্লাহ ট্রলারের মালিক জামাল হাওলাদার জানান, তার ট্রলার এখনও ঘাটে ফেরেনি। সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে তার ট্রলারটি।
সমুদ্রগামী মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার জানান, দীর্ঘ ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে গত ২৩ জুলাই থেকে সাগরে শত শত ফিশিং ট্রলার ইলিশ আহরণ শুরু করে। প্রথমদিকে সাগরে তেমন ইলিশ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সব ট্রলারই কমবেশি মাছ পাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে আবহাওয়া খারাপ হয়ে বঙ্গোপসাগর অশান্ত হয়ে উঠেছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে আচড়ে পড়ছে বিশাল বিশাল ঢেউ। সাগরে জাল ফেলতে পারছে না জেলেরা। উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে টিকতে না পেরে গভীর সমুদ্রে ইলিশ আহরণে থাকা শত শত ফিশিং ট্রলার বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন জানান, বঙ্গোপসাগর অশান্ত হয়ে ওঠায় বাগেরহাট জেলার প্রায় ১৩ হাজার জেলে ফিশিং ট্রলার নিয়ে সাগর ছেড়ে এখন সুন্দরবনসহ কূলে অবস্থান করছে। শরণখোলার শতাধিক ট্রলার সুন্দরবন ও উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় নিরপাদ আশ্রয় নিয়েছে। ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই ৬৫ দিনের অবরোধ গেল। এর পরে সামনে অক্টোবরে আসছে ২২ দিনের অবরোধ। তাছাড়া, মৌসুমের বেশিরভাগ সময় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর থাকে অশান্ত। এসময় মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এতে ইলিশ মৌসুমের পাঁচ মাসের অর্ধেক সময় চলে যায় অবরোধ আর দুর্যোগে। যার ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা লোকসানে পড়তে হচ্ছে জেলে-মহাজনদের। লোকসানে পড়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেকে পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তাই জেলে-মহাজনদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে ৬৫ দিনের অবরোধ বাতিল করে একসঙ্গে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের অবরোধ আরও কয়েকদিন বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানান এই মৎস্যজীবী নেতা।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চর জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ কুমার মজুমদার জানান, বৈরী আবহাওয়া কারণে চারদিন ধরে সাগর ফুসে উঠছে। এ অবস্থায় সাগর থেকে কয়েকশ’ ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়ে থাকা এসব ট্রলার ও জেলেদের নিরাপত্তার জন্য বনরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছেন।