সিলেটে পৃথক তিনটি আবাসিক হোটেল থেকে পাঁচ দিনে দুই ভিক্ষুক ও এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সিলেট নগরীর বন্দরবাজারের হোটেল আল ফয়েজের একটি রুম থেকে রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে নাজিম নামে এক ভিক্ষুকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ধারণা করছে, স্বাভাবিকভাবেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ভিক্ষাবৃত্তিই ছিল তার পেশা। প্রতিদিন সিলেট নগরীর আনাচে-কানাচে ভিক্ষা করেই চালাতেন জীবন সংসার।
তার পুরো নাম নাজিম উদ্দিন নাজির (৬০)। তিনি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজলার হরিনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় তিনি ভিক্ষা শেষ করে শনিবার রাতে হোটেলে ঘুমিয়ে পড়েন।
রোববার সকালে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এর দুই দিন আগে গত শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে বন্দরবাজারের লালবাজারে অবস্থিত লাভলী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে অপর ভিক্ষুক শাহেদ মোশারফের (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়।
মোশারফ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও মিয়াপাড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে।
জানা যায়, তিনি লালবাজারের লাভলী হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকে তিনি শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করায় রুমের মধ্যেই বিশ্রামে ছিলেন। পরে দুপুরের দিকে খবর পেয়ে পুলিশ হোটেলের ২৫ নম্বর কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করে।
লাশ উদ্ধারের সময় তার কাছ থেকে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন কাগজ পাওয়া যায়।
পুলিশ ধারণা করছে, তিনি যক্ষ্মা রোগী ছিলেন ও শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তারও দু’দিন আগে গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) নগরীর শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাবেক স্ত্রী নিলীমা বেগম লিলির (১৯) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে, মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে সিলেট নগরী থেকে তিনটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নগরজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আর তিনটি লাশই আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করায় আলোচনা এখন নগর পেরিয়ে জেলাজুড়ে ছড়িয়েছে।
তবে তিনটি ঘটনার মধ্যে দুটি মৃত্যুই স্বাভাবিক বলে ধরে নিচ্ছে পুলিশ।
তবে সাবেক স্বামীর হোটেল থেকে নিলীমা বেগম লিলির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য রয়েই গেছে।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তার সাবেক স্বামীকে খুঁজছে।
জানা যায়, গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বাইপাস রোডের মোমিনখলা এলাকায় শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়।
হোটেল কর্মচারীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০৫ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙে লিলি নামের ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত নিলীমা বেগম লিলি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দুলিয়ারবন্দ গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে এবং ওই আবাসিক হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাবেক স্ত্রী।
অনেকদিন আগে ছাড়াছাড়ি হলেও জহিরের সাথে লিলির নিয়মিত যোগাযোগ বা মেলামেশা ছিল।
এছাড়া লাশ উদ্ধারের সময় তার শরীরে কোনা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, এ ঘটনার পর থেকে হোটেল পরিচালক জহির পলাতক রয়েছেন। তিনি সিলেটের বাইরে অবস্থান করছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।
এদিকে, এ ঘটনায় নিলীমা বেগম লিলির বাবা দক্ষিণ সুরমা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানান ওসি কামরুল হাসান।
সূত্র : ইউএনবি