নবাব স্যার সলিমুল্লাহ (১৮৭১-১৯১৫ সাল) বাংলার সর্বাপেক্ষা বড় জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও, বিপুল অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্যের মাঝে বড় হয়েও, তার স্বভাব কখনোই আয়েশ-বিলাসের দিকে ঝুঁকে পড়েনি, বরং উপমহাদেশের স্ব-জাতি মুসলমানদের দুর্গতি থেকে কিভাবে উত্তরণ করা যায়, তা নিয়েই ছিল সদা চিন্তিত, সচেষ্ট এবং নিবেদিত।
১৯০৫ সালে, এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা খুব তীব্র হয়ে ওঠে এবং এই তীব্রতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল বঙ্গভঙ্গের ঘটনা। তখন বাঙ্গাল, বিহার ও উড়িষ্যার জনসংখ্যা ছিল সাত কোটি আট লাখ এবং এই প্রদেশগুলো একই গভর্নরের অধীনে ছিল। লর্ড কার্জন এবং তার উপদেষ্টারা এত বিশাল জনসংখ্যাকে একক শাসন-ব্যবস্থাপনার অধীনে রাখা কঠিন বলে মনে করেছিলেন, তাই তারা ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা দেন এবং পূর্ব বাংলার মুসলমানদের ছয় বছর যাবৎ নিজেদের অবস্থার উত্তরণচিন্তা ও উন্নতি-চেষ্টার সুযোগ তৈরি হয়। সম্ভবত খুব কম লোকই জানেন যে, এই বিভাগ প্রক্রিয়ার মূলে নবাব সলিমুল্লাহর ভূমিকা ছিল প্রধান। তিনিই ভাইসরয়কে ব্যাখ্যা করেছিলন কিভাবে হিন্দুরা মুসলানদের কাছ থেকে তার ন্যায্য অধিকার পর্যন্ত আত্মসাৎ করে নিচ্ছে এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যাতে মুসলমানদের ধর্ম, ভাষা শিক্ষা, সংস্কৃতি সবই ধ্বংস হচ্ছে।
জীবনীকার ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ লিখেছেন : নওয়াব সলিমুল্লাহ ছিলেন বঙ্গ-বিভাগ-নীতির সবচেয়ে বেশি সক্রিয় সমর্থক। যেদিন নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হলো (১৬ অক্টোবর, ১৯০৫), সে দিন থেকেই তিনি এর ভিত্তিকে দৃঢ় করা, এর উন্নতি বিধান করা এবং এর সুযোগ-সুবিধা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার সংকল্প গ্রহণ করেন; এর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেন। নতুন প্রদেশের ঘোষণা কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনই তিনি ঢাকার নর্থব্রুক হলে ‘প্রভিন্সিয়াল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন। কংগ্রেসীদের, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯০৬ সালের ১৬ অক্টোবরে ঢাকা, ময়মনিসংহ, ফরিদপুর ও সিলেটে বঙ্গ-বিভাগের প্রথম বর্ষপূর্তি জাঁকালোভাবে পালিত হয়। পক্ষান্তরে কংগ্রেসী ও হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা ওই দিনটিকে শোক দিবসরূপে পালন করেন। বঙ্গ-বিভাগের প্রতি জনসাধারণের পূর্ণ আস্থা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সলিমুল্লাহ ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন স্থানে জনসভা করেন। এ সব জনসভার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ করেন; হিন্দু জমিদাররা বঙ্গ-বিভাগ রদ ও স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি মুসলিম প্রজাদের সমর্থন আদায়ের জন্য নানাভাবে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন; করজের টাকা আদায়ের জন্য তাদের উপর উৎপীড়ন করতে থাকেন; হিন্দু ভলানটিয়ারগণ বিদেশী মাল বর্জনের জন্য তাদের ওপর বল প্রয়োগের পন্থা অবলম্বন করেন। কিন্তু মুসলমান, নমশূদ্র ও মাড়োয়ারিরা স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান করেনি। এ সবের ফলে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা সংঘটিত হয়; নিরীহ মুসলমানরা সাজাপ্রাপ্ত হয়।’ (নওয়াব সলিমুল্লাহ : জীবন ও কর্ম : পৃ. ১৭৯)
অগত্যা অবশেষে, ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হয় এবং সমগ্র মুসলমান জাতি এবং বিশেষ করে নবাব সলিমুল্লাহ এতে দারুণভাবে আহত হন। বঙ্গভঙ্গের পরবর্তী মুসলমানদের এই প্রাপ্ত স্বাধীনতা মাত্র ছয় বছরের জন্য ছিল বটে, কিন্তু ভবিষ্যৎ ইতিহাসের নির্মাণে এই সংক্ষিপ্ত কালের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
বঙ্গভঙ্গের পরে হিন্দুদের জোরালো বিরোধিতা এবং মুসলমানদের প্রতি কুসংস্কার এবং বিদ্বেষ দেখেই মূলত নবাব সলিমুল্লাহ প্রথম এ বিষয়টি ভেবেছিলেন যে, মুসলমানদের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের খুবই প্রয়োজন। এই ধারণা অতঃপর বাস্তব রূপ নিতে শুরু করে। একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গৃহীত হয় এবং নবাব মহসিন-উল-মুলক, ওয়াকার-উল-মুলক এবং জাতির অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পরামর্শে একটি স্মারকলিপি প্রস্তুত করা হয় এবং একটি প্রতিনিধিদল গভর্নর জেনারেলের কাছে তা পেশ করে। ওই স্মারকলিপিতে মুসলমানদের কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব দেয়ার দাবি জানানো হয়, পৃথক নির্বাচনের ওপর জোর দেয়া হয়, সরকারি চাকরিতে ন্যায্য অংশীদারিত্ব তলব করা হয় এবং মিউনিসিপ্যাল ও ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডে মুসলমানদের জন্য আসন সংরক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়। একই সভায় মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠনের বিষয়টি নিয়েও আলাপ-আলোচনা হয় এবং অবশেষে ৩০ ডিসেম্বর ১৯০৬ সালে, সর্বসম্মতিক্রমে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’-এর সাংগঠনিক ভিত্তি স্থাপিত হয়।
