শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন

সরকারি প্রকল্পে লিয়েনে ৫ গুণ বেতন জনগণের অর্থের অপচয় নয়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ৩৬৭ বার

দেশের শিক্ষা খাতের বিভিন্ন প্রকল্পের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ‘মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ গ্রহণ করেছে। এতে সুযোগ রাখা হয়েছে ত্রিশজন সরকারি কর্মকর্তার লিয়েনে কাজ করার জন্য। ‘লিয়েন’ মানে, অন্য কোনো চাকরির জন্য সরকারি চাকরি থেকে বিনাবেতনে ছুটি। আলোচ্য প্রকল্পে যারা চাকরি করবেন, তাদের বেতন আড়াই লাখ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। তদুপরি তাদের দেয়া হবে গাড়ি। একই কর্মসূচির জন্য থাকবেন ৫০ জন পরামর্শকও। অপর দিকে, ডেপুটেশনে এসে এই কর্মসূচির দায়িত্ব পালন করবেন মাত্র দু’জন। লোকজনের বিরাট বহর আর মোটা অঙ্কের বেতন মিলিয়ে এ ব্যবস্থায় প্রচুর অপব্যয়ের পথ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আলোচ্য কর্মসূচির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি থেকে জানা গেছে, এর প্রধানের পদবি হবে ‘জাতীয় কর্মসূচির সমন্বয়কারী।’ তিনি গ্রেড-২ মর্যাদার কর্মকর্তা। পদাধিকার বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা ও উন্নয়নসংক্রান্ত অতিরিক্ত সচিব এ পদে থাকবেন। এ জন্য তাকে অতিরিক্ত বেতন দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, সরকারের অতিরিক্ত সচিবরা ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা করে বেতন পাচ্ছেন। ডিপিপি মোতাবেক, এই প্রকল্পের পরবর্তী কর্মকর্তারা লিয়েন নিয়ে কাজ করবেন। দ্বিতীয় প্রধান পদ ‘কর্মসূচি সমন্বয়কারী’ও অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার। তার বেতন হবে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। অর্থাৎ সর্বোচ্চ পদে যিনি থাকবেন, তার চেয়ে সাড়ে ৫ গুণ বেতন পাবেন তিনি। প্রকল্পটিতে চারজন ‘অতিরিক্ত কর্মসূচি সমন্বয়কারী’ থাকবেন যুগ্ম সচিব মর্যাদার। তাদের বেতন হবে সাড়ে চার লাখ টাকা করে। এরপর থাকবেন আটজন ‘উপ-কর্মসূচি সমন্বয়কারী’। তাদের বেতন সাড়ে তিন লাখ টাকা করে। পরবর্তী ধাপে ১৬ জন ‘সহকারী কর্মসূচি সমন্বয়কারী’র বেতন হবে আড়াই লাখ টাকা করে। তদুপরি যে অর্ধশত ব্যক্তি থাকবেন ‘পরামর্শক’রূপে, তাদের বেতন ধরা হয়েছে এক থেকে দু’লাখ টাকা পর্যন্ত।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ পদে আসার সুযোগ আছে। লিয়েন নিয়ে শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই এ প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং বেসরকারি কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তার লিয়েনে আসার সুযোগ নেই বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষরা চতুর্থ গ্রেডের ওপরে উঠতে পারেন না। ইন্টারমিডিয়েট কলেজের অধ্যক্ষরা যেতে পারেন পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত। তদুপরি সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া, বেসরকারি কলেজের কেউ আলোচ্য প্রকল্পে কাজ করতে চাইলেও একটানা পাঁচ বছরের ছুটি তিনি পাবেন না।
ওয়াকিবহাল মহল জানায়, যেসব প্রকল্প দেখভাল করার জন্য কর্মসূচিটি নেয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রকল্প পরিচালক ও পরামর্শকসমেত পূর্ণ জনবল রয়েছে। তার পরও লিয়েনে সরকারের কর্মকর্তাদের নিয়ে, তাদের পেছনে এত ব্যয় করা বিপুল অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। এ ছাড়া, এই কর্মসূচি চালু হলে অন্য প্রকল্পের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে ক্ষমতা ও আর্থিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে। এতে প্রকল্পগুলো হবে ক্ষতিগ্রস্ত। একজন প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত লিয়েনে বিদেশী সংস্থা কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন। কিন্তু আলোচ্য প্রকল্পটি সরকারের। সেখানে লিয়েনে যাওয়ার সুযোগ রাখা অযৌক্তিক। অন্যান্য প্রকল্পের মতো এ ক্ষেত্রেও ডেপুটেশনে কাজ করতে পারেন, বিশেষত বিভিন্ন দফতরের অতিরিক্ত কর্মকর্তারা। তা হলে সরকারের বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয় না। সর্বোপরি, এমন কোনো কর্মসূচি আদৌ প্রয়োজনীয় কি না, দেখা দরকার। সরকারের একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবের মতে, লিয়েনে কেবল সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের সুযোগ দেয়া আসলে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’। টিআইবির অভিমত, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের গুণগত মান বাড়েনি। আর জনবল নিয়োগ করা উচিত লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে।’
আমরা মনে করি, শিক্ষাসহ কোনো খাতেই অপচয়, অনিয়ম, দুর্নীতি, দলীয়করণ ইত্যাদি চলতে দেয়া যায় না। কোনো কৌশলে বা অজুহাতে যেন জনগণের অর্থের অপব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com