বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চলতি আসরের সেরা রান সংগ্রাহক, সবচেয়ে বেশি ফিফটির মালিক, সবচেয়ে বেশি চার এবং ১৪৯ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে আলোচনায় উঠে এসেছেন এক ব্যাটসম্যান। ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান এ মৌসুমে সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন, তামিম ইকবালকে ছাপিয়ে গেছেন। এত সবের পরও সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলা তৌহিদ হৃদয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে জনপ্রিয় নাম নন। যদিও জনপ্রিয়তা এখন তার কাছে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বিপিএল শুরুর পর থেকে তাসকিন আহমেদ এবং সাব্বির রহমান বাদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাতাতে সক্ষম এমন তারকা ক্রিকেটার তুলে আনতে পারেনি। কিন্তু এবার তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। তিনি এবারের বিপিএলের সেরা ক্রিকেটারদের একজন।
মাঝে ইনজুরিতে পড়ার পরেও তৌহিদ হৃদয়ের পারফরম্যান্সে তেমন প্রভাব পড়েনি। মোট ৮ ইনিংস ব্যাট করেছেন, যার মধ্যে পাঁচবার ৫০ রান পার করেছেন। তার গড় ৫৩ এবং স্ট্রাইক রেট প্রায় দেড়শো।
কেউ কেউ এরই মধ্যে তৌহিদ হৃদয়কে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে জাতীয় দলে নেয়ার আওয়াজ তুলছেন।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটিং কোচ সাবেক বাংলাদেশী ক্রিকেটার রাজিন সালেহ মনে করেন, তৌহিদ হৃদয় এখনই জাতীয় দলে খেলার জন্য প্রস্তুত।
এবারের বিপিএলে তৌহিদ হৃদয়ের দল সিলেটও চমক নিয়ে এসেছে।
ইমাদ ওয়াসিম-মোহাম্মদ আমিরের মতো পাকিস্তানি তারকারা আছেন, এরই মধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলটি ঘরোয়া ক্রিকেটের তারকাদের পারফরম্যান্সে ভর করে প্লে-অফ খেলা নিশ্চিত করেছে সবার আগে।
তৌহিদ যেমন সর্বোচ্চ রানের মালিক, মাশরাফি আছেন সেরা উইকেট শিকারীদের তালিকায়।
তৌহিদ হৃদয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের দৃশ্যপটে আসার আগেই জয় করে এসেছেন একটি বিশ্বকাপ।
তৌহিদ হৃদয়ের উত্থান
২০২০ সালের অনুর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন হৃদয়, তিনি সেই দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন।
হৃদয়কে তখন ভাবা হতো প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার।
কিন্তু ২০২১ ও ২০২২ সালে সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন হৃদয়ের ব্যাটে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গত দুই বছর যে সকল ক্রিকেটারদের ওপর আলাদাভাবে বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন ক্যাম্পে তার মধ্যে হৃদয় একজন।
২০২২ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে হৃদয় ১০ ইনিংস ব্যাট করে মাত্র ১৩৬ রান তুলেছিলেন, স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০ এর নিচে।
সেখান থেকে হৃদয়ের এবারের আসরে এমন ঘুরে দাঁড়ানোকে দুর্দান্ত এবং অবিশ্বাস্য বলছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়মিত দর্শক শেখ মিনহাজ হোসেনের মতে, ‘ছেলেটার ব্যাট সুইং, কব্জির ফ্লেক্সিবিলিটি, মাসল পাওয়ার, শট সিলেকশন, গ্যাপ ফাইন্ডিং- সবকিছুই দেখার মতো।’
অনেকেই তাকে আগামী দিনের তারকা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছিলেন তৌহিদ হৃদয়।
তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মতোই সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটার ও বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি মনে করেন, হৃদয় এই ভরসার মান রেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছেন। শট খেলার সময় তার ব্যাটের উচ্চতায় পরিবর্তন এনেছেন। ব্যাকফুটে শক্তি এনেছেন, প্রাধান্য দিয়েছেন।’
সামির মতে, তৌহিদ হৃদয় সামনের পা সরিয়ে এনে বাড়তি জায়গা পান বল মারার জন্য।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের টপ অর্ডার নিয়ে সবসময়ই একটা দ্বিধা দেখা যায়।
তৌহিদ হৃদয়কে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডাক পাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বলেই মনে করেন এই বিশ্লেষক।
তৌহিদ হৃদয়ের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই লেভেলের ক্রিকেটারদের মেলে ধরার সময়ে বড় উপাদান হচ্ছে স্বাধীনতা।
মাশরাফি বলেন, উইকেট বুঝে টি-টোয়েন্টি যেভাবে খেলে সেভাবেই খেলার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে তরুণ ক্রিকেটারদের।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক বলেন, ‘হৃদয়কে ওর মতোই ছেড়ে দিয়েছি। এই যেমন একটি ম্যাচে উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছে। ওই শটে আউট হলেও কিছু বলতাম না আমরা।’
মাশরাফির মতে একজন ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সে যে নিজে গুরুত্বপূর্ণ এটা নিজে অনুধাবন করা।
সূত্র : বিবিসি