রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন

রাসূল সা:-এর অনুসরণেই রয়েছে কল্যাণ

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৪৩ বার

আমি আমার বিশ্বাস থেকে আলেমদের ভালোবাসি। আলেমরা হলেন নবী-রাসূলদের উত্তরাধিকারী। মসজিদ মিশনের দায়িত্ব পালনের কারণে আমার কাজ ছিল মসজিদ ও আলেমদের সাথে। দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি সিরাত আলোচনায় শ্রোতা হিসেবে গিয়েছিলাম রাইনখোলা জামে মসজিদে। মাগরিবের পর কুরআন তিলাওয়াত ও হামদ-নাত পেশের পর সিরাতের ওপর আলোচনা করেন বরেণ্য আলেম ড. মাওলানা হাবিবুর রহমান। তিনি এশা পর্যন্ত তার আলোচনায় কুরআন ও হাদিস থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি পেশ করেন। এখানে তার আলোচনার সারসংক্ষেপ আলোচনার চেষ্টা করছি।

প্রথমেই তিনি মুহাম্মদ সা:-এর পরিচয় তুলে ধরেন। মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী, তারপর আর কোনো নবী বা রাসূল নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী- ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নয়; বরং আল্লাহ তায়ালার রাসূল এবং নবীদের সিলমোহর (শেষ নবী), আল্লাহ তায়ালা সর্ব বিষয়ে অবগত।’(সূরা আহজাব-৪০) এখানে পুরুষের পিতা নয় বলা হয়েছে। কন্যাসন্তান ছাড়া তাঁর সব পুত্র অতি শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। মানুষ হওয়ার সাথে সাথে তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল। তাঁর বাণী- ‘মুহাম্মদ একজন রাসূল বৈ আর কেউ নন, তার আগে অনেক রাসূল গত হয়েছেন। যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা উল্টা দিকে ফিরে যাবে? মনে রেখো, যারা ফিরে যাবে তারা আল্লাহর কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সূরা আলে ইমরান-১৪৪) তাই আনুগত্য ব্যক্তি মুহাম্মদ সা: নয়, তাঁর আনুগত্য হতে হবে রাসূল হিসেবে এবং সেটি কিয়ামত পর্যন্ত সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
দ্বিতীয়ত, মুহাম্মদ সা:-কে প্রেরণের উদ্দেশ্য তিনি ব্যাখ্যা করেন। পৃথিবীতে যত নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান রয়েছে তার ওপর আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই আল্লাহপাক রাসূল সা:-কে পাঠিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী- ‘তিনি তাঁর আপন রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যাতে সব দ্বীন বা ব্যবস্থাপনার ওপর তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করতে পারেন, মুশরিকরা যতই অপছন্দ করুক না কেন।’ (সূরা সফ-৯) এ ছাড়া সূরা তওবা ৩৩ ও ফাতাহ ২৮ একটু হেরফের করে একই কথা ব্যক্ত করেছেন। মুহাম্মদ সা:-এর সমগ্র জীবন এই লক্ষ্যেই অতিবাহিত হয়েছে। তিনি মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন, তাদেরকে সংগঠিত করেছেন ও পরিশুদ্ধ করেছেন এবং সাথে সাথে তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াতে নিয়োজিত করেছেন। দ্বীন কায়েমের এই প্রচেষ্টাকে তিনি সব কিছুর ওপর অগ্রাধিকার দান করেছেন। আল্লাহর দাবিও তাই। তাঁর বাণী, ‘হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাকো এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ করো- এসব যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের কাছে প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো, আল্লাহ ফাসেকদের কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না।’ (সূরা তওবা-২৪)

