বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিরবের পরকীয়ার অভিযোগ নিয়ে সুর পাল্টালেন স্ত্রী ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হলো, জানালেন মির্জা ফখরুল ভারত থেকে চিন্ময়ের মুক্তি দাবি কিসের আলামত, প্রশ্ন রিজভীর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান

এলসি ছাড়াই হবে আমদানি-রপ্তানি

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৭৬ বার

এবার দেশের ব্যবসায়ীদের কাউন্টার ট্রেড বা প্রতিবাণিজ্য ব্যবস্থায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পাদনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় কোনো এলসি খোলার প্রয়োজন হবে না। বিদেশি মুদ্রায় একটি বিশেষ হিসাব (স্ক্রু অ্যাকাউন্ট) পরিচালনার মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম নিষ্পত্তির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এ নীতিমালার বিষয়ে মতামত চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগই এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) নির্ভর। অথচ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এলসির ব্যবহার প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। উন্নয়নশীল দেশেও এলসির ব্যবহার কমে আসছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এ পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের বৈদেশিক মুদ্রানীতিতে যথাযথ পরিবর্তন আনার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

এলসি ছাড়া আমদানি-রপ্তানির এ ধরনের কার্যক্রম পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই চালু রয়েছে। এ পদ্ধতিতে

আমদানি পণ্যের মূল্য দ্বারা রপ্তানি পণ্যের মূল্য কিংবা রপ্তানি পণ্যের মূল্য দ্বারা আমদানি পণ্যের মূল্য সমন্বয় করার সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ কোনো ব্যবসায়ীর আমদানি পেমেন্ট দেওয়া হবে তারই রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া বৈদেশিক আয় দিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুদৃঢ় নয় কিংবা ব্যাংকিং লেনদেনে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন দেশগুলোতে ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রতিবাণিজ্য ব্যবস্থায় বাণিজ্য পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দেশের স্থানীয় পক্ষ ওই দেশের সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম হতে সৃষ্ট পরিশোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে আমদানি দিয়ে প্রতিবাণিজ্য লেনদেন পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এ ধরনের বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি করা। তবে ঢালাওভাবে এ ধরনের বাণিজ্যের সুযোগ দেওয়া হবে না। বরং যেসব দেশে নরমাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই বা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পিছিয়ে রয়েছে, সেসব দেশে এ ব্যবস্থায় বাণিজ্য করার অনুমতি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে প্রতিবাণিজ্যে গেলে অন্য দেশ হয়তো ভাববে আমাদের এখন বিদেশি মুদ্রা কম আছে। তাই সে কিছু বাড়তি সুবিধা নিতে চাইতে পারে। কারণ যার দরকষাকষির শক্তি দুর্বল তার তো সুবিধা দিতেই হবে। এ ধরনের প্রতিবাণিজ্যেও অর্থপাচারসহ অন্যান্য ঝুঁকি থাকে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই অর্থপাচারের আশঙ্কা থাকে। আমদানিতে বেশি মূল্য ও রপ্তানিতে কম মূল্য দেখিয়ে অর্থপাচার করা হয়। এ ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য যথাযথভাবে যাচাই করার জন্য ব্যাংকারদেরই আসল দায়িত্বটা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এক্সপোর্ট মার্কেট দিন দিন বায়ার্স মার্কেট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বায়ার্সরা কম মূল্য দিতে এলসির পরিবর্তে চুক্তিতে আসতে আয়। কারণ এলসিতে খরচ বেশি।

অন্যদিকে আমাদের ইমপোর্ট মার্কেট দিন দিন হয়ে যাচ্ছে সেলারস মার্কেট। ফলে সেলারসের উদ্দেশ্য থাকে ফরেন গ্যারান্টি দেওয়া। আর ফরেন গ্যারান্টি নিশ্চিত হয় এলসিতেই। সে জন্য আমাদের ইমপোর্টের ক্ষেত্রে বিদেশিরা বলে এলসিতে আসতে, আবার রপ্তানির ক্ষেত্রে বলে কন্ট্রাক্টে যেতে। ফলে আমরা দুদিক থেকেই মার খাচ্ছি।