এই ঐতিহাসিক সভা নবাব সলিমুল্লাহর আমন্ত্রণেই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এই সভার সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ভার তারই দায়িত্বে ছিল।
এই সভায় নবাব সলিমুল্লাহ একটি স্মরণীয় ভাষণ দেন। সভায়, ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়, যাতে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়, যার কাজ ছিল মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার, তাদের চাহিদা এবং আকাক্সক্ষা সরকারের কাছে উপস্থাপন। এমন সঙ্কটময় সময়ে, মুসলিম লীগের মতো রাজনৈতিক সংগঠনের অস্তিত্বে আসা ছিল একটি স্মরণীয় অর্জন। অবশ্যই, এটা নবাব সাহেবের গৌরবময় কৃতিত্ব যে, তার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ভারতকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে এবং পরে যা পাকিস্তানকে অস্তিত্বে আনার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
নবাব সলিমুল্লাহর কার্যক্রম শুধু রাজনৈতিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি মুসলমানদের উন্নয়নে অন্যান্য ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদান করেছিলেন। তখন ইসলামী মাদরাসাগুলোর পাঠদান রীতি অনেক সেকেলে হয়ে পড়েছিল। নবাব সলিমুল্লাহ শামসুল উলামা নসর ওয়াহিদকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠান ইসলামী শিক্ষার কারিকুলাম পর্যালোচনা করার জন্য, যাতে শিক্ষার সংস্কার করে মুসলমানদের মধ্যে নবচেতনার সঞ্চার করা যায়। ১৯০৬ সালে তিনি ঢাকা শাহবাগে মুসলিম এডুকেশনাল কনফারেন্সের আহ্বান করেন, যা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র ভারতের মুসলমানদের জাগরণের পটভূমি প্রমাণিত হয়েছে। ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ লেখেন, ১৯০৬ সালের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল ঢাকার শাহবাগে তার সভাপতিত্বে এ সমিতির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতিত্বের দীর্ঘ ভাষণে তিনি তদানীন্তন শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেন এবং বিভিন্ন পেশার জন্য স্বতন্ত্র পাঠসূচি অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে সমাজের শ্রেণিভিত্তিক একটি শিক্ষাপদ্ধতি পেশ করেন। সম্মেলনে মুসলিম শিক্ষোন্নয়নবিষয়ক বিশটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। তন্মধ্যে আলীগড় কলেজ-বোর্ডিং হাউজের নমুনায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য সে কলেজের পাশে একটি ‘মোহামেডান হল’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল অন্যতম। এ প্রস্তাবিত হল বা হোস্টেলের জন্য সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী যথাক্রমে ১,৪৬,৯০০ টাকা ও ৩৫, ১৫০ টাকা দানের কথা ঘোষণা করেন। এ সভায় মাদরাসা শিক্ষা সংস্কারের জন্য শামসুল উলামা আবু নসর ওয়াহিদকে সেক্রেটারি করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এ শিক্ষাসমিতির স্থায়ী সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী।’ (পৃ. ৫৯)
১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি, বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণার অল্প কিছু দিন পরেই বড়লাট হার্ডিঞ্জ খুব সম্ভব কিছুটা সুযোগ-সুবিধে দিয়ে পূর্ববঙ্গবাসীদের ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। ২০ জানুয়ারি কার্জন হলে বড়লাটের এক দরবার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বড়লাটকে চারখানা মানপত্র প্রদান করা হয়। ভাইসরয়কে সংবর্ধনা দেয়ার উদ্দেশ্যে নওয়াব বাহাদুরের উদ্যোগে প্রদেশের সম্ভ্রান্ত মুসলমানদের তরফ থেকে স্থানীয় শাহবাগে এক জাঁকালো উদ্যান-সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় ৩১ জানুয়ারি নওয়াব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে ১২০ পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের ১৯ জন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির এক প্রতিনিধিদল বড়লাটের সঙ্গে দেখা করেন; এক মানপত্রে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি-উদ্ভূত মুসলমানদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করেন এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ সংক্রান্ত কয়েকটি দাবিদাওয়াও পেশ করেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিও ছিল অন্যতম।
