সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন

মেসুত ওজিল : নায়ক থেকে মহানায়ক

স্পোর্টস ডেস্ক ‍॥
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৬৯ বার

মেসুত ওজিলকে মনে আছে? অবশ্য তাকে ভুলবেন কী করে। যে সব কীর্তি তিনি গড়েছেন, তাতেই ইতিহাসে চির অম্লান হয় থাকবে তার নাম। তবে প্রায় এক যুগ জার্মানির জার্সি গায়ে বিশ্ব ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করার পরও শেষটা হয়েছে ‘নোংরা’ রাজনীতির শিকার হয়ে। আধুনিকতার জয়গান গাওয়া জার্মানির বর্ণবাদী বৈষম্যে মুড়িয়ে জোরপূর্বক অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে মেসুত ওজিলকে।

সাধারণত ফুটবলাররা যখন ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করে, সেই সূর্য সময়েই নিস্তেজ হতে হয়েছে ওজিলকে। মাত্র ২৯ বছর বয়সে অবসরের ঘোষণা দিতে হয়েছে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডারকে। আলো ঝলমলে ক্যারিয়ারের শেষটা হয় তার দোষের বোঝা মাথায় নিয়ে। ধর্মের প্রতি তার দুর্বলতাকে পুঁজি করে নোংরা খেলায় মাতে জার্মান ফুটবল। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বলিরপাঠা বানায় মেসুথ ওজিলকে।

ঘটনাটা গত ২০১৮ বিশ্বকাপের। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয় জার্মান দলকে। আগের আসরের চ্যাম্পিয়নরা উঠতে পারেনি শেষ ষোলতেও, বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। এমন বাজে পারফরম্যান্সের প্রতিক্রিয়ায় আগুন জ্বলে উঠে সমর্থকদের মনে, রাস্তায় নেমে আসে তারা। বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা এক হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে জার্মান ফুটবলের বিপক্ষে। ফলে তখন দায় এড়াতে এই কূটচাল চালে জার্মান ফুটবল।

রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানির বিদায়ের পর সব দোষ এসে পরে ওজিলের ঘাড়ে। জার্মান সমর্থক থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ সবাই প্রকাশ্যে ওজিলকে এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী করতে থাকেন। আঘাত করতে থাকে তার ধর্মীয় অনুভূতিতে, আক্রমণ করে তার পিতৃভূমিকে লক্ষ্য করে। এমনকি শরণার্থী ও বেইমানও বলা হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত আর অপমান সহ্য করতে পারেননি। নিজের টুইটারেই ঘোষণা করে দেন অবসরের কথা।

সেই সাথে উগড়ে দেন ভেতরের ক্ষোভ, দুঃখ, অপমানের জ্বালা। যেখানে জার্মানের হয়ে তার আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা আর কীর্তির কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকেই একটা দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। আমি ট্যাক্স দিই জার্মানিতে। আমার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের কাজ হয় জার্মানিতে। কিন্তু তার পরেও জার্মানি আমাকে আপন করে নিতে পারল না। কারণ আমি মুসলিম বলে।’

যেখানে মুসলিম হওয়ায় তার প্রতি এমন বিদ্বেষমূলক আচরণ, দাবি করে ওজিল বলেন, ‘যখন আমি দেশের হয়ে জিতেছি তখন আমাকে বলা হয়েছে জার্মান। কিন্তু যখন হেরেছি তখন বলা হয়েছে আমি অভিবাসী। এই দেশের জন্য আমি আমার সবটা নিংড়ে দিয়েছি। দলের ব্যর্থতার যন্ত্রণা বাকিদের মতো আমার কাছেও এক। কিন্তু আমাকেই সব দায় নিতে হলো। এত অপমান সহ্য করে আর জার্মানির জার্সি আমি পরতে পারব না।’

আর সেই টুইটেই জার্মান ফুটবলের সাথে সম্পর্ক শেষ হয় ওজিলের। সম্পর্কচ্ছেদ হলেও জার্মানির জার্সি যে সব কীর্তি গড়েছেন ওজিল, তা কি মুছে দিতে পারবে ইতিহাস থেকে? ২০১৪ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন জার্মান মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা। বিশ্বকাপও এনে দিয়েছিলেন দেশকে। তাছাড়া জার্মানির পাঁচ-পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের কীর্তি আছে ওজিলের। এমনকি ২০১০ বিশ্বকাপে ম্যান অফ টুর্নামেন্টের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।

যাহোক, রাশিয়া বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে ওজিল তো অবসর নিয়েছেন, কিন্তু এবার কি হবে?

এবার কাতার বিশ্বকাপেও ব্যর্থ জার্মান। প্রথম ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে লজ্জাজনক পরাজয় হয় জার্মানির। জাপান দুটি গোল দেয়, একটা শোধ করতে পারে জার্মানিরা। পরের ম্যাচটি ছিল স্পেনের বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচে মেসুত ওজিলের ভক্তরা তার ছবি হাতে গ্যালারিতে হাজির হন। ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র হয়। আরে গ্রুপের শেষ ম্যাচে কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে কেবল ৪-২ গোলে জয় পায় জার্মানি। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয় না। আরো একবার গ্রুপ পর্ব থেকে মাথা নিচু করে বিদায় নেয় জার্মানি। তবে এবার কাকে দেখা যাবে মেসুত ওজিল চরিত্রে? গত বিশ্বকাপের দায় ওজিলের মাথায় দিলেও, এবার জার্মানি দোষ চাপাবে কার ঘারে?

মাঠ তো বটেই, মাঠের বাহিরেও ওজিল এক মহান চরিত্র। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করেন ওজিল, বিশেষ করে চিকিৎসা বঞ্চিত শিশুদের সুচিকিৎসা দেয়াই ওজিলের লক্ষ্য। প্রতি বছর কয়েক হাজার অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা করিয়ে থাকেন ওজিল। এমনকি ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ে অর্জিত সব অর্থ ব্রাজিল ও গাজার অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেন তিনি।

গত রমজান মাসে বাংলাদেশেও এসেছে তার অনুদান। রোহিঙ্গাদের জন্য বিশাক অংকের অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছিলেন তিনি। আর পুরো রমজান মাসজুড়ে সিরিয়ার ইদলিব ও সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতে এতিম শিশুদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হবে ওজিলের এই অনুদান থেকে। এছাড়া নিজের বিয়ের দিনে তুরস্ক ও সিরিয়ার ১৬টি শরণার্থী শিবিরের এক লাখ মানুষকে খাওয়ানোর দায়িত্বও নিয়েছিলেন এই ফুটবলার।

আরো হয়তো জানা-অজানা নানা খাতে ওজিল ব্যয় করে থাকেন নিজের অর্থ। হয়তো একজন ভালো মানুষ হয়ে, একজন প্রকৃত মুসলিম হয়েই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন। তবে মুসলিম হওয়ার কারণে জার্মান ফুটবল ওজিলের প্রতি বিদ্বেষ স্থাপন করে যেই কলঙ্ক রচনা করেছে, এই বিশ্বকাপে জার্মানির এমন ভরাডুবিকে অনেকে তারই ফলাফল হিসেবে দাবি করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com