জানা গেছে, রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের বাস্তবায়ন কৌশল অংশের ২.৩.২৩নং অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে অধিকতর বাণিজ্যবান্ধব ব্যাংকিংব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং ‘মার্চেন্টিং ট্রেড’ ও ‘প্রতিবাণিজ্য’ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ঘোষণার কথা বলা আছে। এরই মধ্যে মার্চেন্টিং ট্রেড বিষয়ে নীতিমালা জারি করা হয়েছে। আর এখন চলছে প্রতিবাণিজ্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ, যার খসড়া নীতিমালা তৈরি করে এ মাসের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নীতিমালায় রপ্তানি নীতিতে প্রতিবাণিজ্যের সংজ্ঞায় উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে। মূলত রপ্তানি নীতির দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রতিবাণিজ্যের সংজ্ঞায় বলা আছে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য দ্বারা বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য কিংবা বাংলাদেশ হতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য দ্বারা বাংলাদেশে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থাকে বোঝাবে। এ ব্যবস্থায় দুটি পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পাদিত হয়ে থাকে। প্রথমত বাংলাদেশের আমদানি দিয়ে লেনদেন শুরু হতে পারে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের রপ্তানি দিয়ে লেনদেন শুরু হতে পারে।

এ বিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ধরনের পদক্ষেপকে আমরা অবশ্যই সমর্থন করি। এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য প্রমোট করার জন্য তারা যে সর্বদা সহযোগিতা করে, এটি তার একটি প্রমাণ। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ট্রেড করে প্রচুর উন্নতি করেছে। আমি মনে করি, ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সুযোগ পেলে বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আমদানি দিয়ে লেনদেন : এ ক্ষেত্রে বিদেশি ‘প্রতিসঙ্গীর’ নামে এ দেশে বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রায় একটি বিশেষ হিসাব (স্ক্রু অ্যাকাউন্ট) পরিচালনা করবে, যাতে স্থানীয় আমদানিকারক প্রচলিত আমদানি পদ্ধতি অনুসরণ করে আমদানি মূল্য বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রায় স্থানীয় ব্যাংকিং চ্যানেলে ওই হিসাবে জমা করবে। জমাকৃত অর্থের স্থিতি দ্বারা এ দেশ থেকে রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানিকারক স্থানীয় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রপ্তানি মূল্য পাবে। বিদেশি পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী কমিশন ও সেবা মাসুল স্থানীয় পক্ষের প্রাপ্য হবে, যা স্ক্রু অ্যাকাউন্ট হতে নগদায়ন করে স্থানীয় পক্ষের টাকা হিসেবে জমা হবে। স্থানীয়ভাবে পরিচালিত স্ক্রু অ্যাকাউন্টের স্থিতির ওপর সুদ প্রযোজ্য হবে না। তবে এ হিসাবের স্থিতি বাংলাদেশে পরিচালিত অন্য স্ক্রু অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা যাবে, যাতে ওই হিসাবের মাধ্যমে রপ্তানি আয় পরিশোধের ব্যবস্থা করা যায়।

রপ্তানি দিয়ে লেনদেন : এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পক্ষ বিদেশে বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রায় স্ক্রু অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবে। প্রতিবাণিজ্য পদ্ধতির আওতায় এ দেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য ওই হিসাবে জমা হবে, যা দ্বারা এ দেশের আমদানির দায়সহ প্রতিসঙ্গীর কমিশন ও সেবা মাসুল পরিশোধ হবে। তবে রপ্তানি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় পক্ষ কর্তৃক বিদেশে বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রায় স্ক্রু অ্যাকাউন্ট স্থাপনের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রাখা হবে।
কোন পদ্ধতির ঝুঁকি কম : বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে প্রথম ধাপে রপ্তানি দিয়ে লেনদেন আমদানি দিয়ে লেনদেন শুরুর চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মর্মে দেখা হয়। কেননা যথাসময়ে সমপরিমাণ আমদানির অবর্তমানে রপ্তানি মূল্য সমন্বয় করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হতে পারে। তাই খসড়া নীতিমালায় আমদানি দিয়ে লেনদেন শুরুর ব্যবস্থা রেখে পরিচালন বিধি সন্নিবেশন করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com