প্রতিনিধিদল মানপত্রে বলেন, হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানরা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ-সুবিধে গ্রহণ করেনি বললেই চলে। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে তাদের শিক্ষাগত উন্নতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও তারা ভাইসরয়ের কাছে ব্যক্ত করেন। লর্ড হার্ডিঞ্জ তাদের এ আশ্বাস দেন যে, ভারত সরকার এটা হৃদয়ঙ্গম করেছেন যে, শিক্ষাই মুসলমানদের মুক্তির একমাত্র পথ; তাই গভর্নমেন্ট সর্বান্তঃকরণে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত সচিবের কাছে সুপারিশ করবেন। ১৯১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারির এক ইশতিহারে ভারত সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ ঘোষণা করে। ভারত-সচিবের অনুমতিপ্রাপ্তির পর ভারত সরকারের ৪ এপ্রিলের (১৯১২) এক ঘোষণায় বেঙ্গল গভর্নমেন্টকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ স্কিম রচনার জন্য অনুরোধ করা হয়। ইশতিহারে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামী শিক্ষা অনুষদ’ স্থাপনের কথাও উল্লেখ করা হয়। ১৯২১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটি কমিটির অধীনে ইউনিভার্সিটির পাঠ্যসূচি রচনার উদ্দেশ্যে ২৫-টি সাব-কমিটি গঠিত হয়। ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ বিষয়ের সাব-কমিটির সঙ্গে নওয়াব সলিমুল্লাহ ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। (প্রাগুক্ত : পৃ. ৭৫-৭৬)
মুসলিম উপমহাদেশের আর কোনো সমকালীন নেতা এত অর্থ-সামর্থ্য দিয়ে ও এত নিঃস্বার্থ অনুরাগসহকারে জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন বলে মনে হয় না। বঙ্গ প্রেসিডেন্সির ওপর তার চেয়ে বেশি প্রভাব আর কোনো মুসলিম নেতার ছিল বলে মনে হয় না। বঙ্গের বাইরে তার চেয়ে বেশি পরিচিত বাংলার আর কোনো লোক তখন নিঃসন্দেহ ছিল না। তার বংশের কেউ ইতঃপূর্বে রাজনীতি করেননি। অর্থ-সম্পদের দিক থেকে সলিমুল্লাহ তার পরিবারের পূর্বসূরিদের সমকক্ষ না হলেও শ্রদ্ধা ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি জনগণ ও গভর্নমেন্টের চোখে তার পূর্বপুরুষদেরকে ছাড়িয়ে যান।
আজ থেকে প্রায় শতাধিক বছর আগে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তবুও তার স্মৃতি ভাস্বর হয়ে রয়েছে। তার নামে নামাঙ্কিত ঢাকার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, সলিমুল্লাহ কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, সলিমুল্লাহ এতিমখানাই শুধু তার স্মৃতি বহন করছে না, বরং নতুন প্রদেশ হওয়ার পর তার ও তার সহযোগীদের উদ্যোগে সরকারি ব্যয়ে তৈরি রমনায় বড় বড় দালানকোঠা তথা গোটা নতুন ঢাকাই তাদের কীর্তি ঘোষণা করছে। কার্জন হল, ঢাকা কলেজ ভবন ও ঢাকা কলেজ হোস্টেল (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান এলাকা), পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক গভর্নমেন্টের প্রেস ভবন (বর্তমানে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি), পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক কাউন্সিল ভবন (বর্তমানে হাইকোর্ট), লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কুঠি (বর্তমানে উপাচার্য ভবন), ডাকবাংলো ইত্যাদি নতুন প্রদেশের পরিসরে নির্মিত হয়।
রাজনৈতিক খ্যাতি, জাগতিক সম্মান তার কাম্য ছিল না। কিন্তু দুঃখী পূর্ববঙ্গবাসীর জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম নেতা ও উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান নেতায় পরিণত হন। লখনৌ থেকে প্রকাশিত ‘আসরে-এ- জাদীদ’ এর (আগস্ট, ১৯০৭) সম্পাদকীয়-এ তাকে মূল্যায়ন করে লিখেছে : পূর্ব বাঙলার লোকদের এ জন্য গর্ববোধ করা উচিত যে, তারা এমন একজন বুদ্ধিমান নেতার ছায়াতলে বাস করছেন, যিনি সর্বক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব দিতে ও সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। সারা ভারতের মুসলমানদেরও এ জন্য আনন্দিত হওয়া উচিত যে, তাদের ধর্মে এমন একজন উদারচেতা রয়েছেন, যার মাথায় জাতির জন্য ফলপ্রসূ-চিন্তাচেতনা জাগরূক রয়েছে, যার মধ্যে গোটা ভারতকে প্রভাবান্বিত করা ও সবাইকে আকৃষ্ট করারও যোগ্যতা রয়েছে।