নবী-রাসূলদের মৌলিক কাজ ছিল আল্লাহর জমিনে তাঁর দ্বীন কায়েম করা এবং এই একটি কারণেই সব নবী-রাসূল নানাভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালেও যারা হকের ওপর চলতে গেছেন তারাও জেল-জুলুমের মুখোমুখি হয়েছেন। ইমাম আজম আবু হানিফা রহ. শাসকের পক্ষে কাজির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে কারারুদ্ধ হতে হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ইমাম বুখারি রহ.-কেও শাসকের রোষানলে দেশ থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়। দ্বীন কায়েমের পথ কখনোই ফুল বিছানো ছিল না। এক কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে দ্বীনের দায়ীদের অগ্রসর হতে হয়েছে। বাতিলের জুলুম-নির্যাতনই প্রমাণ করে তারা নবী-রাসূলদের দেখানো পথেই রয়েছেন।

যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকেন তাদেরকে রাসূল সা:-এর আদর্শে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হয়। আল্লাহর রাসূল সা:-এর চেয়ে উত্তম আদর্শ আর নেই। আর আল্লাহর ঘোষণাও এমনই- ‘তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে- এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ ও পরকালের (মুক্তির) আশা করে এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (সূরা আহজাব-২১) যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ এবং পরকালে জান্নাতের প্রত্যাশা করে তাদেরকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সা:-কে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। মানার ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য ক্ষমা করা হবে না। মদিনায় এক মুহাজির ও আনসার সাহাবির মধ্যে ক্ষেতে পানি দেয়া নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। তারা নিজেরা সমাধানে ব্যর্থ হয়ে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে পেশ করেন। রাসূলুল্লাহ সা: ফায়সালা দেন যে, যার জমি নালার নিকটে সে আগে নেবে। এতে আনসার সাহাবি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বলেন, রাসূল সা:-এর আত্মীয় হওয়ার কারণে এমন ফায়সালা দান করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আয়াত নাজিল হয়- ‘(হে নবী), তোমার মালিকের শপথ, এরা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের যাবতীয় মতবিরোধের ফায়সালায় তোমাকে (শর্তহীন) বিচারক মেনে নেবে, অতঃপর তুমি যা ফায়সালা করবে সে ব্যাপারে তাদের মনে কোনো দ্বিধাদ্ব›দ্ব থাকবে না এবং তোমার সিদ্ধান্ত তারা সর্বান্তকরণে মেনে নেবে।’ (সূরা নিসা-৬৫)
ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আজকের এই দিনে সিরাতুন্নবী সা: উপলক্ষে আলোচনা তখনই সার্থক হবে যখন আমরা আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ সা:-এর আদর্শ পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে সক্ষম হবো। সালাতুল এশার পর মসজিদের সম্মানিত খতিব আলহাজ মুফতি শাহ আলম নূর তার সংক্ষিপ্ত আলোচনায় নবী মুহাম্মদ সা: এবং তাঁর উম্মতকে শ্রেষ্ঠতম আখ্যায়িত করে বলেন, আল্লাহপাক স্বয়ং তাঁর নবী সা:-কে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও আমাদের শ্রেষ্ঠতম উম্মত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের কাজ হলো মানুষকে ভালো ও কল্যাণের দিকে ডাকা এবং অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখা। ভালো কাজের প্রসার এবং মন্দ কাজ দূর হওয়া তখনই সম্ভব যখন আল্লাহর দ্বীন সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

খতিব মহোদয় রাসূলের প্রতি ভালোবাসা শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে রাসূল সা:-এর সুন্নত পুরোপুরি অনুসরণের জন্য তাগিদ দেন। কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, রাসূলের অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর ভালোবাসা প্রাপ্তি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী- ‘বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান-৩১)
খতিব বলেন, বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ অপরিসীম। বান্দা যখন মন্দ কাজে ইচ্ছা পোষণ করে তখনই আল্লাহ গুনাহ দেন না; এমনকি অন্যায় করার পরও বান্দার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করেন (তওবা)। পক্ষান্তরে ভালো কাজের নিয়ত করার সাথে সাথে বান্দার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয় এবং ভালো কাজ করলে তার সওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়।

লেখক : প্রাক্তন কলেজশিক্ষক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com